নতুন বছরের শুরুতে মামলার জট খুলতে কার্যকরী উদ্যোগ হাতে নিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। প্রধান বিচারপতির পরামর্শে বিগত বছরের মামলার আধিক্য কমাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সফলতা পাওয়া যাবে বলে মনে করে কোর্ট প্রশাসন।
সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে মোট মামলার সংখ্যা ছিল ৩৩ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০টি। ২০১৮ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে নিষ্পত্তির অপেক্ষায় থাকা মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৫ লাখ ৭ হাজার ৮৯৮টি। এর মধ্যে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ১৯ হাজার ৬০০ মামলা শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। এছাড়া, হাইকোর্টে প্রায় ৫ লাখ ৭ হাজারের মতো মামলা নিষ্পত্তির জন্য রয়েছে।
তাই নতুন বছরের শুরুতেই মামলার আধিক্য কমানোর জন্য বিচারাধীন মামলাগুলো নিষ্পত্তিতে জোর দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ব্যারিস্টার মো. সাইফুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নতুন বছরের শুরুতেই প্রধান বিচারপতি হাইকোর্টের ১৪টি বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেন একেবারে পুরনো ফৌজদারি (বিবিধ) মামলাগুলোর শুনানির জন্য। তার সিদ্ধান্ত অনুসারে সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার পুরনো মামলাগুলো হাইকোর্টের ১৪টি বেঞ্চের কার্যতালিকায় (কজ লিস্ট) শুনানির জন্য রাখা হয়।’
প্রধান বিচারপতির এই উদ্যোগের আওতায় হাইকোর্টের ওই ১৪টি বেঞ্চকে প্রাথমিকভাবে ৫ হাজার ১২২টি মামলা নিষ্পত্তি করতে দেওয়া হয়। এর মধ্যে গত ২ জানুয়ারি থেকে ৯ দিনে হাইকোর্ট প্রায় ২ হাজার ৬৮টি পুরনো মামলা নিষ্পত্তি করেছে বলেও জানান ব্যারিস্টার মো. সাইফুর রহমান।
এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের মামলা নিষ্পত্তি করতে গত ৩ জানুয়ারি দুটি পৃথক আপিল বেঞ্চ গঠন করেন প্রধান বিচারপতি। আপিল বিভাগের এক নম্বর বেঞ্চে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান মামলার শুনানি করবেন। পাশাপাশি আপিল বিভাগের ২ নম্বর বেঞ্চ বসবে বিচারপতি ইমান আলীর নেতৃত্বে। এই বেঞ্চে আরও থাকবেন বিচারপতি মির্জা হোসেন হায়দার ও বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী।
এছাড়া, নিম্ন আদালতের মামলাগুলো নিষ্পত্তি করতে বিচারকদের কর্মঘণ্টা পুরোপুরি ব্যবহারের বিষয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণে রেখেছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। সাইফুর রহমান বলেন, ‘মামলা নিষ্পত্তির হার বাড়াতে নিম্ন আদালতের বিচারকদের কর্মঘণ্টা পূর্ণভাবে ব্যবহারের বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। আগে নিম্ন আদালতের অনেক বিচারকই বিকাল বেলা কোর্টে বসতেন না। কিন্তু এখন তারা বিকালেও আদালতে বসছেন এবং বিচার পরিচালনা করছেন। এর ফলে নিম্ন আদালতের পুরনো মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হচ্ছে।’
মামলা নিষ্পত্তির আরও কিছু উদ্যোগের মধ্যে নতুন বছরের শুরুতেই প্রধান বিচারপতির নির্দেশে কোর্টের নিজস্ব তহবিলে দেশের কয়েকটি নিম্ন আদালতে কম্পিউটার সরবরাহ করেছে প্রশাসন। কম্পিউটারের কারণে নিম্ন আদালতের বিচারকরা দ্রুত মামলার রায় লেখাসহ বিভিন্ন কাজ দ্রুত করতে পারবেন বলে মনে করে কোর্ট প্রশাসন।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার সাইফুর রহমান বলেন, ‘রায় লেখাসহ বিচারিক কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে আমরা কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে চৌকি আদালতেও কম্পিউটার সরবরাহ করেছি। নিম্ন আদালতের জন্য আমাদের তহবিল থেকে আরও কম্পিউটার কিনবো। পর্যায়ক্রমে এসব কম্পিউটার সব আদালতে পৌঁছে যাবে।’
তবে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে নতুন করে বিচারক নিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’ বাংলা ট্রিবিউন