প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে আসন্ন মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষা থেকে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল কাগজে বাঁধিয়ে প্রশ্নপত্র পাঠানো, উপকেন্দ্র (ভেন্যু কেন্দ্র) একেবারে কমিয়ে দেওয়া, পরীক্ষার কেন্দ্র পরিবর্তন করাসহ একগুচ্ছ নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
একইসঙ্গে পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে কোন সেট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে, তা লটারি করে ঠিক করাসহ পুরোনো সিদ্ধান্তগুলোও কঠোরভাবে মানা হবে।
আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। এই পরীক্ষা সামনে রেখেই নতুন কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা–সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা। তাঁরা জানান, এসএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে আজ সোমবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেও আরও কিছু সিদ্ধান্ত হতে পারে।
আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় উপকমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মু. জিয়াউল হক গণমাধ্যমকে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে পুরোনো সিদ্ধান্তগুলোর পাশাপাশি এবার অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল কাগজে বাঁধিয়ে প্রশ্নপত্র পাঠানো ও নিরাপত্তা স্টিকারযুক্ত খাম ব্যবহার করা হবে। ট্রেজারির বাইরে কোথাও প্রশ্নপত্র না রাখার (আগে ভোল্টেও রাখা হতো) সিদ্ধান্ত হয়েছে।
আগে দেখা যেতে কোনো কোনো কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা শুরুর কিছু আগেই প্রশ্নপত্র মুঠোফোনে ছবি তুলে বাইরে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। এ ছাড়া সমঝোতার ভিত্তিতে বিভিন্ন কেন্দ্রের শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্র সমাধান করে দেওয়ার মতোও ঘটনা ঘটত।
এসব কারণে এবার অধিকাংশ কেন্দ্র পরিবর্তন করা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষার কাজে যুক্ত একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তিনি বলেন, এত দিন সারা দেশেই অসংখ্য উপকেন্দ্র বা ভেন্যু সেন্টার ছিল। অর্থাৎ একটি মূল কেন্দ্রের অধীনে আরও একাধিক স্থানে পরীক্ষা নেওয়া হতো। এবার সেটা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ঢাকা শহরের বেশির ভাগ কেন্দ্র পরিবর্তন করা হয়েছে। এবার ভাড়াবাড়িতে পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেন্দ্র রাখা হচ্ছে না।
আগে কোন সেট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে, তা সকালে জানানো হতো এবং অনেক জায়গায় আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যেত। গত এসএসসি পরীক্ষার একেবারে শেষের দু-একটি বিষয়ে পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে কোন সেট প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হবে, তা লটারি করে ঠিক করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় নিরাপত্তা সহকারে ছাপানো দুই সেট প্রশ্নপত্রই কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে প্রবেশ করানো হয়, আর ২৫ মিনিট আগে কেন্দ্রসচিবকে খুদে বার্তায় বা ফোনে জানানো হয় কোন সেটে পরীক্ষা হবে। নতুন এই অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে গত এইচএসসি পরীক্ষায় একই পদ্ধতি বাস্তবায়ন করা হয় এবং এই পরীক্ষাতেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠেনি।
এসবের পাশাপাশি এবার বিজি প্রেস থেকে ছাপানো প্রশ্নপত্র পাঠানোর সময় বাদামি রঙের প্যাকেটের বদলে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপারে বাঁধিয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, এবার নিরাপত্তা খামের পাশাপাশি নতুন ওই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর একাধিক কর্মকর্তা বলেন, আগে বিজি প্রেস থেকে সিলগালা করে ট্রেজারিতে পাঠানো বাদামি রঙের প্যাকেটটি পরীক্ষার কেন্দ্রে পাঠানোর সময় সংশ্লিষ্ট অসাধু চক্র ব্লেড দিয়ে কেটে প্রশ্নপত্র বের করে ছবি তুলে নিত। এরপর পুনরায় সেটি সিলগালা করে দিত। কিন্তু অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার একবার কেটে ফেললে পুনরায় জোড়া লাগানো যাবে না। ইতিমধ্যে অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপারও কেনা হয়েছে।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোহরাব হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধ এবং পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে নেওয়ার জন্য শিক্ষা বোর্ডগুলো যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও কোনো সমন্বয় বা সহযোগিতা প্রয়োজন হলে, তা করা হবে। প্রথম আলো