দীর্ঘ নয় বছরেও কর্ম ও শিক্ষাক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যকর কোনও ব্যবস্থা বা কৌশল হাতে নিতে দেখা যায়নি। বেসরকারি দাতা সংস্থা অ্যাকশন এইডের একটি গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের হল রুমে এই গবেষণা প্রবন্ধ উন্মোচন করা হয়। অনুষ্ঠানে ‘কর্ম এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা ২০০৯ বাস্তবায়ন’ বিষয়ক একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, কর্ম এবং শিক্ষাক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে ২০০৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ডিভিশন একটি তাৎপর্যপূর্ণ রায় বা নির্দেশনা ঘোষণা করে। তবে এ নির্দেশনা প্রণয়নের দীর্ঘ নয় বছর পরেও কর্ম এবং শিক্ষাক্ষেত্রে কার্যকর কোনও ব্যবস্থা বা কৌশল হাতে নিতে দেখা যায়নি।
এর পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের গবেষণায় দেখানো হয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী যৌন হয়রানি প্রতিরোধসংক্রান্ত কমিটির কথা জানেন না। ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থী সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা সম্পর্কে জানেন না।
কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের নির্দেশনা বাস্তবায়ন না হওয়ার ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের অসচেতনতার উল্লেখযোগ্য অভাবের কথা ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৪ জন উত্তরদাতার মধ্যে ৬৪ দশমিক ৫ শতাংশ সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। অন্যদিকে ১৪ শতাংশ উত্তরদাতা নির্দেশনা সম্পর্কে জানলেও এ বিষয়ে কোনও পরিষ্কার ধারণা তাদের নেই।
এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরা হয়েছে গবেষণা প্রতিবেদনে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং নিজ ঘরে এর ব্যাপকতা নির্মূল করার জন্য একটি আইন করা এবং তার বাস্তবায়ন করা, নারীরা যেন ঘরে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনাগুলো চিহ্নিত করতে পারে সেজন্য তাদের সচেতন করতে হবে ও ক্ষমতা বাড়াতে হবে, নারীরা যাতে সহিংসতার ঘটনার প্রতিবাদ, প্রতিরোধ কিংবা অভিযোগ করতে পারেন সেজন্য সব তথ্য দেবেন এবং সহযোগিতা নিশ্চিত করবে সরকার। সুপারিশে গণমাধ্যমকে পারিবারিক সহিংসতা বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ ও প্রচারে নজর দেওয়ার জন্য এবং সরকারকে দেশের আইনে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ এর ডেপুটি ডিরেক্টর ফারিয়া চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল করিম, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপ-কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর সামিয়া হক, বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ হারুন উর রশীদ, দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন প্রমুখ।