পারিবারিক সহিংসতা (ছবি- প্রতীকী)

দেশের ৬৬ ভাগ নারী ঘরেই সহিংসতার শিকার : গবেষণা

দেশের ৬৬ ভাগ নারী ঘরেই সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। গণমাধ্যমে বাড়ির বাইরের সহিংসতা এবং যৌন সহিংসতাকে বেশি তুলে ধরা হলেও প্রকৃতপক্ষে নারীরা ঘরেই বেশি অনিরাপদ। বেসরকারি দাতা সংস্থা অ্যাকশন এইডের একটি গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।

আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জানুয়ারি) দুপুরে রাজধানীর বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের হল রুমে এই গবেষণা প্রবন্ধ উন্মোচন করা হয়।

গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা হয়, প্রচলিত ধারণা এবং পিতৃতান্ত্রিক এবং সাংস্কৃতিকভাবে গ্রহণযোগ্য বিশ্বাস হচ্ছে ‘নারীরা ঘরেই বেশি নিরাপদ’। কিন্তু, প্রকৃত সত্য হচ্ছে নারীদের প্রতি বেশিরভাগ সহিংসতা বাড়িতে সংগঠিত হয়। ঘরের প্রতি তিন জনের মধ্যে দুই জন নারীই নানাভাবে পরিবারের লোকজনের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন।

বাংলাদেশের ২০টি জেলায় সংঘটিত সহিংসতার তথ্য, পুলিশের কাছে রিপোর্ট হওয়া অভিযোগ, বিচার বিভাগীয় কার্যক্রম, জে এন এন পি এফ এর নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বিরোধী সরকারি সংস্থা এবং নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা মিডিয়া প্রতিবেদন থেকে নেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে এ গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমিন।

এ গবেষণায় বলা হয়েছে, নারীরা ঘরেই বেশি নিরাপদ এই প্রচলিত বিশ্বাস এমন একটি অনুমানের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে যে, জনপরিসরে নারী নিরাপত্তাকে তা আরও বেশি ঝুঁকির মধ্যে ফেলে। এখন পর্যন্ত কোনও আইনই এটা মানতে রাজি নয় যে, বিয়ের পর নারীরা ধর্ষণের শিকার হতে পারে।

গবেষণায় আরও বলা হয়েছে , নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা সম্পর্কিত মামলাগুলোর প্রতি পাঁচটির মধ্যে চারটি মামলাই আদালতে উত্থাপিত হতে দুই বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। তারপর বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। সহিংসতায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ নিজেদের পক্ষে বিচার পায়, ৯৬ দশমিক ৯ শতাংশ ভুক্তভোগীর অভিযোগ আদালতে শুনানির শুনানির পর্যায়ে যায় না বা গেলেও বাতিল হয়ে যায়। আদালত মামলা খারিজ করে দেওয়ার বা আসামিকে খালাস দেওয়ার সম্ভাবনা ৩২ শতাংশ। শুধু মাত্র ১০ দশমিক ৭ শতাংশ মামলা থাকে পারিবারিক বিরোধ সংক্রান্ত। যদিও বেশির ভাগ অভিযোগ পারিবারিক সহিংসতা অভিযোগ পারিবারিক সহিংসতা সম্পর্কিত। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ৭৫ শতাংশ প্রতিবেদনে ধর্ষণ বা সংঘবদ্ধ ধর্ষণ সম্পর্কিত।

গবেষণায় পাওয়া তথ্য মতে, সহিংসতা প্রতিবেদন কম হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- অভিযোগ দাখিল সংক্রান্ত কোন তথ্য থাকে না, এলাকার ক্ষমতাসীনদের বাধা এবং হস্তক্ষেপ, সুশাসনের অভাব, ঘরে নারী নিরাপত্তা নিশ্চিতে কোন সচেতনতামূলক কার্যক্রম না থাকা, মামলার ধীর গতির কারণে ভুক্তভোগীরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অভিযোগ নিয়ে যেতে চায় না, বেশিরভাগ সময়ই ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে রায় যায়, যা তাদের আরও সমস্যায় সমস্যায় ফেলে দেয়।

অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ এর ডেপুটি ডিরেক্টর ফারিয়া চৌধুরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল করিম, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপ-কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ডক্টর সামিয়া হক, বাংলা ট্রিবিউনের হেড অব নিউজ হারুন উর রশীদ, দৈনিক ইত্তেফাকের সম্পাদক তাসমিমা হোসেন প্রমুখ।