স্ত্রীর নামে রাজউকের প্লট বরাদ্দ থাকার পরও মিথ্যা হলফনামা দাখিল করে নিজ নামে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী মো. আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা বাতিলের রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে বিচারিক আদালতে থাকা দুদকের এ মামলাটির ওপর থেকে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করেছেন আদালত। এর ফলে তার বিরুদ্ধে মামলা চলতে আর কোনও বাধা থাকলো না বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
আজ রোববার (২০ জানুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল খারিজ করে এই রায় দেন।
আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না। অন্যদিকে আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার মো. খুরশিদ আলম।
ঘটনার বিবরণী থেকে জানা যায়, সাবেক মন্ত্রী এবং মুন্সীগঞ্জ-৪ আসনের বিএনপির সাবেক সংসদ মো. আবদুল হাই ২০০৪ সালের ২৯ জানুয়ারি রাজউকের চেয়ারম্যান বরাবরে গুলশান ও বনানী আবাসিক এলাকায় তার নামে একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়ার আবেদন করেন। এ আবেদনের সঙ্গে (রাজউকের নিয়ম অনুযায়ী) একটি হলফনামা দাখিল করেন তিনি। এতে আবদুল হাই অঙ্গীকার করেন, ‘বৃহত্তর ঢাকা মহানগরীর রাজউকের আওতাধীন এলাকায় কোথাও তার নিজের নামে, স্ত্রী, নির্ভরশীল ছেলেমেয়ে অথবা পোষ্যের নামে কোনও আবাসিক জমি বা বাড়ি, ফ্ল্যাট খরিদ কিংবা উত্তরাধিকার সূত্রে নেই। অথবা ডিআইটি (বর্তমানে রাজউক) অথবা কোনও সরকারি সংস্থার মাধ্যমে কোনও আবাসিক জমি বা বাড়ি বরাদ্দ অথবা লিজ দেওয়া হয়নি। এই ঘোষণা সম্পূর্ণ সত্য ও নির্ভুল।’
এরপর ২০০৫ সালের ৭ জুন মো. আবদুল হক সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে তার নামে গুলশান ও বনানী আবাসিক এলাকায় সাময়িকভাবে বরাদ্দকৃত প্লটের বরাদ্দপত্র জারির জন্য রাজউকের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করেন। ওই আবেদনের পর আবদুল হাইয়ের নামে বনানীতে একটি প্লট শর্ত সাপেক্ষে সাময়িকভাবে বরাদ্দ দেয় রাজউক। এরপর ২০০৫ সালের ২০ জুন বনানীর ৩ নং রাস্তার ৫ কাঠা আয়তনের ৯ নং প্লটটি আবদুল হাইয়ের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।
পরে অনুসন্ধানে রাজউক থেকে ৯ জন প্লটগ্রহীতার বিষয়ে রাজউকের সংশ্লিষ্ট থানা থেকে তথ্য পাওয়া যায় এবং ওই ৯ জনের নাম আইডি নং ও প্লটের নাম এবং তাদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যাদের নাম ও আইডি নং সংগৃহীত হয়। রাজউকের ওই তথ্যপত্রে উল্লেখ করা হয়, বর্ণিত ৯ জনের মধ্যে (১) জামিলা খাতুন, জনাব মো. আবদুল হাইয়ের স্ত্রীয়ের বারিধারা K-13-33) (২), জিয়াউল মুজিবের (মিসেস সেলিমা রহমানের ছেলে) প্লট নং নিকুঞ্জ-১ (Niki-103-2)— এই দুটি বরাদ্দের তথ্য পাওয়া গেছে।’
মো. আবদুল হাইয়ের স্ত্রী মিসেস জামিলা খাতুন ১৯৮৭ সালের ১২ এপ্রিল তার নামে বরাদ্দ করা প্লটটি মনোয়ার হোসেনের কাছে বিক্রি করেন।ফলে আবদুল হাই তথ্য গোপন করে হলফনামা দিয়ে অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ করে সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ করেছেন বলে প্রমাণিত হওয়ায় তার বিরুদ্ধে দুদকের উপ- পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন ২০১৬ সালের ৯ নভেম্বর মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে একই উপ- পরিচালক তদন্ত করে ২০১৭ সালের ২৮ নভেম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলাটিতে আবদুল হাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৮। এরপর বিচারিক আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করা হলে ২০১৮ সালের ১০ মে হাইকোর্ট এই বিষয়ে রুল জারি করেন এবং মামলাটির কার্যক্রমের ওপর স্থগিতাদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, আবদুল হাই ২০১৭ সালের ৯ নভেম্বর এ মামলায় হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পান।