রাজধানীসহ দেশের আটটি জেলার ১১টি সরকারি হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ সময় হাসপাতালগুলোতে ৪০ শতাংশ চিকিৎসকই কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। উপজেলা পর্যায়ে অনুপস্থিতির হার আরও বেশি, প্রায় ৬২ শতাংশ।
সোমবার (২১ জানুয়ারি) সকাল থেকে সংস্থাটি একযোগে অভিযান চালায়। বেলা দুইটা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন দুদকের এনফোর্সমেন্ট দলের সমন্বয়ক ও প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী।
মুনীর চৌধুরী বলেন, ঢাকাসহ ৮ জেলার ১১টি সরকারি হাসপাতালে অভিযান পরিচালনার সময় চিকিৎসকদের কাজের সময়ের রোস্টার পর্যালোচনা করে দেখা হয়। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২৩০ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৯২ জনই অনুপস্থিত, যা মোট চিকিৎসকের ৪০ শতাংশ। ঢাকার বাইরের সাত জেলার যে হাসপাতালগুলোতে অভিযান চালানো হয়, সেখানকার অবস্থা আরও খারাপ। দেখা গেছে, ১৩১ জন চিকিৎসকের মধ্যে ৮১ জনই অনুপস্থিত ছিলেন, যা মোট চিকিৎসকের প্রায় ৬২ শতাংশ।
দুদক জানিয়েছে, যেসব হাসপাতালে অভিযান চালানো হয়েছে সেগুলো হলো ঢাকার ফুলবাড়িয়ার কর্মচারী কল্যাণ হাসপাতাল, নাজিরা বাজারের মা ও শিশু সদন, রংপুরের পীরগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, দিনাজপুর সদর হাসপাতাল, টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাবনা সদর হাসপাতাল ও আটঘরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এ ছাড়া ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালে জরুরি বিভাগেও অভিযান পরিচালনা করা হয়।
দুদক সূত্র জানায়, সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসকের অনুপস্থিতির কারণে চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগীরা হয়রানির শিকার ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, দুদকের অভিযোগ কেন্দ্রে (১০৬) আসা এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
অভিযান পরিচালনার সময় সংশ্লিষ্ট লোকজনের সঙ্গে কথা বলা ছাড়াও দুদকের কর্মকর্তারা রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হলেও তাঁরা অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা না দিয়ে বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিসে সময় দিচ্ছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে শীর্ষ কর্মকর্তারা মাসের বেশির ভাগ সময়ই অনুপস্থিত থাকেন। এ সুযোগে কনসালটেন্ট ও মেডিকেল অফিসাররাও কর্মস্থলে ঠিকমতো হাজির থাকেন না। অনেকে সপ্তাহে দুই-এক দিন এসে হাজিরা খাতায় সই করে পুরো মাস অনুপস্থিত থাকেন এবং পুরো মাসের বেতন তোলেন।
এসব অভিযোগের পাশাপাশি স্বাস্থ্য খাতে সব অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়ে দুদকের মহাপরিচালক বলেন, সোমবারের অভিযানে যাঁদের হাসপাতালে পাওয়া যায়নি, তাঁদের চিঠি দেবে দুদক। আপাতত কাউকে গ্রেপ্তার করা না হলেও পরে একই অবস্থা পাওয়া গেলে গ্রেপ্তার করা হবে। এ ক্ষেত্রে চাকরিও চলে যেতে পারে। দুদক বলছে, স্বাস্থ্য খাত তাদের নজরদারিতে থাকবে। দায়িত্বে অবহেলায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন এ কে এম আবদুর রব দুদকের অভিযানের বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বেশির ভাগ চিকিৎসকই দায়িত্ব পালনে সচেতন। কিন্তু দুই-একজনের জন্য পুরো চিকিৎসক সমাজের ওপর অভিযোগ চলে আসে। যেসব চিকিৎসক অনুপস্থিত ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাবনার দুটি হাসপাতালে অভিযান প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পাবনার সিভিল সার্জন মো. তাহাজ্জেল হোসেন বলেন, তিনি বিষয়টি জানেন না। তবে দুদক যদি কোনো সুপারিশ করে, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুদক জানিয়েছে, রাজধানীর মুগদা জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চলাকালে জরুরি বিভাগের এক কর্মচারী (স্ট্রেচার বিয়ারার) দায়িত্বরত অবস্থায় রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার সময় হাতেনাতে ধরা পড়েন। দুদকের সুপারিশক্রমে তাঁকে তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করা হয়। মুগদা ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক আমিন আহমেদ খানের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, ঘুষ নেওয়ার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারী শৃঙ্খলা আপিল বিধি ২০১৮ মোতাবেক তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।