‘সকল প্রতিবন্ধী মানুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা’ আইনের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সরকারের আইন কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সমঅধিকারের দাবি জানিয়েছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আইনজীবীরা।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আইনজীবীদের সংগঠন ‘ব্লাইন্ড ল গ্রাজুয়েটস অ্যান্ড অ্যাডভোকেটস সোসাইটি, বাংলাদেশ (ব্লাসবিডি)’র দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার (২৬ জানুয়ারি) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে তারা এ দাবি জানান।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল ওয়াদুদ, সেন্টার ফর ডিজ্যাবিলিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের নির্বাহী পরিচালক এ এইচ এম নোমান খান, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফোরামের সভাপতি সাইদুল হক।
ব্লাসবিডির সভাপতি মোশাররফ হোসেন মজুমদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্লাসবিডির নির্বাহী সদস্য মো. আল আমিন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্লাসবিডির সাধারণ সম্পাদক এ এম মোসলেহ উদ্দিন উদ্দিন আহমেদ।
অ্যাডভোকেট আল আমিন প্রচলিত আইন ও প্রশাসনিক কার্যপ্রণালী প্রতিবন্ধীবান্ধব করে তোলার দাবি জানিয়ে বলেন, “শিক্ষা ও কর্মসংস্থান প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের চাকরির জন্য সংরক্ষিত কোটা বাস্তবায়ন সুনিশ্চিৎ করতে হবে। সরকারের আইন কর্মকর্তা নিয়োগ প্রদান ও বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে তা কার্যকর করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “সরকার কদিন পর পাবলিক প্রসিকিউটর, অ্যাসিস্টেন্ট অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ করবেন। সেখানে অন্তত ১ শতাংশ হলেও আমাদের যেন প্রতিনিধি থাকে।”
তাদের দাবি বিবেচনার নিজে উদ্যোগী হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাহবুবে আলম বলেন, “ব্যাপারটি প্রধানমন্ত্রীর গোচরে আনব।”
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আইনজীবীদের জন্য মাসিক ভাতা প্রদান, চিকিৎসা প্রদানের জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাবেন বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
পাশাপাশি আদালতের বিভিন্ন ধারা যেন ব্রেইল পদ্ধতিতে প্রকাশ করা যায়, সেজন্য ইউএনডিপি কর্মকর্তাদের অনুরোধ করবেন বলেও জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
পরে আল আমিন বলেন, “সকল প্রতিবন্ধী মানুষের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠা’ আইনের ৩৬-৪০ ধারায় প্রতিবন্ধী মানুষের প্রতি বৈষম্য প্রদর্শনের দায়ে ক্ষতিপূরণ ও দণ্ডের বিধান থাকলেও তা কার্যকর করা হচ্ছে না। এই আইন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় যতটুকু ঘাটতি ও দুর্বলতা প্রকাশ পায়, তা আইন সংশোধনের মাধ্যমে ও বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে নিরসন করতে হবে।”
আইনজীবীদের পাশাপাশি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন-২০১৩ কোর্স পাঠ্যসূচিভুক্ত করা ‘বিশেষ প্রয়োজন’ বলেও মনে করে ব্লাসবিডি।
আল আমিন বলেন, “এই আইনটি বাস্তবায়ন করতে হলে সংশ্লিষ্টদেরকে বিশেষভাবে সচেতন ও দক্ষ করে তুলতে হবে। চর্চায় আ্নতে হবে এই আইনটির। সমাজেও ব্যাপক প্রচারণা করতে হবে।”
২০১৩ সালে প্রণীত আইনের ৩১-৩৬ ধারা মোতাবেক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র প্রদান, গণপরিবহনে তাদের জন্য ৫ শতাংশ আসন সংরক্ষণের বিষয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি শিশুদের ভর্তির ক্ষেত্রে বৈসম্য দূরূীকরণ, চাকরিতে বৈষম্য দূর করাসহ নানা দাবি উঠে আসে ব্লাসবিডির এই আলোচনা সভা থেকে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, “সমঅধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও প্রশাসনিক নির্দেশনা প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি। উক্ত নির্দেশনা পালনের বিষয়ে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মনিটরিং করা, অগ্রগতি বিষয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন সংগ্রহ করা একান্ত বাঞ্ছনীয়।”
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় গঠন করা জাতীয় নির্বাহী কমিটি প্রতি বছর সরকারের কাছে বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিল করবে বলেও আশা করবেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী আইনজীবীদের এই সংগঠনের সদস্যরা।
সমাজে সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র প্রতিবন্ধী নাগরিকদের আইনি সহায়তা দিয়ে প্রতিষ্ঠা করা হয় ব্লাইন্ড ল গ্রাজুয়েটস অ্যান্ড অ্যাডভোকেটস সোসাইটি বাংলাদেশ (ব্লাসবিডি)। ৪০ জন আইনজীবী সদস্য হয়েছেন।