আইনের দেশ বলে কথা! অপরাধ যত ছোটই হোক এমপি হলেও রক্ষা নেই। নির্ধারিত গতির চাইতে বেশি জোরে গাড়ি চালিয়ে জরিমানার টিকিট পেয়েছিলেন যুক্তরাজ্যের এমপি ফিওনা ওনাসানিয়া। সেই সামান্য জরিমানা থেকে বাঁচতে তিনি মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন। ফলে এখন তাঁকে জেলে যেতে হচ্ছে।
লন্ডনের ওল্ড বেইলি আদালত গত মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) তাঁকে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় ওনাসানিয়াকে উদ্দেশ করে বিচারক স্টুয়ার্ড স্মিথ বলেন, ‘আপনি কেবল নিজেকে খাটো করেননি, যারা আপনাকে অনুপ্রেরণাদায়ী ব্যক্তিত্ব হিসেবে মনে করত তাদেরও হতাশ করেছেন। আপনি আপনার দল, আপনার পেশা এবং সংসদকেও ছোট করেছেন।’
ফিওনা ওনাসানিয়া ছিলেন বিরোধী দল লেবার পার্টির এমপি। কিন্তু মিথ্যাচারের দায়ে পুলিশ তাঁকে অভিযুক্ত করার পরপরই দল তাঁকে বহিষ্কার করে। তবুও স্বতন্ত্র এমপি হিসেবে বহাল আছেন তিনি।
ঘটনাটি ২০১৭ সালের জুলাই মাসের। পিটারবারা আসনের এমপি ওনাসানিয়ার গাড়িটি ৩০ মাইলের গতিসীমার রাস্তায় ৪১ মাইল বেগে চলছিল। রাস্তায় লাগানো গতি পর্যবেক্ষক ক্যামেরায় বিষয়টি ধরা পড়ে। স্বাভাবিক নিয়মেই গতিসীমা ভাঙার দায়ে তাঁর বাসায় জরিমানার টিকিট পাঠানো হয়। কিন্তু ওনাসানিয়া গতিসীমা ভাঙার বিষয়টি অস্বীকার করেন। একপর্যায়ে তিনি দাবি করেন, ওই সময়ে গাড়ি তিনি চালাচ্ছিলেন না। এমনকি তাঁর ভাই ফেটাস ওনাসানিয়া দোষ কাঁধে নিয়ে আদালতে হাজির হন। দাবি করেন তাঁর বোন নয়, তিনিই ওই দিন গাড়ি চালাচ্ছিলেন।
কিন্তু আদালত প্রমাণ পায় যে, এমপি ওনাসানিয়াই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। গতিসীমা ভঙ্গের সময়ে তিনি মোবাইল ফোনও ব্যবহার করছিলেন। মিথ্যাচার এবং আদালতকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টার দায়ে এমপি ওনাসানিয়াকে তিন মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে তাঁর ভাই ফেটাস ওনাসানিয়াকে ১০ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ওনাসানিয়া এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন।
২০১৭ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত মধ্যবর্তী নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো এমপি হন ফিওনা ওনাসানিয়া। এর ৬ সপ্তাহের মাথায় ওই গতিসীমা ভাঙার ঘটনা ঘটে। ওনাসানিয়া পেশায় একজন কৌঁসুলি। আদালতে সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে এখন তাঁর পেশাসংশ্লিষ্ট লাইসেন্স বাতিল হবে।
যুক্তরাজ্যে নিয়ম অনুযায়ী ১২ মাসের কারাদণ্ড হলে সংসদ সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায়। তবে তিন মাসের সাজা হওয়ায় দল থেকে বহিষ্কার হয়েও ওনাসানিয়া এমপি পদ ধরে রাখার সুযোগ পাচ্ছেন।
স্থানীয় ভোটাররা বলছেন, পদত্যাগ না করলে অনাস্থা এনে তাঁকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। ২০১৫ সালে যুক্ত হওয়া ‘রিকল পিটিশন’-এর বিধান অনুযায়ী স্থানীয় এলাকার ১০ শতাংশ ভোটার অনাস্থা এনে গণস্বাক্ষরে সই করলে তাঁর এমপি পদ বাতিল হয়ে যাবে। সেখানে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ এবং বিরোধী দল লেবার পার্টি ফিওনা ওনাসানিয়াকে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন। পদত্যাগ না করলে দলগুলো স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে অনাস্থা প্রস্তাব আনার বিষয়টি উৎসাহিত করবে বলে জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যে গত ২৮ বছরের মধ্যে কোনো এমপির কারাদণ্ড হওয়ার এটি দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে ১৯৯১ সালে ৩৭৩ পাউন্ডের (প্রায় ৪০ হাজার টাকা) ‘পোল ট্যাক্স’ না দেওয়ার অপরাধে ৬০ দিনের কারাদণ্ড পান এমপি টেরি ফিল্ডস।