প্রচলিত ধারার ব্যাংকিং সেবায় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নথি সংরক্ষণ করতে হয়। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক নিজেই ইচ্ছেমত লেনদেন করছেন মোবাইল ব্যাংক, ফোন, অ্যাপস ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ফলে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের কোনো নথি নেই।
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো অভিযোগ নিয়ে গ্রাহক অথবা ব্যাংক আদালতে গেলে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের প্রয়োজনীয় নথি উপস্থাপন করার বিষয়ে করণীয় কি হবে; এসব কিছু যুক্ত করে নতুনভাবে প্রণয়ন করা হচ্ছে ‘ব্যাংকার্স বুক ইভিডেন্স অ্যাক্ট’।
‘ব্যাংকার্স বুক ইভিডেন্স অ্যাক্ট’ এর একটি খসড়া তৈরি করেছে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। নতুন এ আইন মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর পাস করানোর জন্য পাঠানো হবে জাতীয় সংসদে।
ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা ও পণ্যগুলো আইনের আওতায় আনতে সরকার নতুন করে ‘ব্যাংকারর্স বুক ইভিডেন্স অ্যাক্ট’ করার উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন এ আইন কার্যকর করা হলে ব্যাংকার্স বুক অ্যাক্ট ১৮৯১ এর ব্রিটিশ আইনের প্রতিস্থাপন হবে।
নতুন এ আইন কার্যকর হওয়ার পর আদালত চাইলে কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লেনদেন সর্ম্পকিত পুরোনো নথির সঙ্গে নতুন করে ডিজিটাল ব্যাংকিং সর্ম্পকে তথ্য ও নথি তলব করতে পারবেন।
তখন ব্যাংক হিসাব রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলো আইনগত নথি হিসেবে আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে। আধুনিক ব্যাংকিং সেবার উপকরণ অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম), ইন্টারনেট পেমেন্ট সিস্টেম, ক্রেডিট কার্ডের মতো সেবাগুলো আইনের অর্ন্তভুক্ত নয়।
বর্তমানে প্রচলিত ব্রিটিশ আইনে না থাকার ফলে নতুন এ লেনদেন (ডিজিটাল) পদ্ধতির কোনো অফিসিয়াল নথি থাকে না, যা দিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এ বিষয়ে একটি খসড়া আইন তৈরি করেছে।
আইনটি নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনার পরেই একটি চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে আর্থিক খাতে নতুন প্রযুক্তি দ্রুত গতির সঙ্গে ব্যাংকিং শাসন ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে। ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের লেনদেন পদ্ধতি সহজতর করার জন্য সব ধরনের ডিজিটাল এবং অনলাইন-ভিত্তিক পণ্য ছেড়েছে।
এ বিষয়ে মেঘনা ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নূরুল আমিন বলেন, আদালতে ব্যাংক হিসাবের অভিযোগ দেওয়ার জন্য বা প্রমাণ করার জন্য ডিজিটাল ব্যাংকিং সর্ম্পকিত আইন তৈরি করা দরকার।
কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন, ব্যাংকিং লেনদেন ব্যবস্থায় ইতিমধ্যে যে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হয়েছে, তারই ধারাবাহিকতায় (ব্যাংকার বুক ইভিডেন্স আইন) অনেক প্রয়োজন।
এদিকে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন, আদালত এবং সিকিউরিটিজ এবং এক্সচেঞ্জ কমিশন এখন গ্রাহক তথ্য চায় যা খুবই গোপনীয়।
তিনি আরও বলেন, এসব বিষয়ে একটি নতুন আইন দরকার। কারণ আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ব্যাপকভাবে পরিবর্তন হয়েছে।
মাহবুবুর রহমান আরও বলেন, নতুন আইনটি শুধু বর্তমান সময়ের জন্যই নয় বরং আর্থিক পণ্যগুলোতে ভবিষ্যতে কি কি পরিবর্তন আসতে পারে সেগুলোর উপরও দৃষ্টি দেওয়া যেতে পারে। সূত্র: বাংলানিউজ