শিক্ষা যেমন একটি জাতির মেরুদণ্ড, তেমনি অর্থ একটি দেশের মেরুদণ্ড যার ওপর দেশ দাঁড়িয়ে থাকে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
ব্যাংকিং খাতে অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, বিভিন্ন প্রাইভেট ও পাবলিক ব্যাংকের ঋণের সুদ মওকুফ-সংক্রান্ত বিষয় তদন্ত এবং তা বন্ধে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কমিশন গঠন করার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ৫টি মন্ত্রণালয়ের সচিবদের বিবাদী করে দায়ের করা রিটের শুনানিতে আদালত এমন মন্তব্য করেন।
আদালত বলেন, বাংলাদেশের সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকিং খাতে ইতোমধ্যে অর্থনৈতিকভাবে একটি নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতি খুব দ্রুত বন্ধ করে অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করে একটি শক্তিশালী জায়গায় নিয়ে আসতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা যেমন জাতির মেরুদণ্ড, তেমনি অর্থ একটি দেশের মেরুদণ্ড যার ওপর দেশ দাঁড়িয়ে থাকে।
আদালত আরও বলেন, সরকারি এবং বেসরকারি ব্যাংকে নিয়ম-নীতি মেনে ঋণ প্রদান করার কথা ছিল। যদি তা না মানা হয়, যারা যারা ঋণ গ্রহণ করেছেন এবং অর্থ পাঁচার করেছেন তাদের তালিকা করে এবং তাদের আত্মসাৎ করা অর্থ উদ্ধার করে এর একটি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে হবে। এ ছাড়াও ওই আত্মসাতের অর্থ দেশ কিংবা বিদেশে যেখানেই থাকুক না কেন তা ফিরিয়ে আনতে কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তাও প্রতিবেদন উল্লেখ করতে হবে।
এরপর হাইকোর্ট বিগত ২০ বছর ধরে ব্যাংক ঋণখেলাপিদের ও অর্থ পাচারকারীদের তালিকা প্রস্তুত করে তা আদালতে দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে বিগত বছরগুলোতে ব্যাংকিং খাতে কী পরিমাণ অনিয়ম, দুর্নীতি হয়েছে তা নির্ণয়ে একটি শক্তিশালী কমিশন গঠনে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যলয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সকল সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও এমডিকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এক আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠি বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
পরে ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, ব্যাংকিং খাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি নিয়ে আদালত এই আদেশ দেন। একটি কমিশন গঠন করে ঋণখেলাপি ও অর্থ আত্মসাৎকারীদের তালিকা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে সে তালিকা দাখিলের তারিখ ঠিক করেননি আদালত। সুনিদিষ্ট তারিখ ঠিক করার পর আমরা গণমাধ্যমকে বিষয়টি জানাবো।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ২৩ জানুয়ারি ব্যাংকিং খাতে অর্থ আত্মসাৎ, ঋণ অনুমোদনে অনিয়ম, বিভিন্ন প্রাইভেট ও পাবলিক ব্যাংকগুলোতে ব্যাংক ঋনের ওপর সুদ মওকুফ সংক্রান্ত বিষয় তদন্ত এবং তা বন্ধে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য কমিশন গঠন করার অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ ৫টি মন্ত্রণালয়ের সচিবদের একটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছিল।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইআরপিবি) পক্ষে এ নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে ৭ দিনের মধ্যে ব্যাংকিং খাতে অনিয়মের বিষয় তদন্ত ও প্রতিরোধে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ১৯৫৩ সালের ইনকোয়ারি কমিশন অ্যাক্টের অধীনে একটি কমিশন গঠনের অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু সে নোটিশের কোনো সদুত্তর না পেয়ে হাইকোর্টে এ রিট দায়ের করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।