অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ বাকির উদ্দিন ভুঁইয়া

‘আইনজীবীরা সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করে, তাই দায়বদ্ধতাও অনেক’

১৯৭৭ সালের পহেলা মে, বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার মহকুমা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর থানার ১৩ নং মাসিয়াতা ইউনিয়নের কাসাইত গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ বাকির উদ্দিন ভুঁইয়া। আসন্ন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৯-২০ বর্ষের নির্বাচনে সহ-সম্পাদক পদপ্রার্থী এই তরুণ আইনজীবী নির্বাচিত হলে আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রাখার বেশ কিছু পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের বিশেষ প্রতিনিধি প্রিন্স মাহামুদ আজিমের নেওয়া সাক্ষাৎকারে।

ইয়ার্স ক্লাব : প্রথমে আপনার সম্পর্কে জানতে চাই পড়াশুনা, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিচয়…

অ্যাড. বাকির উদ্দিন : ১৯২১ সালে স্থাপিত কাসায়েত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমার পড়াশুনার হাতেখড়ি। এক বছর পর যার এক শতাব্দী পূর্ণ হবে। তমিজ উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে কুমিল্লা বোর্ডে মাধ্যমিক পরীক্ষায় আমি ১৬ তম মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ  হই। ঢাকা কলেজ থেকে আমি উচ্চ মাধ্যমিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৮ সালে এল.এল.বি অনার্স এবং ১৯৯৯ সালে এল.এল.এম ডিগ্রী লাভ করি। তারপর আমি অত্র বারের জনপ্রিয় বিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবী শাহ্‌ মোহাম্মদ মুনির শরীফের অধীনে প্র্যাকটিস শুরু করি। শাহ্‌ মোহাম্মদ মুনির শরীফ অত্যন্ত মেধাবী আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচিত কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। আমাদের দুর্ভাগ্য ওনার অকাল মৃত্যু হয়। তারপর অন্যান্য সিনিয়রদের সহযোগিতা নিয়ে আমি ২০০৩ সাল থেকে এই পর্যন্ত নিরবিচ্ছিন্নভাবে এই পেশায় আছি।

ইয়ার্স ক্লাব : অভিযোগ রয়েছে তরুণ আইনজীবীরা রাজনীতি থেকে আগ্রহ হারাচ্ছে, আপনি রাজনীতিতে কেন এলেন?

অ্যাড. বাকির উদ্দিন : আমি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিটাকে পছন্দ করি বলে আমার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া। কেননা মুক্তিযুদ্ধ না হলে আমরা একটা স্বাধীন দেশ পেতাম না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে আমার নানা ও মামা শহীদ হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর অন্যতম একজন ভক্ত ছিলেন আমার বাবা।  তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানি হায়েনাদের ভয়ে  বাবা পাতিলের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ছবি রেখে মাটির তলায় পুতে রেখেছিলেন। মাঝে মাঝে তিনি মাটি খুঁড়ে বঙ্গবন্ধুর ছবিটা দেখতেন। স্বাধীনতার পরে যখন এই ব্যাপারটা প্রকাশিত হয় তৎকালীন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মহকুমা প্রশাসক বাবাকে পুরস্কৃত করেছেন। সে হিসাবে আমি আওয়ামী পরিবারেরই একজন সন্তান।

তরুণ আইনজীবীরা নানবিধ কারণে রাজনীতি বিমুখ হয়ে থাকে। প্রকৃত পক্ষে আমাদের দেশটাকে সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল ভাবে চালাতে হলে পরিচ্ছন্ন মানসিকতার তরুণ আইনজীবীদের রাজনীতিতে আসা উচিত।

ইয়ার্স ক্লাব :  আপনি তো আসন্ন বার নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন, বিজয়ী হলে আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে  আপনার পরিকল্পনা কি?

অ্যাড. বাকির উদ্দিন : পারতপক্ষে সমিতির কল্যাণে কাজ করার জন্য এক বছর সময় পাওয়া যায়। এতো অল্প সময়ে খুব বেশী পরিবর্তন আনা সম্ভবপর হয়ে উঠে না। তবুও আমি আমার সকল ব্যস্ততা পাশ কাটিয়ে পরিকল্পনা মোতাবেক আমার সাধ্য অনুযায়ী আইনজীবী ভাই-বোনদের কল্যাণে কাজ করে যাবো। এই ক্ষেত্রে আমার প্রথম পরিকল্পনা হচ্ছে, আইনজীবীরা অনেক বেশী পরিশ্রম করতে হয়, চাপের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। এইজন্য তাদের শারীরিক ধকল থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছুতা সময় ব্যায়াম করা জরুরী। এই ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে যদি একটা সুইমিংপুল করা যায় এতে পরিশ্রান্ত আইনজীবীরা উপকৃত হবেন। নির্বাচিত হলে সমিতির উদ্যোগে সুইমিংপুল নির্মাণের প্রস্তাব করব।

দ্বিতীয়ত, যেহেতু আইনজীবীরা প্রতিষ্ঠা পায় একটু বেশী বয়সে। তাই আইনজীবীদের জন্য যদি গ্রুপ ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা করা যায় তাহলে হঠাৎ যদি কোন আইনজীবী জটিল কোন রোগাক্রান্ত হয়ে বা দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যুবরণ করেন তাহলে তার পরিবার একটা অর্থনৈতিক সহয়তা পাবে। যা তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সহায়ক ও কার্যকর ভূমিকা রাখবে। নির্বাচিত হলে আমি আইনজীবীদের জন্য গ্রুপ ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা করতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করব।

ইয়ার্স ক্লাব : আপনি যেহেতু বয়সে তরুণ সেজন্য আপনার কাছে জিজ্ঞাসা, নির্বাচিত হলে নবীন আইনজীবীদের জন্য আপনার বিশেষ কোন পরিকল্পনা আছে কিনা?

অ্যাড. বাকির উদ্দিন: বর্তমানে অনেক মেধাবী তরুণ আইনজীবীরা আসছে আদালত প্রাঙ্গণে। তাদের জন্য যদি একটা সুন্দর পরিবেশ তৈরি করে দেওয়া যায় তাহলে এটা তাদের আইন পেশায় উন্নতি করার ভিত্তি হিসাবে কাজ করবে বলে আমি মনে করি। আর আমাদের সুপ্রিম কোর্টের লাইব্রেরীতে উপমহাদেশের সকল ল’ জার্নাল গুলো অন্তর্ভুক্ত করে আরও বেশী আধুনিকায়ন করা যায় তাহলে তরুণ আইনজীবীরা আদালতে রিসোর্চফুল সাবমিশন রাখতে পারবে। ফলশ্রুতিতে আমাদের বার ও বেঞ্চ  আরও মানসম্মত হবে।

ইয়ার্স ক্লাব : সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে আইনজীবীদের ভূমিকা কি হতে পারে?

অ্যাড. বাকির উদ্দিন: আইনজীবীরা সমাজের দর্পণ হিসাবে কাজ করে। তাই আইনজীবীদের কাছে সমাজের দায়বদ্ধতা অনেক। কেননা সমাজের সমস্যাগুলো আইনের মাধ্যমে সুন্দর সমাধান দেওয়া আইনজীবীদের পক্ষে সম্ভব। আইনের চোখে সবাই সমান। তাই সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় আইনজীবীদের ভূমিকা রাখা জরুরী এবং সেটা তারা রাখছে। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

ইয়ার্স ক্লাব: আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।

অ্যাড. বাকির উদ্দিন: ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকেও ধন্যবাদ।