কাজী শামসুল হাসান শুভ বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন তরুন আইনজীবী। তরুণ এই আইনজীবীর পৈতৃক নিবাস কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার কাজী বাড়িতে। ৫২ বছর পর সদ্য ঘোষিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের সহ আইন বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। এছাড়াও তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এলএলএম এসোসিয়েশন (সিইউএলএলএ)’র সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০১৯-২০ বর্ষের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আসন্ন নির্বাচনে সহ-সম্পাদক পদপ্রার্থী হয়েছেন তরুণ এই আইনজীবী। ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের বিশেষ প্রতিনিধি প্রিন্স মাহামুদ আজিমের সাক্ষাৎকারে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে তিনি নির্বাচিত হলে আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে তার পরিকল্পনার রূপরেখা তুলে ধরেন।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : প্রথমে আপনার ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিচয় সম্পর্কে জানতে চাই।
ব্যারিস্টার শুভ : চট্টগ্রামের সরকারী মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম সরকারী কলেজ থেকে আমি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এল.এল.বি ও এল.এল.এম সম্পন্ন করে ১৯৯৮ সালে চট্টগ্রাম বার কাউন্সিলরে সদস্য হিসাবে তালিকাভুক্ত হই। সর্বপ্রথম চট্টগ্রাম আদালত অঙ্গন থেকে আমার আইন পেশায় যাত্রা শুরু হয়। ২০০৩-০৪ বর্ষে চট্টগ্রাম বারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোটে এক্সিকিউটিভ কমিটির নির্বাহী সদস্য হিসাবে জয় লাভ করি এবং যথাযথভাবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করি। ২০০১ সালে আমি হাইকোর্টে প্র্যাকটিস করার অনুমতি পেয়েছি। উচ্চ আদালতে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের জুনিয়র হিসাবে আমি প্র্যাকটিস শুরু করি। আইন পেশায় আরও অধিক পড়াশুনার আগ্রহ থেকে আমি বার-এট-ল ডিগ্রী নিতে যুক্তরাজ্য যাই এবং ডিগ্রী অর্জন করি। যুক্তরাজ্য থাকা অবস্থায় আমি আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করি।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : অভিযোগ রয়েছে তরুণ আইনজীবীরা রাজনীতিতে অনাগ্রহী আপনি বিষয়টাকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ব্যারিস্টার শুভ : প্রথমত তরুণ আইনজীবীরা রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছে এটাতে আমার দ্বিমত রয়েছে। কেননা বর্তমানে শুধু তরুণ আইনজীবীরাই নয় অন্যান্য তরুণরাও যে যার মতাদর্শের ভিত্তিতে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করছে। তবে হ্যাঁ, এই তরুণদের একটা অংশ হয়তো রাজনীতিতে সময় দিতে চাচ্ছেন না। তবে রাজনীতির অতিত থেকে বর্তমান পর্যন্ত তরুণদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বর্তমানে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে দলীয় অনেক পদ-পদবিতে তরুণদের পদচালনা রয়েছে। যার থেকে অন্যান্য তরুণরা রাজনীতিতে অনুপ্রানিত হচ্ছে।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : আসন্ন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে আপনি নির্বাচিত হলে আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে আপনার কী পরিকল্পনা রয়েছে?
ব্যারিস্টার শুভ : আমার প্রতিনিয়ত স্বপ্ন হচ্ছে একজন ভালো আইনজীবী হওয়ার। তাই ভালো আইনজীবী হতে হলে ভালো রিসোর্সের প্রয়োজন। এজন্য আমাদের সুপ্রিম কোর্টের লাইব্রেরীটাকে আরও আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। আমি যদি সহ-সম্পাদক নির্বাচিত হই সেক্ষেত্রে আমার সীমিত দায়িত্বের মধ্যে থেকে সমিতির সভাপতি-সম্পাদকের সাথে সমন্বয় করে সুপ্রিম কোর্টের লাইব্রেরীটাকে আরও আধুনিকায়ন করায় সচেষ্ট থাকবো। উপমহাদেশের এবং আন্তর্জাতিক আইনের যেসকল ওয়েবসাইট রয়েছে সেগুলোতে প্রবেশাধিকারের অনুমতির বিষয়টা আমি সমিতিতে আলোকপাত করতে চাই। সে সাথে এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে চাই। আমি সবসময় আইনজীবী বান্ধব সমিতির নব নির্বাচিত সদস্য, সভাপতি ও সম্পাদকদের সাথে সম্মিলিতভাবে আইনজীবীদের প্রাত্যহিক সমস্যা সমাধানে জোর দাবী জানিয়ে যাবো এবং আইনজীবীদের প্রাত্যহিক সমস্যা ও কল্যাণের কথাগুলোই আমি সমিতিতে উত্থাপন করবো।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : বয়সে তরুণ আইনজীবী হিসাবে আপনার কাছে জানতে চাই, নির্বাচিত হলে নবীন আইনজীবীদের জন্য আপনার বিশেষ পরিকল্পনার কথা।
ব্যারিস্টার শুভ: তরুণ আইনজীবীরা আদালত অঙ্গনে এসে প্রথমত যে সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন তা হল, আদালতে মামলা কীভাবে পরিচালনা করতে হয়? কীভাবে ড্রাফট করতে হয়? ইত্যাদি বিষয়ে তারা জানেন না। এই সকল বিষয় তরুণ আইনজীবীরা তাদের সিনিয়রের কাছ থেকে শিখবেন। কিন্তু যে সকল তরুণ আইনজীবীরা সিনিয়র পান না। তাদের জন্য বারের উদ্যোগে আলাদা প্রশিক্ষণ ও বিজ্ঞ আইনজীবী ও বিচারপতিদের মাধ্যমে তাদের জন্য সেমিনারের আয়োজন করা যায়। তাহলে তরুণ আইনজীবীরা অনেক বেশী স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন এবং সঠিক ভাবে বিষয়গুলো জানতে পারবেন। অ্যাডভোকেসি অনেক বড় একটা ব্যাপার। প্র্যাকটিসের ক্ষেত্রে অ্যাডভোকেসি কীভাবে ভালোভাবে করা যায় এটার জন্যও সঠিক প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। আমি নির্বাচিত হলে সমিতির অনুমতি ও নবনির্বাচিত সভাপতি-সম্পাদকের পরামর্শ সাপেক্ষে নবীন আইনজীবীদের এই সকল সমস্যা সমাধানে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবো।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : সমাজের কাছে আইনজীবীদের দায়বদ্ধতা রয়েছে কি? যদি থাকে সেক্ষেত্রে সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে আইনজীবীদের ভূমিকা কি হতে পারে?
ব্যারিস্টার শুভ : আইনজীবীরা হচ্ছেন সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তাই সমাজের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা অপরিসীম। আইনজীবীরা চাইলে সমাজের প্রতিটি স্তরে ভূমিকা রাখতে পারেন। যেমন একজন আইনজীবীর কাছে কোন মক্কেল মামলা নিয়ে আসলে হয়তো বিষয়টা সমঝোতার মাধ্যমে শেষ হতে পারে। সেক্ষেত্রে আইনজীবীরা মক্কেলকে মামলা না করার পরামর্শ দিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টার আপোষ করে নেওয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন। এতে করে সমাজের শৃঙ্খলা বজায় থাকবে এবং আদালতে মামলার সংখ্যাও কমে যাবে, মানুষ আদালত অঙ্গনে হয়রানি হওয়া কিংবা দালালদের খপ্পরে পড়ার হাত থেকে মুক্তি পাবেন। আইনজীবীরা যদি সমাজের বন্ধু হিসাবে কাজ করতে চায় তাহলে সমাজের অনেক ভালো ভালো কাজ আইনজীবীরা করতে পারেন। তাছাড়া আইনজীবীরা নিজের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে মামলার ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব ফিস কম নিয়ে কিংবা নামমাত্র মূল্যে সমাজের দরিদ্র ব্যক্তিদের উপকার করতে পারেন। তাতে আমাদের সমাজটাও সুন্দর হয়ে যাবে আর আইনজীবীদের ভূমিকাটাও মুখ্য ভূমিকায় উপনীত হবে বলে আমি আশাবাদী।