জনবান্ধব আইনজীবী হিসাবে খ্যাত অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মশিউর রহমান। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একজন স্বনামধন্য আইনজীবী। অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান কিশোরগঞ্জ জেলার ভৈরব উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। পারিবারিক ভাবে তিনি শিক্ষক পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। ২০১৯-২০ বর্ষের আসন্ন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সদস্য পদপ্রার্থী হয়েছেন তরুণ এই আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে যদি তিনি সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন সমিতি ও আইনজীবীদের কল্যাণের পাশাপাশি একজন উদীয়মান রাজনৈতিক হিসাবে দেশ ও আর্থ-সামাজিক কল্যাণে তার পরিকল্পনার কথা উঠে এসেছে ল’ইয়ার্স ক্লাব ডটকমের বিশেষ প্রতিনিধি প্রিন্স মাহামুদ আজিমের একান্ত সাক্ষাৎকারে।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : প্রথমেই জানতে চাই আপনার আইনপেশায় উঠে আসা ও রাজনীতিতে অনুপ্রাণিত হওয়ার গল্প।
অ্যাড. মশিউর রহমান : শুরু থেকেই বলি, আমার পড়াশুনায় হাতেখড়ি ভৈরব উপজেলার একটি স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে। তারপর আমি ঢাকাতে চলে আছি এবং এখানে আইন বিষয়ে লেখাপড়া সম্পন্ন করে ২০০৭ সালে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলরের মাধ্যমে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হই এবং ২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে তালিকাভুক্ত হই। সেই থেকে আমি নিরবিচ্ছিন্নভাবে নিয়মিত আইনপেশায় কর্মরত রয়েছি। রাজনৈতিক অনুপ্রেরণা পেয়েছি আমার বাবার কাছ থেকে। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের চেতনায় বিশ্বাসী ছিলেন যা আমার মাঝেও বিদ্যমান। প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সংস্পর্শে আওয়ামী রাজনীতিতে আমার পদার্পণ। ২০১৬ সালে আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদের সুপ্রিম কোর্ট বার শাখার সহ-সম্পাদক হিসাবে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করি। দেশ ও সমাজের স্বার্থে আমি মনে করি শিক্ষিত তরুণদের রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : আপনি বলছেন, দেশ ও সমাজের স্বার্থে শিক্ষিত তরুণদের রাজনীতিতে আসা প্রয়োজন, বিষয়টি একটু বুঝিয়ে বলবেন কি?
অ্যাড. মশিউর রহমান : রাজনীতির মাধ্যমে দেশের যে কল্যাণ বা মঙ্গল হতে পারে সেটা হয়তো অনেকের দ্বারা হচ্ছে না। সেই জায়গা থেকে রাজনীতির প্রতি কিছু হতাশা আমাদের রয়েছে। তাই আমি মনে করি রাজনীতিতে শিক্ষিত, মেধাবী, সৃজনশীল ও সৎ চিন্তাধারার মানুষদের আসা উচিত। কারণ সার্বিক অর্থে দেশের কল্যাণে ও রাজনীতির গুণগত পরিবর্তনের জন্য মেধাদিপ্ত লোকদের প্রয়োজন। সেই চিন্তাধারা থেকে আমি শিক্ষিত তরুণদের রাজনীতি আহ্বান জানাই।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : আমরা জানি, আসন্ন বার নির্বাচনে আপনি প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। নির্বাচিত হলে আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে আপনার পরিকল্পনা কি?
অ্যাড. মশিউর রহমান : আসন্ন ২০১৯-২০ বর্ষের সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচনের মাধ্যমে সভাপতি, সম্পাদক ও সহসম্পাদক সহ মোট চৌদ্দ জনের কমিটি নির্বাচিত হবে। সেখানে আমি একজন সদস্য পদপ্রার্থী । সুতরাং সদস্য পদটি উক্ত সমিতিতে সব থেকে ছোট পদ। আমি যদি নির্বাচনে সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হই তাহলে আমার ক্ষমতা সীমিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই আমাদের সম্মিলিত ভাবে কাজ করতে হবে। বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের সদস্য সংখ্যা প্রায় দশ হাজারের মতো, এর মধ্যে ভোটার রয়েছে প্রায় আট হাজার। এক্ষেত্রে প্রথমত, আইনজীবীদের গবেষণার স্বার্থে উন্নত মানের অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাবের প্রয়োজন, যেন নবীন-প্রবীণ সকল আইনজীবী সেখানে গবেষণা করার সুযোগ পায়। এতে করে নবীন আইনজীবীদের সৃজনশীলতার একটা জায়গা তৈরি হবে। দ্বিতীয়ত, তরুণ আইনজীবীদের পড়াশুনা সহ আদালতের খুঁটিনাটি বিষয়ে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্ট বারের পক্ষ থেকে ডি.এল.আর, বি.এল.সি, বি.এল.ডি ইত্যাদি রেফারেন্স বই দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বারের পাবলিকেশন্স নবায়ন করা প্রয়োজন এবং সুপ্রিমকোর্ট বারের লাইব্রেরীতে নতুন বই সংযোজনের মাধ্যমে আরও বড় পরিসরে আনা প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্টের সার্বিক কল্যাণে আইনজীবী ও মক্কেলদের জন্য সুপ্রিম কোর্ট ক্যান্টিনের খাবারের মান উন্নয়নেরও সুযোগ রয়েছে। কেননা সুপ্রিম কোর্ট বার অনেক বড় একটা প্রতিষ্ঠান। তাই আমি সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হলে এইসকল প্রস্তাবনা সমিতিতে উত্থাপনের মাধ্যমে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে সচেষ্ট থাকবো।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : তরুণ আইনজীবীদের জন্য আপনার বিশেষ পরিকল্পনার কথা জানতে চাই।
অ্যাড. মশিউর রহমান : সমিতিতে আমি সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হলে প্রথমত, আমি তরুণ আইনজীবীদের বসার জায়গার প্রস্তাব রাখবো। কারণ একজন আইনজীবী সুপ্রিম কোর্টে তার পেশা পরিচালনা করেন কিন্তু তার বসার কোন সু-ব্যবস্থা নেই, এটা সত্যিই দুঃখজনক। পেশার বয়স ও দক্ষতার বিবেচনা না করে বিভিন্ন বিবেচনায় বসার জায়গা বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে যে অনিয়ম রয়েছে, সেটা নিরসনের পাশাপাশি সুষ্ঠুভাবে কিউবিকেল বরাদ্দ দেওয়া হয় সেজন্য আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।
দ্বিতীয়ত, সুপ্রিম কোর্টে তরুণ আইনজীবীদের সিনিয়র পাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে বিপুল সংকট। কেননা সিনিয়র আইনজীবীরা সংখ্যায় কম, সে তুলনায় জুনিয়র অনেক বেশী। সেক্ষেত্রে অনেক জুনিয়ররাই ভালো সিনিয়রের সাথে কাজ করার সুযোগ না পাওয়ার কারণে অনেক কিছু শিখতে পারছে না। যেহেতু এটা ভবিষ্যতের জন্য একটা বড় সমস্যা তাই এই সমস্যাকে কীভাবে তরুণ আইনজীবীবান্ধব করা যায় সেই ব্যাপারে আমি সু-কল্পিত পরিকল্পনার মাধ্যমে চেষ্টা অব্যাহত রাখবো। জুনিয়র আইনজীবীরা অনেক মেধাবী ও গবেষণামুখী হওয়ায় আমাদের এই সকল সমস্যা চিহ্নিত করে অবিলম্বে সমাধান করা উচিত ।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : আইনজীবী হিসাবে পেশাগত দায়িত্বের পাশাপাশি ব্যক্তি মানুষ হিসাবে সামাজিক কল্যাণে কি ধরণের অবদান রাখতে পারেন বলে আপনি মনে করেন?
অ্যাড. মশিউর রহমান : আদালত মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল তাই আইনজীবীদের শুধু আইন পেশায় নয় সমাজের প্রতিটি স্তরে ভূমিকা রাখা উচিত। তাই বিচার ব্যবস্থা ও আইনের পরিসরের মধ্যে থেকে আইনজীবীদের জনবান্ধব হয়ে জনকল্যাণ মুখী অনেক কিছু করার সুযোগ রয়েছে। একজন আইনজীবী যদি কম টাকায় মামলা করে দেন সেটা সর্বপরি দেশ ও সমাজের কল্যাণ সাধন করবে। আইনজীবীদের পেশার বাহিরে একজন ব্যক্তি মানুষ হিসাবেও সমাজের কাছে অনেক দায়বদ্ধতা রয়েছে। সকলের মতো তারাও সমাজ উন্নয়নে নিজের অবদান রাখতে পারেন।
ল’ইয়ার্স ক্লাব : আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ
অ্যাড. মশিউর রহমান : ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে ধন্যবাদ, সেই সাথে এর অগণিত পাঠককেও ধন্যবাদ।