প্রাতর্ভ্রমণ শেষ করে বিচারক সাঈদ শুভ যখন বাসার সামনে এলেন তখন দেখলেন- এক বৃদ্ধ নর্দমার ভেতরে পড়ে যান। একাই বৃদ্ধকে টেনে তুললেন নর্দমা থেকে। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা ৮-১০ জন ব্যক্তি ঘটনাটি দাঁড়িয়ে দেখলেন। বৃদ্ধকে টেনে তুলতে তারা কেউই এগিয়ে আসেননি। গতকাল মঙ্গলবার সকালে রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান গোরস্থান এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে।
এ ঘটনায় ভীষণ বিরক্ত রাজশাহী জেলা জজ আদালতের সিনিয়র সহকারী জজ সাঈদ শুভ। এ নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। এরপর থেকে ফেসবুকে অনেকেই রাজশাহীর তরুণ এই বিচারককে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন। সব মানুষ এমন হোক, এমন প্রত্যাশা করছেন।
ঘটনাটি সম্পর্কে বিচারক সাঈদ শুভ ফেসবুকে লেখেন, ‘অনেক দিন মানুষের প্রতি এত বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ হইনি। মর্নিং ওয়াক শেষ করে বাসার সামনে এসেছি। হঠাৎ খেয়াল করলাম, এক কিশোরের আঁকাবাঁকা সাইকেল চালানোর কারণে এক বৃদ্ধ চাচা তার গতিমান সাইকেলসহ ড্রেনের মধ্যে জোরে পড়ে গেলেন। মাথা গিয়ে আঘাত করল ড্রেনের ওয়ালে, বুক ও হাঁটুতেও সমানভাবে আঘাত পেয়েছেন। ড্রেনের মধ্যেই লুটিয়ে পড়েছেন। আমি দৌড়ে গিয়ে উনাকে ওঠানোর চেষ্টা করছি। ড্রেনটা বেশ গভীর। ওঠাতে হিমশিম খাচ্ছি। ড্রেনের পাশে বেশ কয়েকজন মানুষ জড়ো হয়েছেন। সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মনে হয় ‘রিয়েলিটি শো’ দেখছেন, আর মজা পাচ্ছেন!’
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারক আরও লেখেন, ‘শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে একা একাই ওঠালাম বৃদ্ধ চাচাকে। খুবই ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হয়েছি ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা ৮-১০ জন মানুষের ওপর। অনেক সময় না হয় ভয়াবহ বিপদ দেখেও মানুষের কিছু করার থাকে না। এ কারণে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারে না। কিন্তু এখানে শুধু দুহাত বাড়িয়ে মানুষটাকে ওঠাবে। এটুকুও করতে প্রস্তুত নয় এই মানুষগুলো? আসলে হৃদয়হীন মানুষ এই সমাজে অনেক বেড়ে গিয়েছে। এই বিবেকহীন মানুষগুলোকে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য অনেক জাস্টিফিকেশন খুঁজছি। কিন্তু একটা জাস্টিফিকেশনও খুঁজে পাচ্ছি না। তাদের ক্ষমা করে দিতে পারলে ভালো লাগত।’
সাঈদ শুভ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। ছাত্রজীবনে ক্যাম্পাসে সাংবাদিকতাও করতেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (রাবিসাস) সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকও ছিলেন।