৪০তম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ঢাকার আদালতকে পুলিশ এক প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, চক্রটি আগে থেকে বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছিল। মোবাইলের মাধ্যমে বিসিএসের প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে থাকে চক্রটি।
এ ঘটনার তদন্ত করছেন ডিবির সিরিয়াস ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের রোবারি প্রিভেনশন টিমের উপপরিদর্শক (এসআই) সুশংকর মল্লিক। তিনি বলেন, আদালতের অনুমতি নিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁসকারী চক্রের পাঁচ সদস্যকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। এঁরা সবাই কোচিং সেন্টারের সঙ্গে জড়িত।
অবশ্য ৪০তম বিসিএসের প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে, এমন কোনো অভিযোগ কেউ করেনি। পুলিশ বলছে, এই চক্রটি ফাঁস করার কাজ করছিল। তবে পুলিশের তৎপরতায় এদের অনেককেই আগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তার করতে পারলে জানা যাবে চক্রটি প্রশ্নপত্র ফাঁসে সক্ষম হয়েছিল কি না।
৪০তম বিসিএসের প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার পাঁচজন হলেন কুষ্টিয়ার জাফর আহম্মেদ (৩৪), ফরিদপুরের নাজমুল হায়দার (৩৯), নীলফামারীর রাশিদ উদ্দিন (৩১), রাজশাহীর ওবাইদুল্লাহ আল-মামুন (৩০) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আবু ওবায়দা রাহিদ (২৮)।
ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপসহ ডিজিটাল পদ্ধতিতে চক্রটির বিসিএসের প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নিউমার্কেট থানায় গতকাল শনিবার মামলা করে ডিবি।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার রহস্য উদঘাটনের জন্য পাঁচজনকে গত শনিবার (৪ মে) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ডিবি। এই চক্রের পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য প্রত্যেক আসামির দশ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে।
কীভাবে ডিবি বিসিএসের প্রশ্নপত্র ফাঁসের এই চক্রের সন্ধান পায় এবং কীভাবে আসামিদের গ্রেপ্তার করে, সে ব্যাপারে প্রতিবেদন দিয়ে আদালতকে জানায় পুলিশ।
পুলিশের প্রতিবেদন বলছে, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার সময় ঢাকা কলেজের সামনে ডিবির একটি দল অবস্থান করছিলেন। তখন ডিবির সদস্যরা জানতে পারেন, ৪০তম বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের কয়েকজন পল্লবীর বাসায় অবস্থান করছেন। চক্রটি ঢাকা কলেজ ও ঢাকার টিচার্স ট্রেনিং কলেজে অংশগ্রহণকারী বিসিএস পরীক্ষার্থীদের সহায়তা করবে। ডিবির দলটি বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে পল্লবীর ওই বাসায় অভিযান চালায়। তখন আসামি জাফরের কাছ থেকে একটি মোবাইল ফোন জব্দ করে। একই সময় অপর আসামি নাজমুলের কাছে পায় বিসিএস প্রফেসার্স গণিত গাইড, যা জব্দ করা হয়। দুজনকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাঁরা জানান, টাকার বিনিময়ে তিনজন বিসিএস পরীক্ষার্থীকে ইলেকট্রনিকস ডিভাইস দিয়েছেন। এসব শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেবেন মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয়, টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও ঢাকা কলেজে। শুক্রবার বিসিএস পরীক্ষা চলাকালে ডিবির দলটি ওই তিনটি কেন্দ্রে অভিযান চালায়। মোহাম্মদপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ইলেকট্রনিক ডিভাইসসহ ওবাইদুল্লাহকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া টিচার্স ট্রেনিং কলেজ থেকে রশিদ উদ্দিন এবং ঢাকা কলেজ থেকে রাহিদকে গ্রেপ্তার করা হয়। আসামিদের কাছ থেকে পাওয়া ইলেকট্রনিকস ডিভাইস জব্দ করা হয়।
জব্দ করার সময় উপস্থিত ছিলেন টিচার্স ট্রেনিং কলেজের নৈশ প্রহরী সেলিম মিয়া। তিনি বলেন, বিসিএস পরীক্ষা চলার সময় ডিবির একটি দল তাঁদের কলেজে আসে। পরীক্ষা চলার সময় একজনকে আটক করতে দেখেন। তাঁর কাছ থেকে এক ধরনের ইলেকট্রনিকস যন্ত্র উদ্ধার করে পুলিশ।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা প্রত্যেকে পরস্পর যোগসাজশে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটস অ্যাপসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমে ৪০তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র টাকার বিনিময়ে ফাঁস করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পাবলিক পরীক্ষা আইনের অপরাধ করেছেন।
তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির সুশংকর মল্লিক বলেন, আগে থেকে চক্রটি বিসিএসসহ বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে আসছিল বলে জানা গেছে। চক্রের অপর সদস্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হবে।