প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (ফাইল ছবি)
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (ফাইল ছবি)

আইন সহায়তা কার্যক্রমে তিনভাবে অবদান রাখতে পারে আইনজীবীরা

সরকারি ব্যবস্থাপনায় আইনগত সহায়তা পাওয়া কোনো দান বা করুণা নয়; এটা দরিদ্র ও অসহায় মানুষের অধিকার মন্তব্য করে সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সরকারি আইন সেবা কার্যক্রম আরো গতিশীল করা সম্ভব বলে মনে করেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এক্ষেত্রে তিনভাবে আইনজীবীরা আইন সহায়তা কার্যক্রমে অবদান রাখতে পারেন বলেও মনে করেন প্রধান বিচারপতি।

উচ্চ আদালতে সরকারি আইনি সেবা চলমান প্রক্রিয়া ও প্রত্যাশা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে গতকাল রোববার (৫ মে) বিকেলে এসব কথা বলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘প্রথমত, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল আইনি সহায়তা বিষয়ে আইনজীবীদের উদ্বুদ্ধ করার নিমিত্তে নানাবিধ নীতি প্রণয়ন করতে পারে যেমন- প্রত্যেক আইনজীবীকে বছরে কমপক্ষে দুটি মামলা বিনা ফিতে পরিচালনা করতে হবে।’

প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয়ভাবে লিগ্যাল এইড বিষয়ক কর্মসূচি চালু করতে পারে। দ্বিতীয়ত স্থানীয় বার অ্যাসোসিয়েশন বারের সদস্যদের আইন সহায়তার বিষয়ে উৎসাহিত করতে পারে। তৃতীয়ত, আইনজীবীরা স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিনা ফি-তে অথবা নামমাত্র ফি-তে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আইনি সেবা দিতে পারে।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচারকদেরও লিগ্যাল এইড মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য মামলা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে। আমার বিশ্বাস সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সুপ্রিম কোর্টে সরকারি আইন সেবা কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে। বিজ্ঞ আইনজীবীদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক কর্মকর্তারা যাতে দায়িত্বশীলতার সাথে অসহায় ও আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল ব্যক্তিদের মামলাসমূহ পরিচালনা ও নিষ্পত্তিতে সহায়তা করেন সেজন্য আমি সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ করছি। অসহায়, দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের আইনগত অধিকার ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বার কাউন্সিল, বার অ্যাসোসিয়েশন, আইনজীবী, মানবাধিকার কর্মীসহ বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনসমূহকে আরো এগিয়ে আসার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাই।’

সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ও মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন যৌথভাবে আয়োজনে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান বিচারপতি বলেন, ন্যায়বিচার পাওয়া এবং আইনের সমান আশ্রয়লাভের অধিকার একটি সার্বজনীন মৌলিক মানবাধিকার। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার সংরক্ষণ এবং দরিদ্রবান্ধব ও জনকল্যাণকর বিচার ব্যবস্থার অন্যতম শক্তি হলো লিগ্যাল এইড তথা আইনগত সহায়তা দেওয়া। ‘আইনের দৃষ্টিতে সমতা’র যে অমীয় বাণী আমরা বারবার প্রতিধ্বনি করি, আইনগত সহায়তা ব্যতিরেকে তা কখনই বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।

‘সরকারি ব্যবস্থাপনায় আইনগত সহায়তা পাওয়া কোনো দান বা করুণা নয়; এটা দরিদ্র ও অসহায় মানুষের অধিকার, আর রাষ্ট্রের এক অপরিহার্য দায়িত্ব। আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং বিচারপ্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনগত সহায়তা দেওয়ার জন্য আইনগত সহায়তা প্রদান আইন ২০০০ প্রণীত হয়। এটি সত্যিই একটি নন্দিত আইন। বর্তমানে সরকারি এবং বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় এর কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বিস্তৃত হয়েছে এবং এর সুফল ক্রমান্বয়ে দেশের সবা জায়গায় ছড়িয়ে পড়ছে। এ ফলপ্রসূ কার্যক্রম এরইমধ্যে সবমহলে অত্যন্ত প্রশংসিত হয়েছে।’

পরিসংখ্যান থেকে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে ৩,৯৩,৭৯০ জনকে বিভিন্নভাবে লিগ্যাল এইড দেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ২০১৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ১৩,৮৩১ জনকে লিগ্যাল এইড দিয়েছেন। যা সত্যিই প্রশংসনীয়।

লিগ্যাল এইড সংক্রান্ত আইন, বিধি ও সার্কুলারগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করার কথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, লিগ্যাল এইড বিষয়ক আইন-কানুনকে প্রতিটি ল’স্কুলের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা উচিৎ, যেন শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ের উপর বিস্তৃত জ্ঞান লাভ করতে পারে। সরকারি খরচে পরিচালিত মামলাগুলো অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে এবং দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তির ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক হতে হবে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, লিগ্যাল এইড দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তির আর্থিক অসচ্ছলতাসহ অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে মামলার গুণাগুণও বিবেচনা করতে হবে। সমাজের সবচেয়ে নির্যাতিত-নিপীড়িত ব্যক্তি বিশেষভাবে নারীও শিশুরা লিগ্যাল এইড থেকে যেন বঞ্চিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম, বিশেষ অতিথি আনিসুল হক, অ্যাটর্নি-জেনারেল মাহবুবে আলম, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ এম আমিন উদ্দিন, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম উপস্থিত ছিলেন।