চোরকে চোর ও দুর্নীতিগ্রস্তকে দুর্নীতিবাজ বলতে হবে, তা না হলে দেশকে রক্ষা করা যাবে না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
রাজধানীর বায়ুদূষণ রোধে নেওয়া পদক্ষেপের অগ্রগতিবিষয়ক মামলার শুনানিতে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল রোববার (৫ মে) এমন মন্তব্য করেন।
সিটি করপোরেশনের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘পানি ছিটানোর জন্য চালক উপস্থিত আছে কি না, গাড়ি নিয়ে চালক বের হয়ে পানি ছিটালেন কি না, তা কে দেখবে? পানি যে ছিটানো হয়েছে, তা বুঝব কীভাবে? চালক বের হলেও গন্তব্যে না গিয়ে গাড়ি থামিয়ে তেল চুরি করে বসে থাকতে পারেন। তেল বিক্রির ভাগ নেয় না, এমন ভদ্রলোক কম আছে।’
হাইকোর্ট আরও বলেন, ‘আমরা তো রাস্তায় চলি। শুধু ভিআইপি সড়কে পানি ছিটাতে দেখা যায়, অন্য কোথাও হয় না। ফণী (ঘূর্ণিঝড়) এসেছিল বলে আপনাদের রক্ষা। প্রকৃতি ধুলোবালু কমিয়ে দিয়েছে।’
গত ১০ এপ্রিল হাইকোর্টের নির্দেশের ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার সিটি করপোরেশন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়।
শুনানির পর হাইকোর্ট পানি ছিটানোসহ দূষণ নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানাতে দুই সিটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের ১৫ মে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন।
শুনানির শুরুতে রিট আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ১০ এপ্রিল আদালত গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে সিটি করপোরেশনকে অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। আদালতের আদেশ অনুসারে যেভাবে প্রতিবেদন দেওয়ার কথা, সেভাবে দেওয়া হয়নি। এতে আদালতের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখানো হয়েছে। একপর্যায়ে সিটি করপোরেশনের আইনজীবী নুরুন্নাহার আক্তার বলেন, পানি ছিটানো প্রতিদিনের দৈনন্দিন কাজ। প্রতিবেদনে পানি ছিটানোর বিষয় উল্লেখ আছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন তুলে ধরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরে মাত্র আটটি ম্যাজিস্ট্রেটের পদ আছে। এর মধ্যে ঢাকায় একজন আছেন। আর চট্টগ্রামে যিনি আছেন, তিনিও মাতৃত্বকালীন ছুটিতে। অপর ছয়টি পদ শূন্য। ম্যাজিস্ট্রেট-স্বল্পতার কারণে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা কঠিন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের উদ্দেশে আদালত বলেন, জনবলের সীমাবদ্ধতা সব জায়গায় আছে। সুপ্রিম কোর্টেরও জনবলসংকট আছে।
আদেশের পর মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘সিটি করপোরেশন তিনবার প্রতিবেদন দিলেও আদালতের নির্দেশনা অনুসারে হচ্ছে না। সর্বশেষ যেটি দিয়েছে, সেটি আগেও দিয়েছে। এতে আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।’
‘ঢাকার বাতাসে নতুন বিপদ’ শিরোনামে গত ২১ জানুয়ারি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটি যুক্ত করে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে ২৭ জানুয়ারি রিট করা হয়।