২০১০ সালের রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইনের ৩৬ ধারায় এবং সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ২১(ক) ধারা কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না -তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সানজিনা বেগম নামের এক ফ্ল্যাট ক্রেতার দখলের ওপর স্থিতিবস্থা জারি করেছেন আদালত। ফলে ওই ফ্ল্যাট যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায় থাকবে বলে জানিয়েছেন আইনজীবী।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার (৭ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি শেখা হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম বলেন, ‘এই রিটের একটি জনস্বার্থমূলক দিক হলো- সংশ্লিষ্ট আইনের দুর্বল এবং অসাংবিধানিক বিধানের কারণে দেশের অসংখ্য ডেভেলপার কোম্পানি ফ্ল্যাট বা প্লট তৈরি করে ক্রেতাদের বিভিন্নভাবে প্রতারিত করে। ক্রেতাদের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া হয় না। ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করার পরও তা ব্যাংকের কাছে বন্ধক দেওয়া হয়, যা ফ্ল্যাট বা প্লট ক্রেতার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন। অত্র রিটের মাধ্যমে আইনের অবৈধ বিধানসমূহ দূর হলে লাখ লাখ ফ্ল্যাট ক্রেতা ভবিষ্যতে উপকৃত হবেন।’
এর আগে সানজিনা বেগম নামের এক ব্যক্তি ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি নগর হোমস লিমিটেড থেকে উত্তরায় একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করেন এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ফ্ল্যাটের দখল পান। ১ কোটি ৭০ লাখ টাকা পরিশোধের পর উক্ত ফ্ল্যাটের দখল পান তিনি। তবে ডেভেলপার কোম্পানিকে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও ক্রেতাকে দলিল রেজিস্ট্রেশন করে দেয়া হয়নি।
গত ১৬ এপ্রিল সানজিনা বেগমের ফ্ল্যাটটির দখল ও বরাদ্দ বাতিলের জন্য তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় ওই রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। এরপর গত ২৪ এপ্রিল ডেভেলপার কোম্পানিকে সানজিনা বেগম আইনি নোটিশ দেন। নোটিশের কোনো জবাব না পেয়ে গত ৫ মে তিনি হাইকোর্টে রিট করেন।
রিটে ডেভেলপার কোম্পানির নোটিশ এবং দুটি আইনের সংশ্লিষ্ট ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা হয়। যার শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার (৭ মে) আদালত আদেশ দিলেন।
প্রসঙ্গত, রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইনের ৩৬(১) ধারায় বলা হয়েছে, রিয়েল এস্টেট প্রকল্প বাস্তবায়নের যেকোনো পর্যায়ে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট ক্রেতা, ডেভেলপার অথবা ভূমির মালিকের মধ্যে এই আইনের ধারা ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৭, ২৮, ২৯ এবং ৩০ এ বর্ণিত অপরাধের জন্য বা তাদের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির কোনো বিধান লঙ্ঘনের জন্য মতবিরোধের সৃষ্টি হলে পক্ষগণ, প্রথমে নিজেদের মধ্যে আপস নিষ্পত্তির চেষ্টা করবেন।
(২) উপ-ধারা (১) অনুযায়ী আপসের পদক্ষেপ গ্রহণের পর যদি কোনো পক্ষের অসহযোগিতার জন্য উহা ব্যর্থ হয় তবে অপরপক্ষ বিবদমান বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সালিশ আইন, ২০০১ মোতাবেক সালিশি ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে অপরপক্ষকে নোটিশ প্রদান করবেন। (৩) উপ-ধারা (২) এর অধীন নোটিশ প্রাপক উক্ত নোটিশপ্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে নোটিশ প্রেরকের সহিত যৌথভাবে সালিশি ট্রাইব্যুনাল গঠন করবেন।
(৪) সালিশ আইন, ২০০১ এ যা কিছুই থাকুক না কেন, পক্ষগণ কর্তৃক গঠিত সালিশি ট্রাইব্যুনালের রোয়েদাদ পক্ষগণ এবং তাহাদের মাধ্যমে বা অধীনে দাবিদার যেকোনো ব্যক্তির ওপর বাধ্যকর হবে এবং উহার বিরুদ্ধে কোনো আদালতে কোনো পক্ষের আপত্তি উত্থাপনের অধিকার থাকবে না। (৫) উপ-ধারা (৩) মোতাবেক পক্ষগণ সালিশি ট্রাইব্যুনাল গঠনে ব্যর্থ হলে যেকোনো পক্ষ বিবদমান বিষয়টি বিচারের জন্য এই আইনের অধীন উপযুক্ত আদালতে মামলা করতে পারবেন।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ২১(ক) ধারায় বলা হয়েছে, যে চুক্তির কার্যসম্পাদন না করলে ক্ষতিপূরণ দ্বারা পর্যাপ্ত প্রতিকার হয়, সে চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকরী করা যাবে না।