আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বর্তমান জরাজীর্ণ পুরনো ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ১৫তলাবিশিষ্ট অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে বলে সূত্রে জানা গেছে। তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে নিশ্চিত করেননি।
বিল্ডিং তৈরির নকশা, ওয়ার্কপারমিটসহ (ওয়ার্ক ওয়ার্ডার) সব কাজ শেষ করে এখন শুধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবনের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে কাজ শুরু করা হবে। আইন ও বিচার বিভাগ এবং গণপূর্ত অধিদফতর ২০২১ সাল নাগাদ এটি তৈরির কাজ বাস্তবায়ন করবে।
নতুনভাবে নির্মিত ওই ভবনে বার কাউন্সিলের জন্য নিজস্ব পরীক্ষার হল, ট্রেনিং রুম, প্রযুক্তিনির্ভর লাইব্রেরি, বৃহৎ পরিসরে ক্যান্টিন, আধুনিক সেমিনার কক্ষ, জিমনেশিয়াম, আলাদা আলাদা কক্ষ এবং নির্বাচিত সদস্যদের পৃথক দফতর, আধুনিক ক্লাব ও অত্যাধুনিক রেস্ট হাউসসহ সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা থাকবে বলে জানা গেছে।
প্রকল্পের আওতায় ৮৩৬ দশমিক ১২ বর্গ মিটার প্লিন্থ এরিয়া বিশিষ্ট ১৫তলা ভিতের উপর দুটি বেসমেন্টেসহ ভবন নির্মাণ হবে। ১৫তলা ভবনের মোট আয়তন হবে ১৫ হাজার ৬৪৪ দশমিক ৩৭ বর্গ মিটার। এর বাইরে ১৯৩ দশমিক ৬০ বর্গ মিটার সীমানা প্রাচীর, একটি ১ হাজার কেবিএ সব স্টেশন, তিনটি লিফট, ৩০০ টন সিম্বল টাইপ এসি, একটি গাড়ি ও আসবাবপত্র ক্রয় করা হবে। একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ বিদ্যুতায়ন, বহিঃপানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন, গ্যাস সংযোগ, ভূমি উন্নয়ন, কম্বাউন্ড ড্রেন, অভ্যন্তরীণ রাস্তাসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বার কাউন্সিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুরনো ভবন ভেঙে ইট পাথর বালি সরানোর কাজ চলছে। এবার নতুন মজবুত ও টেকসই ভবন তৈরির কাজ শুরু করা হবে। নতুনভাবে তৈরি করা ভবনে বার কাউন্সিলের শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য আলাদা কক্ষ থাকবে। ইতোমধ্যে ভবন তৈরির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করার জন্য বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
এর আগে ২০১৬ সালে ভবনের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরপর স্থাপত্য, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরের প্রায় সব প্রক্রিয়া শেষ করে এখন নিয়ম অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর নির্ধারণ করা দিনে কাজের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধনের পরপরই বার কাউন্সিলের আধুনিক বহুতল ভবন তৈরির কাজ দ্রুত শুরু হবে।
এ বিষয়ে বার কাউন্সিলের ফিন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী অ্যাডভোকেট শ.ম. রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বার কাউন্সিলের নতুন ও আধুনিক ভবন তৈরির কাজ দ্রুত সময়ের মধ্যেই শুরু হবে। ওয়ার্ক ওয়ার্ডারও হয়ে গেছে। এখন শুধু প্রধানমন্ত্রী তারিখ ঠিক করে দেবেন। সেই দিনই ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করে ভবন তৈরির কাজ শুরু করা হবে। সবকিছুই প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এখন শুধু অপেক্ষার পালা কবে আসছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
এর আগে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিবের কাছে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের পরিচালক মো. নুরুল আলম। চিঠিটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০১৬ সালের ৮ আগস্ট দেয়া হয় আইন মন্ত্রণালয়ের সচিবকে। এ ভবন নির্মাণে অনেক কৌশলগত দিক আগেই প্রস্তুত ছিল।
ভবনটি ১৫তলা বিশিষ্ট হবে বলেও চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে। শ.ম. রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘বার কাউন্সিলের ভেঙ্গে ফেলা ভবনটি নাজুক ও ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে নির্মাণের জন্য দাবি জানিয়ে আসছিলেন আইনজীবীরা। বিগত বার কাউন্সিল নির্বাচনে ভবন নির্মাণের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি ছিল সরকার সমর্থিত আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের।
এরপর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত বার কাউন্সিল নির্বাচনে আওয়ামীপন্থীরা ব্যাপক জয় পায়। বিজয়ী হওয়ার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ১৫তলা ভবন নির্মাণের জন্য সুপ্রিম কোর্টের পরিত্যক্ত ১০০ শতাংশ জমি ও ভবন নির্মাণের জন্য (অর্থ) টাকা দাবি করা হয়। সেই দাবি এবার বাস্তবায়ন হচ্ছে। এরপরই সরকারের সংশ্লিষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ১১৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।
শ. ম. রেজাউল করিম আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা, যোগ্য পিতার যোগ্য কন্যা। বার কাউন্সিল ও বেনাভোলেন্ট ফান্ড বঙ্গবন্ধুর হাতে তৈরি। তার কন্যা দিচ্ছেন বহুতল ভবন। দেশের অর্ধ কোটি (৫০ হাজার) আইনজীবীকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। নির্বাচনে এটা ছিল অন্যতম অঙ্গীকার। একে একে সবই পূর্ণ হবে।
বার কাউন্সিলের মানবাধিকার কমিটির চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না গণমাধ্যমকে জানান, আমাদের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতিতে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের জন্য ১৫তলা ভবন নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এরপর নিয়ম অনুযায়ী ভবনের নকশা তৈরি করেছেন একজন (নকশাকারক) ইঞ্জিনিয়ার। এখন এই নকশা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে আইন মন্ত্রণালয়, এরপরে প্রধান বিচারপতির অনুমোদনসহ সব প্রক্রিয়া শেষ এখন খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই ভবন তৈরির কাজ শুরু হবে।
বার কাউন্সিলের মানবাধিকার ও লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান মো. মোখলেসুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পুরাতন ভবন ভাঙ্গার কাজ শেষ করে ইট বালু সুরকি সরানোর কাজ চলছে। বিশ্বের উন্নত দেশের বার কাউন্সিলের মতো একটি সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে ১৫তলা বিশিষ্ট বহুতল ভবণ খুব শিগগিরই তৈরি হবে। তবে, আইনজীবীকে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া কথা অনুযায়ী তিনি এর ভিত্তি প্রস্তর করতে রাজী হয়েছেন। তিনি সময় দিলেই আইনজীবীদের জন্য আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর বহুতল ভবনের কাজ শুরু হবে।’
বার কাউন্সিলের ডেপুটি সচিব আফজাল-উর-রহমান গণমাধ্যমকে জানান, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আধুনিক ও বহুতল বিশিষ্ট ১৫তলা ভবনে আইনজীবীদের জন্য থাকবে সেমিনার হল যেখানে পাঁচশত আইনজীবী একত্রে বসে প্রশিক্ষণে অংশ নিতে পারবেন। এ ছাড়া থাকছে লাইব্রেরি, ক্লাবসহ আরও আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজন।
শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা পরীক্ষার হলের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলেও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, বর্তমান ভেঙ্গে ফেলা বার কাউন্সিলের পাঁচতলা বিশিষ্ট ভবনটি ছিল প্রায় ৪০ বছরের পুরাতন। সারা দেশের প্রায় ৫০ হাজার আইনজীবীর জন্য এই ভবনটি পর্যাপ্ত স্থান সঙ্কুলান ছিল না।
এ কারণেই বার কাউন্সিল ভবন নির্মাণে সাধারণ আইনজীবীসহ আইনজীবী নেতারা দাবি জানিয়ে আসছিল সরকারের কাছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদনের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বর্তমান ভবনের জায়গায় বহুতল ভবন নির্মাণে বরাদ্দ ১১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকার প্রস্তাব ছিল।
সূত্র আরও জানায়, দেশের ৫০ হাজারেরও বেশি আইনজীবীর একমাত্র লাইসেন্সিং ও রেগুলেটরি বডির একটি আধুনিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা জরুরি। এখানে বিল্ডিং তৈরির কাজ সম্পন্ন হলে বার কাউন্সিলের আইনজীবী ও বিচারকদের জন্য সহায়ক কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত হবে। এ উদ্দেশ্যেই প্রকল্পটির প্রস্তাব করেছে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। সূত্র: জাগোনিউজ