বাদী-সাক্ষীদের অস্তিত্ব নেই, জেল খেটেছেন আসামি

বাদী ও সাক্ষীদের অস্তিত্ব নেই, কিন্তু আসামি খেটেছেন জেল। আইনজীবীরা বলছেন, এমন ঘটনাই ঘটেছে বরিশালের সাজ্জাদুল হকের (৩৫) ক্ষেত্রে। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে দায়ের হওয়া যৌতুকের এক মামলায় তিনি আট দিন কারাবাস করেন।

সাজ্জাদুল হক বরিশাল নগরের একটি নার্সিং ইনস্টিটিউটের পরিচালক। পাশাপাশি তিনি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইংরেজি সাহিত্যের স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। গত ১৫ এপ্রিল বরিশাল কোতোয়ালি থানা-পুলিশ তাঁকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে। পরে ২০ এপ্রিল তিনি ঢাকার ওই আদালত থেকে জামিন পান। কারাগার থেকে তাঁর মুক্তি মেলে ২৩ এপ্রিল।

গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) সাজ্জাদুলের এই মামলার ওপর শুনানি ছিল। কিন্তু বাদী ও তাঁর আইনজীবীপক্ষের কেউই আদালতে উপস্থিত হননি। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবীর দেওয়া তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আদালত বলেন, মামলাটি বানোয়াট। এ জন্য আসামিকে স্থায়ী জামিন দেওয়া হয়।

ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মোহাম্মাদ ফোরকান মিয়া বলেছেন, বৃহস্পতিবার আদালত আসামিপক্ষকে বলেছেন, এই মামলা মিথ্যা, বানোয়াট। আগামী ধার্য তারিখে (২৪ জুন) মামলার চার্জ শুনানি হবে। একই সঙ্গে এ মামলার বাদীর বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পাশাপাশি আইনজীবী ও কাজীকে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছেন।

সাজ্জাদুলের আইনজীবী মাগফুর রহমান শেখ বলেন, মামলাটির পরবর্তী ধার্য তারিখ ছিল গত বৃহস্পতিবার। ওই দিন বাদী ও তাঁর আইনজীবী কেউই আদালতে হাজির হননি। তাঁরা ওই দিন মামলাটির কাগজপত্র যে ভুয়া, তার প্রমাণাদি আদালতে পেশ করলে বিচারক সাজ্জাদুলকে এই মামলায় স্থায়ী জামিন দেন এবং মামলার বাদীর বিরুদ্ধে অজামিনযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তিনি আরও বলেন, তাঁর সঙ্গে বাদীপক্ষের আইনজীবীর কথা হয়েছে। ওই আইনজীবী জানিয়েছেন, এই মামলা সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তাঁর যে ঠিকানা ও ফোন নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে, তাও সঠিক নয়।

আদালত সূত্র জানায়, ঢাকার কেরানীগঞ্জের আরশিনগর এলাকার রুনা (২৬) পরিচয়দানকারী এক নারী সাজ্জাদুলের দ্বিতীয় স্ত্রী দাবি করে গত ১১ মার্চ ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে-৪ ওই যৌতুক মামলা করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, এক লাখ টাকা যৌতুক দিতে না পারায় সাজ্জাদ ওই নারীকে নির্যাতন করেন। আদালতে যে বিবাহ নিবন্ধন নথি দাখিল করা হয়, তাতে উল্লেখ আছে, ২০১৫ সালের ১০ মার্চ সাজ্জাদ ও রুনার বিয়ে হয়। রাজধানীর লালমাটিয়ার কাজী গোলাম কিবরিয়া তাঁদের এই বিবাহ নিবন্ধন করেন।

সাজ্জাদুল বলেন, ‘আমার স্ত্রী এবং ছয় বছরের ছেলে রয়েছে। এমন একটি ভুয়া, জঘন্য মামলায় অকারণে আট দিন জেল খাটার পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। স্ত্রী, সন্তান, পরিবার কিংবা সমাজের কাছে আমি কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি সেটা বোঝাতে পারব না। আমার সঙ্গে কেন এমনটা করা হলো কিছুই বুঝতে পারছি না’।

সাজ্জাদুল

সাজ্জাদ বলেন, গ্রেপ্তার হওয়ার সময় তিনি এই মামলার ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। পরে তাঁর বাবা ঢাকায় গিয়ে আদালতে খোঁজ নিয়ে এ বিষয়ে জানতে পারেন। এরপর আদালত থেকে মামলার কাগজপত্র তুলে তাদের অনুসন্ধান শুরু হয়। এতে দেখা যায়, মামলায় বাদী ও সাক্ষীদের যে নাম-ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে, তার কোনো হদিস নেই। এমনকি মামলার বাদীর আইনজীবী খায়রুল আমিনের মুঠোফোন নম্বর এবং যে ঠিকানা উল্লেখ করেছেন, তা–ও ভুয়া।

সাজ্জাদুল আরও বলেন, ২০১৫ সালে তাঁর বাবা মাসুদুল হকের বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে একইভাবে একটি যৌতুক ও নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করা হয়েছিল। আদালত ওই মামলায় তাঁর বাবার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু তিনি তা জানতে পেরে আগেই জামিন নেন।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরশেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, কোনো ব্যক্তিকে এ ধরনের মামলা করে হয়রানি করা জঘন্য অপরাধ। এমন ভুয়া মামলায় হয়রানির শিকার হওয়া ব্যক্তি রাষ্ট্র থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার অধিকার রাখেন। পাশাপাশি কে এই মামলা দায়ের করেছে এবং এর পেছনে কারা আছে, তা শনাক্ত করে ফৌজদারি মামলা করা উচিত। সূত্র : প্রথম আলো