সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচ – এর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষসহ তার দুই সহযোগীকে দীর্ঘ ১১ঘন্টা থানায় আটক রেখে হয়রানির অভিযোগে বরিশালের গৌরনদী মডেল থানার ওসি গোলাম সরোয়ারের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি এফ. আর. এম নাজমুল হাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের দ্বৈত বেঞ্চ গত বৃহস্পতিবার (২৩ মে) এ রুল জারি করেন।
রুলে দেশের একজন প্রথম শ্রেণীর নাগরিক, সিনিয়র আইনজীবী, মানবাধিকার সংগঠক ও তার দুই সহযোগীকে বিনা দোষে দীর্ঘক্ষণ থানায় আটক রেখে কেন হয়রানী করা হয়েছে তা জানতে চেয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে হয়রানির বিষয়টি তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে আদালতকে অবহিত করার জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) প্রতি নির্দেশ প্রদান করেছেন হাইকোর্ট।
এর আগে, হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি দায়ের করেন হয়রানির শিকার আইনজীবী রবীন্দ্র ঘোষ। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের আইজিপি, ডিআইজি বরিশাল, বরিশালের জেলা প্রশাসক ও বরিশালের পুলিশ সুপারকে বিবাদী করা হয়।
জানা গেছে, গত ১ মে বুধবার বেলা ১১টা থেকে ওই দিন রাত ১০ পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১১ ঘণ্টা ধরে বরিশালের গৌরনদী মডেল থানায় আটক ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ও বাংলাদেশ মাইনরিটি ওয়াচ-এর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট রবীন্দ্র ঘোষ ও তার অপর দুই সহযোগী। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যস্থতায় ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা মুক্তি পান।
হাইকোর্টে দায়েরকৃত ২৩ পৃষ্ঠার রিট আবেদনে অ্যাডভোকেট রবীন্দ্রনাথ ঘোষ উল্লেখ করেন, গৌরনদী উপজেলার খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের মাগুরা গ্রামের মাইনারটি পরিবারের স্কুলছাত্র সৌরভ মন্ডল (১০) হত্যাকাণ্ড ও সম্প্রতি হিন্দু সম্প্রদায়ের কয়েকটি মন্দির ভাঙ্গার ঘটনার সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে গত ১ মে বুধবার বেলা ১১টার দিকে তিনি গৌরনদী মডেল থানায় যান।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন মানবাধিকার সংগঠন মাইনরিটি ওয়াচ-এর অপর দুই সদস্য দিলিপ কুমার রায় ও রসরাজ চৌধুরী। যাওয়ার আগে তারা ওসির সঙ্গে মোবাইল ফোনে আলাপ করে যান। ওসিকে গৌরনদীতে মাইনরিটি সম্প্রদায়ের মন্দির ভাঙাসহ নানাবিধ সমস্যার কথা জিজ্ঞাসা করতেই তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। ক্ষেপে গিয়ে তিনি বলেন, আমি কারো চাকর নই। এই বলে তিনি আমাদের তিনজনের মোবাইল ও ক্যামেরা কেড়ে নেন।
তিনি আরো জানান, ওসির নির্দেশে এএসআই সোহাগ আমাদের ধাক্কাতে ধাক্কাতে ওসির রুম থেকে বের করে ওসি (তদন্ত)’র রুমে নিয়ে যান। সেখানে দীর্ঘক্ষণ আমাদের আটক রাখা হয়। এ সময় আমাদেরকে কোনো খাবার পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। পরবর্তীতে গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুর রব হাওলাদার, বরিশাল জেলা পুলিশের অপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রাকিব হোসেন ও গৌরনদীর চাঁদশী ইউপি চেয়ারম্যান কৃষ্ণকান্ত দে’র মধ্যস্থতায় ওইদিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে আমাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়।