অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ:
আপনাকে যদি একটা সিলেবাস দিয়ে বলা হয় এটার ওপর লিখিত পরীক্ষা হবে, আপনি এক ফু দিয়ে উড়িয়ে দিতে পারবেন, কিন্তু যদি বলা হয় – এমসিকিউ নেওয়া হবে, তখন বুকের ভেতর ধকধক শব্দ কান পাতলেই শোনা যাবে সম্ভবত! লিখিত পরীক্ষায় সিলেবাস অনুযায়ী বিস্তারিত ধারণা নিয়ে সম্ভাব্য প্রশ্ন তালিকা তৈরি করে পড়ে নিলেই চলে, কিন্তু এমসিকিউ পরীক্ষায় তা নয়; সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিষয় ওলটপালট করে পড়তে হয়। কাজটা পরিশ্রমসাধ্য। তো, বার কাউন্সিলের অ্যাডভোকেট তালিকাভুক্তির এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য কিভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে – এ সম্পর্কে সবারই একটা কমন স্টেজ পার হতে হয়; সবাই সিলেবাস দেখে, বইটা হাতে নিয়ে ওলটপালট করে একটা সম্যক ধারণা নেবার চেষ্টা করে এবং ডিফাইন করে যে, কী কী পড়বে আর কী কী বাদ দেবে। কেউ বই ঘাটতে গেলে অথৈ সাগরে পড়ে যায়, কেউ কেউ নিজের মতো করে এভারেস্ট জয় করে ফেলার আনন্দ পায়; আবিষ্কার করে ফেলে যে, এই প্রস্তুতি কিভাবে নেওয়া যাবে নিয়মতান্ত্রিক ও সহজ পন্থায়। যারা সেই সাগরে ডুবুডুবু অবস্থায় আছেন অথবা যারা নিজের মতো করে গুছিয়ে নিতে পেরেছেন তাদের উভয়ের জন্যই এই নিবন্ধটি একটা গাইডলাইনের মতো। বারের পরীক্ষা বিষয়ে এই নিবন্ধটাকে একটা প্রায় পূর্ণাঙ্গ নিবন্ধও বলা যেতে পারে। আসুন, আমরা ভেঙে ভেঙে টপিক ধরে ধরে এগোই।
বার কাউন্সিলের পরীক্ষায় কী আছে, কী নেই?
একজন আইনজীবী হিসেবে আপনি আদালতে বিচারকের সামনে ম্যুভ করার জন্য যোগ্য কিনা, বার কাউন্সিল সেটাই যাচাই করে তার পরীক্ষায়। ১০০ নম্বরের এমসিকিউ, ১০০ নম্বরের লিখিত এবং ৫০ নম্বরের ভাইভা পরীক্ষা – এই তিনটি স্তরে যাচাই করে বার কাউন্সিল। বাংলাদেশে একটি আদালতে বিচারকের সামনে ম্যুভ করা বা একজন বিচারপ্রার্থীর ফরিয়াদ শোনা অথবা কারো আইনী প্রতিকার পাইয়ে দেওয়ার জন্য কী কী জানা লাগে? যেগুলো খুবই বেসিক – যেমন ফৌজদারি মামলা কী, আদালতের প্রক্রিয়া কী, দেওয়ানি মামলার প্রকৃতি, প্রতিকার পদ্ধতি ইত্যাদি জানা প্রয়োজন। সেই অনুযায়ীই বার কাউন্সিল সিলেবাস তৈরি করেছে। ফৌজদারি কার্যবিধি, দণ্ডবিধি, দেওয়ানি কার্যবিধি, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, সাক্ষ্য আইন, তামাদি আইন এবং বার কাউন্সিল অর্ডার-রুলস – এই ৭টি কোর্স রয়েছে এই পরীক্ষার জন্য। এক নজরে নামগুলো দেখার পর মনে হতে পারে কী বিশাল পড়াশোনা, আর কী বিশাল তার সিলেবাসের ব্যাপ্তি!
কিন্তু আপনি বিষয়টাকে উল্টো করে ভাবতে পারেন। একটি গ্লাসে অর্ধেক পানিকে কেউ হাফ গ্লাস খালি বলে, কেউ হাফ গ্লাস ভর্তি পানি বলে। দুটোই ঠিক। কিন্তু আপনি কতটা পজিটিভলি দেখবেন কোন সিচুয়েশনে সেটাই ম্যাটার করবে। তো, উল্টো করে ভাবুন ব্যাপারটা যে, বাংলাদেশে আইন আছে প্রায় ১২০০। তার ভেতর অনার্স বা পাস কোর্স বা এলএলএম সব মিলিয়ে ৫০-৬০ টির বেশি কোর্স আপনাকে পড়তে হয়নি। সেখান থেকেও কমিয়ে মাত্র ৭টি কোর্স পড়তে হবে এডভোকেট হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য! উপরন্তু সেটাও আলাদা সিলেবাস করে নির্দিষ্ট করা আছে। তার মানে এটা আসলে আপনার জন্য কঠিন বিষয় নয় মোটেও। সব কোর্সের সব কিছুই পুঙ্খানুপুঙ্খ গুরুত্ব দিয়ে পড়ার দরকার নেই। আবার তুলনামূলক পর্যালোচনা করে দেখলেও আপনি স্বস্তি পাবেন। ভাবুনতো একবার, জুডিসিয়ারির সিলেবাসটা কত্তো বড়!? আইনের সংখ্যার দিক থেকে, সিলেবাস এবং পরীক্ষার মান সব দিক থেকেই জুডিসিয়ারির পরীক্ষা রীতিমতো একটা অগ্নিপরীক্ষার মতো ব্যাপার। সেই তুলনায় বার এক্সাম এক্কেবারে নাথিং। এমনকি বার কাউন্সিল সিলেবাস প্রকৃতপক্ষে অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। এই সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ধরে প্র্রস্তুতি নেওয়া ফলে অত্যন্ত সহজ ব্যাপার। কিন্তু এই সহজ ব্যাপারও সবসময় সবার জন্য সহজ হয় না। এর জন্য প্রয়োজন পড়ে অধ্যবসায়, সময়, শ্রম এবং মনোযোগ।
প্রস্তুতি নিতে প্রধান বাধাটা কী?
যে কেউ চাইলেই বার কাউন্সিলের স্বল্প সিলেবাস শেষ করে ফেলতে পারে। এটা অসম্ভব নয়। কিন্তু সবাই তো আর একই বা সমযোগ্যতার হয় না। এভারেজ এবং এমনকি তথাকথিত ভালো ছাত্র-ছাত্রীরাও হিমশিম খেয়ে যান প্র্রস্তুতি নিতে। আর এর পেছনে প্রধানভাবে দুইটি কারণ দায়ী –
১. মূল বেয়ার এ্যাক্ট বা মূল ধারা না পড়ে ধারার সারমর্মভিত্তিক পড়াশোনা করা
২. পুরো সিলেবাস সম্পর্কে সামগ্রিক ধারণা না থাকা এবং চিহ্নিত করতে না পারা যে, কী, কোনভাবে, কতটা গুরুত্বের সাথে পড়তে হবে।
মানে, প্রপার গাইডলাইনের অভাব থাকে। পড়বেন তো আপনি নিজে, আপনার পড়াতো আর পাড়া-পড়শী বা অন্য কেউ করে দেবেনা, কিন্তু গাইডলাইনটা অন্যের কাছ থেকে নিতে হবে। অন্য বলতে আপনার সহপাঠী বন্ধু-বান্ধবী, শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ, কোচিং সেন্টার, বই লেখক – এদের কাছ থেকে। তো, এই গাইডলাইন আপনি অন্যের কাছ থেকে সংগ্রহ করবেন, কিন্তু নিজেই এটার ওপর মাতব্বরি করার ক্ষমতা অর্জন করতে হবে। জগতে প্রতিটি মানুষই স্বতন্ত্র। তাদের প্রতিটি কাজেরই যেমন, তেমনি পড়শোনা আত্মস্থ করার পদ্ধতিও ভিন্ন ভিন্ন। প্রত্যেকেরই নিজস্ব স্টাইল থাকে। আপনার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী আপনার নিজেকেই বাছাই করতে হবে, অন্যের কী কী পরামর্শ আপনি নেবেন আর কী কী পরামর্শ আপনি নেবেন না। বই আর সিলেবাসের ওপর নিজের দখল তৈরি করা বা গাইডলাইনটাকে নিজের মতো করে সাজিয়ে নেয়ার সমস্যাতেই বেশিরভাগ শিক্ষার্থী থাকেন। এই পুরো নিবন্ধটা পড়ার পরে মনে হয় সেই সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। কারণ, এই প্রবন্ধটা আসলে কিভাবে নিজেই নিজের মাতব্বর হবেন, সেই বিষয়ে! আসেন, আরেকটু গভীরে ঢুকি।
বার কাউন্সিলের এমসিকিউ পরীক্ষার বৈশিষ্ট্য
উপরোক্ত উপশিরোনামে আলোচনা করার কোনো প্রয়োজন পড়তো না যদি বার কাউন্সিল তার প্রতিশ্রুত কথা ঠিকঠাক রাখতো। বার কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ ভুল করে হোক আর ইচ্ছাকৃতই হোক, তারা প্রায়ই তাদের ঘোষণা বা সিলেবাসে উল্লিখিত মান বণ্টন অনুযায়ী প্রশ্নপত্র তৈরি করেন না। এই যেমন, আমরা জানি যে, বার কাউন্সিল অর্ডার ও রুলস অংশ থেকে ১০০টি এমসিকিউ প্রশ্নের ভেতরে ৫টি প্রশ্ন বরাদ্দ থাকলেও ২০১৭ সালের পরীক্ষায় ১০টি প্রশ্ন দিয়েছিলো। ফলে অন্য কোনো না কোনো অংশ থেকে ৫টি প্রশ্ন কম করেছিলো। হয়তো উক্ত অংশ থেকে ১০টি প্রশ্ন করায় অনেকেই বিষয়টি চেপে গেছেন, কোনো বিক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেননি – কারণ এই অংশ থেকে প্রশ্নগুলো সাধারণত খুবই সহজ হয়ে থাকে। কিন্তু, এটি একটি প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতারই প্রকাশ ঘটায়। যা বলা হবে, যা উল্লেখ থাকবে কেন তার ব্যত্যয় ঘটাতে হবে? এটি দুঃখজনক এবং একইসাথে শংকারও বিষয় পরীক্ষার্থীদের জন্য।
তো, তারও আগের কয়েকটি পরীক্ষাতেও প্রায় একইরকমের সমস্যা ছিলো। উদাহরণ বাড়িয়ে লেখাটিকে দীর্ঘ করতে চাই না। মূল কথা হলো – বার কাউন্সিল এমসিকিউ পরীক্ষায় অনেক অপ্রত্যাশিত ঘটনা হাজির হয়ে যেতে পারে। এমনটাই হয়ে আসছে। যেমন, ২০১৭ সালের পরীক্ষায় ৫৪টি ধারাভিত্তিক প্রশ্ন এসেছিলো। এতো সংখ্যক ধারাভিত্তিক এমসিকিউ প্রশ্ন প্রায় কেউই আশা করেননি। এমনকি প্রশ্নের মানও ছিলো তুলনামূলক ভালো। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে এতো কঠিন এমসিকিউ পরীক্ষা এই প্রথম হলো। সামনের দিনে এমসিকিউ পরীক্ষা আরো কঠিন হবে এটা বলাই বাহুল্য। বাংলাদেশের সকল পাবলিক পরীক্ষাই দিনে দিনে কঠিনতর ও আরো মানসম্মত হচ্ছে। ফলে বার কাউন্সিলের পরীক্ষার জন্যও এখন আর সেই আগের দিন নেই। পরীক্ষার্থীদের প্রস্তুতিও খুব ভালোভাবে নিতে হবে, না হলে এমসিকিউ পরীক্ষায় পাশ করা কঠিন হয়ে পড়বে।
সিলেবাসকে ভালোবাসুন, আপন করে নিন
এতো কিছু বাদ দিয়ে সিলেবাসকে ভালোবাসতে হবে? আপন করে নিতে হবে?? জ্বি, ব্রাদার্স এন্ড সিস্টার্স! এডভোকেট হবার বিষয়ে সিরিয়াস হইলে, তাই-ই করতে হবে। কিন্তু সিলেবাসকে ভালোবাসার পথ কি?
পথটা হলো সিলেবাসের একটা হার্ড কপি প্রিন্ট করে হাতে নেন। এবার, ধরা যাক, দণ্ডবিধির মূল আইনের বইটি নিলেন। সূচিপত্র সামনে মেলে ধরে সিলেবাস থেকে বিষয়বস্তুগুলো মিলিয়ে নিয়ে সিলেবাসের হার্ড কপিতে ও মূল বইয়ে উভয় জায়গায় দাগিয়ে রাখলেন যে, সিলেবাসে উল্লিখিত বিষয়গুলো কোন কোন ধারা বা অধ্যায়ের সাথে সম্পর্কিত। দাগানো শেষ হয়ে গেলে উক্ত কোর্সটির প্রতিটি অধ্যায়ের পাতা উল্টিয়ে উল্টিয়ে একটা ভাসাভাসা ধারণা নিন যে, কোনটিতে কোন বিষয়ের আলোচনা আছে। সূচিপত্র ও সিলেবাস বারংবার দেখতে থাকুন যতক্ষণ না পর্যন্ত একটি কোর্সে কী কী বিষয় সম্পর্কিত ও তা কোথায় কোথায় আছে সে সম্পর্কে মিনিমাম ধারণা তৈরি না হয়।
এই যে, সিলেবাসের সাথে একটি কোর্সের বিষয়বস্তুগুলোর বা সূচিপত্রের সংযোগ ঘটাতে পারলেন বা অন্তত সংযোগ ঘটানোর চেষ্টা করলেন সেটাই আপনাকে আপনার পড়া শুরু করার একটা পথ করে দেবে মসৃণভাবে। সিলেবাসের সাথে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী এই সংযোগটি ঘটাতে পারেন না, ফলত আইনের গাছের আঙ্গুর টক লাগতে থাকে তাদের। আর যারা সংযোগ ঘটাতে পারলেন তাদের কাছে আইনের আঙ্গুরের চেয়ে মিষ্টি কোনো কিছু নাই।
সো, সিলেবাসকে ভালোবাসুন। সিলেবাস, সূচিপত্র আর স্ব (নিজের) এই তিনের মিলমিশে তৈরি করুন আপনার স্বপ্ন যাত্রা!
এভাবে নিজে নিজে যদি সিলেবাস ও বই সম্পর্কে একটা প্রয়োজনীয় ছক বা তালিকা করে নিতে পারেন, তাহলে আপনি নিজেই নিজের সকল প্র্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবেন। এর জন্য কোচিং সেন্টারে যাবার কোনো প্রয়োজন হবে না সম্ভবত। আর এই গাইডলাইন তৈরিতে যদি অক্ষম হোন তবে কোচিং সেন্টার বা অনলাইন অথবা অন্য কোনো বিশেষজ্ঞ থেকে পরামর্শ নেওয়া যেতেই পারে।
পরীক্ষার্থীর রকমফের : আপনার অবস্থান কোথায়?
জগতে নাকি ৮২ রকমের মানুষ আছে। অনেকে কথাটাকে এভাবে বলেন – জগতে ৮২ রকমের পাগল আছে। আসলে মানুষ অনেক বৈচিত্রময়। প্রত্যেক মানুষই আলাদা। তো, পরীক্ষার্থীদের জগত ঘাটলেও অনেক বিচিত্র কিসিমের পরীক্ষার্থী পাওয়া যায়। সবাই আমাদের আলোচ্য বা মাথাব্যাথার কারণ নয়। আমরা প্রধানত দুই ধরনের পরীক্ষার্থী দেখি। এদের একদল হাজারে হাজারে মডেল টেস্ট দিতে থাকে! মূল ধারা পড়ার কিন্তু আগ্রহ খুব কম, যেখানেই মডেল টেস্ট পায় ঝাঁপিয়ে পড়ে! বই, অনলাইন, ফেসবুক সর্বত্রই। আরেক দল আছে, তারা প্রধানত মূল বই পড়ে এবং ধারাগুলো সম্পর্কে একটা পাকাপোক্ত রিডিং কমপ্লিট করে। তারা আবার মডেল টেস্ট বা নিজেকে যাচাই করার ক্ষেত্রে উদাসীন অনেক। এই দুই ধরনের পরীক্ষার্থীরাই বিপদে পড়ে কিন্তু। কেউ কেউ হয়তো পরীক্ষার বৈতরণী পার হতে পারে, কিন্তু বিষয়টা ঝড়ে বক মরার মতো ব্যাপার।
আপনি যদি পেশাদারি মনোভাব নিয়ে প্রায় শতভাগ নিশ্চিত করতে চান, তাহলে এই দুইয়ের ভালো একটা কম্বিনেশন দরকার। মূল ধারা যেমন বুঝতে হবে অর্থাৎ মৌলিক ও প্রাথমিক ধারণা-উপলব্ধি যেমন থাকতে হবে, তেমনি পরীক্ষার হলে পরীক্ষার মুহূর্তটির অনেক টেকনিক্যাল গুরুত্ব আছে, সেই সময়টিকে চ্যালেঞ্জ বা মোকাবেলা করার জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রার এমসিকিউ টেস্টে নিজেকে যাচাইও করতে হবে। মহান গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিসের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা উপলব্ধি ছিলো, তিনি বলেছিলেন ‘নিজেকে জানো’। তিনি বিরাট একটি দার্শনিক অর্থে কথাটি বলেছিলেন। তবে বার কাউন্সিল বা জুডিসিয়ারির পরীক্ষার্থী হিসেবে অনেক লঘু অর্থে হলেও কথাটি কাজে লাগাতে পারেন। আপনারও নিজেকে জানা দরকার আর সেই অনুযায়ী কর্মপন্থা ও কৌশল নির্ধারণ করা দরকার।
সিলেবাসের কোনটি আগে, আর কোনটি পরে পড়বেন??
যেকোনো কোর্স দিয়ে অপরিকল্পিতভাবে পড়াশোনা শুরু করা সাধারণভাবে উচিত। আমি একটা ক্রম সাজিয়ে দিলাম মতামত আকারে। ভালো ও যুক্তিযুক্ত মনে হলে ফলো করতে পারেন এটা।
১. দণ্ডবিধি
২. ফৌজদারি কার্যবিধি
৩. সাক্ষ্য আইন
৪. সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন
৫. দেওয়ানি কার্যবিধি
৬. তামাদি আইন
৭. বার কাউন্সিল অর্ডার এন্ড রুলস
সহজে বোঝা যায় দণ্ডবিধি। এটা পপুলারও বটে। ফৌজদারি বা ক্রিমিনাল বিচার ব্যবস্থার এক্কেবারে বেসিক দুইটি পাঠ হচ্ছে দণ্ডবিধি ও ফৌজদারি কার্যবিধি। দণ্ডবিধিতে ফৌজদারি বা ক্রিমিনাল অপরাধের সংজ্ঞা, শাস্তির পরিমাণসহ প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যাসমূহ হাজির করা হয়েছে। এটা তত্ত্বগত আইন। আর ফৌজদারি কার্যবিধি সেক্ষেত্রে উক্ত সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা অনুযায়ী তার প্রয়োগ ঘটায়; তথা বিচারকাজের জটিল প্রক্রিয়াসমূহ বর্ণনা করা হয়েছে সেখানে। ফলে আগে দণ্ডবিধি এবং তারপরেই ফৌজদারি কার্যবিধি পড়াটা ভালো। আর তার পরেই উচিত হলো সাক্ষ্য আইন পড়া। কেননা, একটা বিচার মূলত ও প্রধানত সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর নির্ভরশীল। সাক্ষ্যের অবিচ্ছেদ্য গুরুত্ব একেবারে ঘটনার শুরু অথবা মামলা দায়ের হওয়া থেকে শুরু করে রায়ের আগ পর্যন্ত আছে। সাক্ষ্য ফৌজদারি বা ক্রিমিনাল অপরাধের যেমন অবিচ্ছেদ্য অংশ তেমনি দেওয়ানি মামলাতেও তা সমান গুরুত্ব নিয়ে হাজির থাকে। এর পর প্রথমে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন পড়ে নেওয়া ভালো। কারণ দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা বা প্রতিকার সম্পর্কে মৌলিক নীতিসমূহের আলোচনা আছে এই আইনে। আর তার পরেই পড়া উচিত দেওয়ানি কার্যবিধি, যেখানে একটি দেওয়ানি প্রকৃতির বিষয়ের প্রতিকারের ক্ষেত্রে আদালতের পদ্ধতি কী হবে সেটা আলোচনা করা আছে। আর তামাদি আইন এবং বার কাউন্সিল এই দুটো শেষে পড়লেই চলবে।
অনেকে অবশ্য বলেন যে, সাক্ষ্য আইন, তামাদি আইন, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন এবং বার কাউন্সিল অর্ডার ও রুলস – এই ৪টি বিষয় যেহেতু তুলনায় ক্ষুদ্রতর এবং এতে ৪০ নম্বরের প্রশ্ন থাকে, সেহেতু এই কয়েকটি আগে ভালো করে পড়ে নিয়ে ৪০ এর ভেতর ৩৫ নম্বর কনফার্ম করা সহজ। অল্পের ভেতরে পাশ করার জন্য এটি একটি তুলনামূলক সহজ কৌশল হতে পারে। তবুও আমি পরামর্শ দেবো – পড়তে যেহেতু হবেই [কেননা, আপনি আইনজীবী হয়ে গেলেও সবার আগে দণ্ডবিধি ও কার্যবিধিগুলো ভালো করে না জানা থাকলে ওকালতিতে আপনি ভালো করতে পারবেন না একদমই। ফলে আইনজীবী হবার পরে কিন্তু পড়তে হবেই!], তাহলে কেন এখন থেকেই পড়াটা এগিয়ে নেবেন না? গ্যারান্টেড বা ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস থাকতে কেন আপনি লোকাল এক্সপ্রেসে যাবেন?
পড়ার বিষয়ে একটা ছোট্ট পরামর্শ আমরা অন্য একটি নিবন্ধে দিয়েছিলাম। জরুরি সেই কথাটা আবারো এখানে বলছি। আইন পড়তে গিয়ে কোনো কিছু বারবার চেষ্টা করেও না বুঝতে পারলে, সেখানে ফেভিকল আঠার মতো লেপ্টে লেগে থেকে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করবেন না। বুঝলেন না, তখন সাথে সাথে সেটা স্কিপ করবেন। পরের ধারায় চলে যান বা পরের পড়ায় ঢুকে যান। কিছু সময় গেলে, আরো কিছু ধারণা তৈরি হলে পরে, অনেক সময় দেখা যায় আগের অবোধ্য [এবং একইসাথে অবাধ্যও বটে!:)] বিষয়টা সহজেই বোঝা যায় বা উপলব্ধির ভেতর আসে। সো, অবোধ্য বিষয়টা অন্য কোনোদিন ঝিরিঝিরি হাওয়া খেতে খেতে রিল্যাক্স মুডে সলভ করে ফেলাটা বুদ্ধিমানের কাজ।
কিন্তু গাইড বই??
গাইড বই কি জরুরি? হ্যা। গাইড কিন্তু একটা না একটা রাখতেই হবে। পরীক্ষার টেকনিক্যাল মেলা দিক আছে। আগের সালের প্রশ্ন দেখা, নিজেকে নিত্য নতুন প্রশ্নে যাচাই করা বা মডেল টেস্ট দেয়া, বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে ধারণাগুলোকে পরিষ্কার-পোক্ত করা ইত্যাদি জরুরি। সেক্ষেত্রে গাইড বই অত্যন্ত কাজের, বিশেষ করে এমসিকিউ পরীক্ষার জন্যতো বটেই। এমসিকিউ এর আগেকার বইগুলো খুবই বাজে বা নিম্নমানের বই ছিলো। শত শত হাজার হাজার এমসিকিউ প্রশ্ন ঠেসে দিয়ে একেকটা বই করে ফেলেছে। প্রশ্নের সংখ্যা বাড়িয়ে বইটিকে সেরা হিসেবে প্রমাণ করতে চেয়েছে। কিন্তু প্রশ্নের মান রক্ষা করা হয়নি। কোনো আলোচনা নেই, অগোছালো, যত্ন করে শিক্ষার্থীদের উপযোগী ভাষায় রচিত না, বার এক্সামের জন্য যেটুকু প্রয়োজন তার পরিমিতি বোধের অভাব ইত্যাদি অসংখ্য অভিযোগ করা যাবে সেইসব বই সম্পর্কে। যাইহোক এটা এখন অতীত। যুগ পাল্টেছে। বর্তমানে ফিরে আসি। বর্তমানে বাজারে বেশ কয়েকজন লেখকের বেশ কোয়ালিটিসম্পন্ন বই রয়েছে। এই বইগুলোর একেকটি একেক বিশেষত্বে ভরপুর। এগুলোর মধ্যে নিজের রুচি-অভিরুচি অনযায়ী বাছাই করে আপানারা সংগ্রহ করতে পারেন।
অন্ধের হাতি দেখার গল্পটা জানেন তো? [মূল ধারায় ধাতস্থ হবার বিষয়ে কিছু কথা]
উপরে বলে আসা সমস্ত কথার সারকথা কিন্তু একটাই যে, মূল ধারা বা বেয়ার এ্যাক্ট পড়ে প্রস্তুতি নেওয়াটা সবচে ভালো। কিন্তু মূল ধারা কিভাবে পড়বেন আর কিভাবে আত্মস্থ করবেন? কিংবা এমসিকিউ পরীক্ষার উপযোগী করে কিভাবে একটি মূল ধারা পাঠ করতে হবে? এ সম্পর্কে আলোচনায় যাবার আগে আপনাদেরকে একটা গল্প বলতে চাই। হয়তো বেশিরভাগই এই গল্পটি জানেন, তবুও একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। কয়েক অন্ধ হাতি সম্পর্কে জানতে চায়। তো এক হাতির সামনে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হলো। কেউ হাতির পেট ধরলো আর বললো – হাতি হচ্ছে একটা দেওয়ালের মতো। কেউ সামনের একটি পা ধরতে পেরে বললো – হাতি আসলে একটা পিলারের মতো। কেউ হাতির শুড় ধরতে পেরে বললো এটা একটা কলাগাছের মতো। আরেকজন লেজ ধরতে পেরে বললো – আরে নাহ, হাতি হচ্ছে একটা রশির মতো, আমি ওভারশিওর! অন্য আরেকজন আরেকটা পা ধরতে পেরে বললো – না না, এটা আসলেই একটা পিলারের মতো। তো, হাতি দেখতে পিলারের মতো এই মত আরো একজন দিয়েছে। ফলে এটাকেই সবাই সত্য বলে ধরে নিলো যে, হাতি একটা পিলারের মতো। কিন্তু হাতি দেখতে তো হাতির মতোই, জলজ্যান্ত বিশাল শরীরের এক প্রাণী! হাতি পিলার না, কলাগাছও না কিংবা রশি বা দেয়ালও না। আসল হাতির সন্ধান তারা কেউই পেলো না!
তো, আইনের মূল ধারাগুলো পড়তে গেলে আমাদের অনেকেরই এই অন্ধের হাতি দেখার মতো একটা দশা হইতে পারে। এটা অস্বাভাবিক না, লজ্জা বা সংকোচেরও কিছু নেই এতে আপাতত। যারা আপনারা খুব বেশি পড়াশোনা করেননি বা সময়টাকে ঠিকঠাক ম্যানেজ করতে পারেননি, অথবা একটু নিরাসক্তভাবে এলএলবি বা এলএলএম পাড়ি দিয়েছেন শুধু পাস করার আশায় – অর্থাৎ আনন্দ সহকারে আইন পড়েননি, তাদের জন্য বার কাউন্সিলের এডভোকেট তালিকাভুক্তির পরীক্ষাটা কিন্তু এক ধরনের এসিড টেস্ট এর মতো। এইখানে এসে না পড়ে পাস করার সুযোগ নেই। এমনকি মন লাগিয়ে যদি আইন পড়ার আনন্দটা উপভোগ করতে না পারেন, তবে সেটার মানসিক চাপ আপনার বয়স বাড়িয়ে দিতে পারে। সো, সুযোগ থাকলে একটু কোমর বেঁধে নামুন না! আমরা এখানে ছোট্ট করে এমসিকিউ প্র্রস্তুতির অংশ হিসেবে কিভাবে নিজেকে মূল ধারার পাঠে খাপ খাইয়ে নেবেন আর এমসিকিউ অনুশীলন কিভাবে করবেন সে বিষয়ে কিছু বলেছি।
ধারা না বুঝে বুঝে অসংখ্য এমসিকিউ পড়াটা বুদ্ধিমানের কোনো কাজ নয়। মূল ধারা যেমন বুঝতে হবে, তেমনি এমসিকিউ চর্চা বা অনুশীলন ভালোভাবে করতে হবে। তবে কোনোকিছুই অতিরিক্ত ভালো না। সবকিছুরই একটা বয়স থাকে, সময় থাকে, ম্যাচুরিটি থাকে; এমনকি ডিক্লাইনিং এইজও থাকে। বারের পরীক্ষার্থী হিসেবে আপনাকে মনে রাখতে হবে যে, আপনি কোনো গবেষণামূলক কাজ বা পড়াশোনা করছেন না। আপনি প্র্রস্তুতি নিচ্ছেন বার কাউন্সিলের পরীক্ষার। আর বার কাউন্সিল এটাই চায় যে, সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলো সম্পর্কে সম্যক ধারণা বা বেসিক ধারণা আপনার আছে কিনা। আপনার জ্ঞানের গভীরতা যাচাই করা বার কাউন্সিলের উদ্দেশ্য নয়। ফলে গভীর জ্ঞান অর্জন করাটা আপনার এ দফায় উদ্দেশ্য নয়। লিখিত পরীক্ষায় গভীর জ্ঞানের ছটা প্রকাশ করার পর্যাপ্ত স্পেস আছে। এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য সেটা জরুরি নয়, মাইন্ড ইট।
কিন্তু, মূল ধারাগুলো সম্পর্কে একটা সম্যক ধারণা নেওয়া এবং সেটাকে এমসিকিউ পরীক্ষার জন্য সাজিয়ে নেওয়া খানিকটা পরিশ্রমের কাজ। এই পরিশ্রম করার একটা রাস্তা বা উপায় একবার ক্যাচ করতে পারলেই, পরেরগুলো জোয়ারের মতো এসে ধরা দেবে আপনার কাছে! আমরা ছোট্ট একটা উদাহরণে ঢুকতে পারি। দণ্ডবিধির ৮ম অধ্যায়ে ১৪১ থেকে ১৬০ ধারা পর্যন্ত জনগণের শান্তিবিরোধী অপরাধসমূহ প্রসঙ্গে আলোচনা আছে। এর প্রথম ধারাটি বেআইনি সমাবেশ সম্পর্কে, ধারণাটি দণ্ডবিধির অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারণা। বোল্ড আনবোল্ড, আন্ডারলাইন এসব খেয়াল করে করে পড়তে থাকুন নিচে।
“ধারা ১৪১ : বেআইনি সমাবেশ : পাঁচ বা ততোধিক সমাবেশকে ‘বেআইনী সমাবেশ’ সেক্ষেত্রেই বলা হয়, যেক্ষেত্রে উক্ত সমাবেশের ব্যক্তিদের ব্যক্তির সাধারণ লক্ষ হয় –
প্রথমত : বাংলাদেশের সরকার বা আইনসভাকে অথবা কোনো সরকারি কর্মচারীকে অনুরূপ কর্মচারীর আইনসম্মত ক্ষমতা প্রয়োগের সময় অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ অথবা অপরাধমূলক বলপ্রয়োগের হুমকি কর্তৃক ভীতি প্রদর্শন করা; কিংবা
দ্বিতীয়ত : কোনো আইনের অথবা কোনো আইনগত ব্যবস্থার কার্যকরীকরণে বাধা সৃষ্টি করা; কিংবা
তৃতীয়ত : কোনো ব্যক্তির দুষ্কর্ম বা অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ অথবা অন্যবিধ অপরাধ অনুষ্ঠিত করা; কিংবা
চতুর্থত : কোনো ব্যক্তির প্রতি অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ করে বা অপরাধমূলক বলপ্রয়োগের হুমকি প্রদর্শন করে কোনো সম্পত্তির দখল গ্রহণ করা, অথবা কোনো ব্যক্তিকে পথের অধিকার ভোগ হতে বঞ্চিত করা অথবা জল ব্যবহারের অধিকার হতে বঞ্চিত করা অথবা তাকে তার দখলে অবস্থিত অপর কোনো অশরীরী অধিকার থেকে বঞ্চিত করা অথবা কোনো অধিকার বা কল্পিত অধিকার প্রতিষ্ঠা করা; কিংবা
পঞ্চমত : অপরাধমূলক বলপ্রয়োগ করে বা অপরাধমূলক বলপ্রয়োগের হুমকি প্রদর্শন করে কোনো ব্যক্তিকে সে আইনত বাধ্য নয় এমন একটি কার্য সম্পাদনে বাধ্য করা অথবা যে কার্যটি করতে সে আইনত বাধ্য বা অধিকারী তা সম্পাদন হতে বিরত করা।
ব্যাখ্যা : যে সমাবেশ, সমাবিষ্ট হওয়াকালে বেআইনি ছিলো না, তা পরে বেআইনি সমাবেশ হতে পারে।”
মানে কমপক্ষে ৫ জন লোক। ১টি সাধারণ উদ্দেশ্য। ৫ প্রকারের অপরাধের যেকোনো একটির সংঘটিত হওয়া। ব্যস! সংক্ষেপে এটাই।
আরেকটু ইলাবোরেট করলে পাওয়া যায় – সরকারি কর্মচারীর কাজে বাধা দেওয়া, সরকারি আইন প্রয়োগে বা বাস্তবায়নে বাঁধা দেওয়া – এই দুইটি সরকার সম্পর্কিত অপরাধের কথা; তৃতীয়টিতে যেকোনো অপরাধ সংঘটিত করা এবং অপর বা শেষ দুইটিতে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে দখল বা কাউকে কোনো কিছু করাতে বাধ্য করা – এই ৫টি ক্ষেত্রের মাধ্যমে বেআইনি সমাবেশের মাধ্যমে অপরাধ সংঘটিত হতে পারে বলে উল্লেখ করা আছে এই ধারাতে। সবশেষে, ব্যাখ্যাতে বলা আছে – কোনো কাজ শুরুতে বেআইনি না থাকলেও পরে তা বেআইনি সমাবেশ হিসেবে রূপান্তর হতে পারে।
তো, উপরের ধারাটি থেকে কী কী বেসিক প্রশ্ন হতে পারে? প্রশ্ন হতে পারে –
১. বেআইনি সমাবেশের জন্য কমপক্ষে কত জন থাকতে হবে? [৫ জন]
২. বেআইনি সমাবেশ সংঘটিত হবার জন্য নিচের কোনটি থাকতে হবে? [সাধারণ উদ্দেশ্য]
৩. বেআইনি সমাবেশ দণ্ডবিধি মোতাবেক কয়টি ক্ষেত্রে সংঘটিত হতে পারে বলে উল্লেখ আছে? [৫টি ক্ষেত্রে]
এই তিনটি বেসিক প্রশ্ন করা যেতে পারে এখান থেকে। এই প্রশ্নগুলোকে আবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে করা যেতে পারে। যেমন –
১. ৬ জন মিলে একটি সাধারণ উদ্দেশ্য নিয়ে একটি গাড়ী ভাংচুর করলো। এটা কি ধরনের অপরাধ?
২. কোনো অপরাধে সাধারণ উদ্দেশ্য একই হলে নিচের কোন অপরাধটি সংঘটিত হতে পারে?
৩. ৫ জন মিলে কোনো দেশে প্রচলিত কোনো আইন কার্যকর করাকে বাঁধা সৃষ্টি করলে এটা নিচের কোন অপরাধটির আওতার ভেতর পড়ে?
৪. নিচের কোনটি সত্য? [ ১৪১ ধারার সবশেষে দেওয়া ব্যাখ্যা অংশ থেকে প্রশ্নটি করা যেতে পারে, খেয়াল করে দেখুন একবার! ]
৫. ৫ জন মিলে অপরাধমূলক অনধিকার প্রবেশ করলে সেখানে কোন ধরনের অপরাধটি সংঘটিত হবে? [ বেআইনি সমাবেশ ]
তাহলে শুধু ধারাটি মনোযোগ দিয়ে পড়লেই অনেকগুলো ভালো মানের প্রশ্নের সন্ধান আপনারা পেয়ে যাচ্ছেন। এবং কোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারাকে এইভাবে ভেঙে ভেঙে মনোযোগ দিয়ে পড়লেই বেসিক ধারণা হবে এবং খানিকটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রশ্ন করলেও আপনি সঠিকভাবেই উত্তরটা চিহ্নিত করতে পারবেন। এটুকুই যথেষ্ট। বিশ্বাস হচ্ছে না??
তাহলে বার কাউন্সিলে এই বেআইনি সমাবেশ অংশ থেকে কি প্রশ্ন এসেছিলো একবার চেক করুন। বারের পরীক্ষায় এবং জুডিসিয়ারি পরীক্ষায় মাত্র একবার করে এখানে থেকে প্রশ্ন এসেছিলো। সেটার গুণগত মানটা দেখুন।
দণ্ডবিধি অনুযায়ী বেআইনি সমাবেশ গঠনের জন্য কমপক্ষে কত জন ব্যক্তির উপস্থিতি প্রয়োজন? [ বার : ২০১২]
ক. ৩ জন খ. ৪ জন
গ. ৫ জন ঘ. ৬ জন
বেআইনি সমাবেশের জন্য ন্যূনতম কত জনের উপস্থিতি প্রয়োজন? [জুডি : ২০০৮]
ক. ৬ জন খ. ৪ জন
গ. ৫ জন ঘ. ৭ জন
অর্থাৎ, এক্কেবারে বেসিক প্রশ্ন এসেছিলো। বার কাউন্সিল আসলে এটাই জানতে চায় যে, আপনি এই বেসিক ধারণাটাই ঠিকঠাক রাখেন কিনা! নাথিং এলস।
যারা মূল ধারা পড়ার ব্যাপারে সুপার এডভান্স – তাদের জন্য একটা কেস ল দিই। দ্যাখেন।
‘বেআইনী সমাবেশের কোনো সদস্য বলপ্রয়োগ করলে তিনি তার বৈধ দখলস্থিত সম্পদ দখলে রাখার উদ্দেশ্যে করে থাকলে তা অবৈধ হবে না, তথা এরূপ সমাবেশকে অবৈধ সমাবেশ বলা যায় না। প্রত্যেক লোক তার দখলস্থিত সম্পদ হেফাজত করার অধিকার রাখে’ [Mohin Mondal Vs. The State : 15 DLR 615]
এর সহজ মানে হলো – ব্যক্তিগত সম্পদ রক্ষা করতে গিয়ে অবৈধ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হলে তা বেআইনি সমাবেশ বলেই গণ্য হবে না। সম্পদ রক্ষার ব্যক্তিগত অধিকার দণ্ডবিধি দিয়েছে ৯৬ থেকে ১০৬ পর্যন্ত ধারাগুলোতে, যা কিনা দণ্ডবিধির অন্যতম ব্যতিক্রম।
তাহলে সুপার প্র্রস্তুতিওয়ালাদের জন্য নিচের প্রশ্নের মতো একটা ক্রিটিকাল প্রশ্ন করা যেতে পারে –
নিজেদের সম্পদ রক্ষায় ৬ ভাই একত্রে বেআইনি সমাবেশে অংশগ্রহণ করলে নিচের কোন অপরাধটি হবে?
ক. অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র
খ. বেআইনি সমাবেশ
গ. বলপ্রয়োগের অপরাধ
ঘ. কোনো অপরাধ হবে না
[সঠিক উত্তর : কোনো অপরাধ হবে না; প্রশ্নে ভালো করে খেয়াল রাখতে হবে। দেখুন বলা আছে যে, ‘নিজেদের সম্পদ রক্ষায়’। অনেকেই ৬ জন মিলে একটি অপরাধহেতু সহজেই বেখেয়ালে এটির উত্তর দিয়ে বসতে পারে খ অপশনটি। ]
তো, এ রকম কঠিন বিশ্লেষণাত্মক প্রশ্ন কমই আসে। এগুলো চাইলে এড়িয়ে যেতেই পারেন। এ রকম গবেষণামূলক পড়াশোনা করতে পারলে বা সেই ক্যাপাসিটি থাকলেতো ভালোই। কিন্তু বড় গবেষক হয়ে কী লাভ যদি আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে না পারেন প্রথম দফাতেই!? ফলে গবেষক হয়েন না, বেসিক ধারণাটা ক্লিয়ার করে রাখেন। তাতে করেই কেউ ঠেকাতে পারবে না আশা করি।
অন্ধের হাতি দেখার গল্প করতে গিয়ে উপরের আলোচনা জুড়ে মাত্র ১টি ধারাকে উদাহরণ হিসেবে দেখালাম যে, আপনি কিভাবে পড়বেন একটি ধারা। এটি একটি প্রস্তাবনা। সিদ্ধান্ত, স্টাইল সবই আপনার একান্ত। তবে, এ রকম আরো ১০/১২ টি আদর্শ কিছু ধারা থেকে উদাহরণ দিলে নিশ্চয়ই আপনাদের জন্য ভালো হতো। কিন্তু এতো ভেঙেচুরে চুরমার করে করে গলিয়ে-পিষিয়ে জ্যুস বানিয়ে দেওয়াটা আমার জন্যও অত্যন্ত পরিশ্রমসাধ্য কাজ। আমাকে ক্ষমা করবেন। সমঝদারকে লিয়ে ইশারাই কাফি!
১০/১২ হাজার এমসিকিউ পড়ার দরকার আছে কি?
আগের পর্বেই বলেছি, এক ধরনের পরীক্ষার্থী আছেন, যারা হাজার হাজার এমসিকিউ পড়তে থাকেন। এটা কোনো সঠিক পদ্ধতি বলে আমরা মনে করছি না। আমরা অনেক পর্যালোচনা করে দেখেছি যে, বেসিক প্রশ্ন বা সেগুলোকে ঘুরিয়ে পেচিয়ে প্রশ্ন করলেও সর্বমোট ৩ থেকে ৪ হাজারের বেশি প্রশ্ন হওয়া সম্ভব নয়। আর মৌলিক প্রশ্ন কোনোভাবেই ২৫০০ এর বেশি হতেই পারে না! প্রশ্ন করা যায় না এমনটা নয়; কিন্তু তা কোনো কোয়ালিটি প্রশ্ন নয়। তো সেইসব আজেবাজে প্রশ্ন চর্চা করার কোনো মানে হয় না। বরং যে সময়টা হাজার হাজার প্রশ্ন পড়ছেন, সেই সময়টা বিভিন্ন গুরুত্বপর্ণ অধ্যায় বা ধারাগুলোর মূল ধারার পাঠ ভালো করে বারবার ঝালাই করুন। তাতে আপনার ভেতরের সক্ষমতা বাড়বে। বাইরের আলগা ফুটানির দরকার নেই। ওস্তাদের মার নাকি শেষ রাইতে?
তো, আমাদের পরামর্শটা হলো – যেখানেই দেখিবেন এমসিকিউ, সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়লেই সোনা পাবেন এমন নিশ্চয়তা নাই। বরং ধারা পড়ুন বেশি করে, বুঝুন, বারবার করে পড়ে উপলব্ধিটা নিয়ে নিন। আপনার এই জ্ঞান কেউ কেড়ে নিতে পারবে না, আপনারই থাকবে যা সারাজীবন কাজে লাগবে।
এমসিকিউ অনুশীলন করবেন কিভাবে?
এমসিকিউ পরীক্ষার একটা বিশেষ দিক হলো – পরীক্ষার হলে অনেক ভালো শিক্ষার্থীও বিপর্যস্ত-বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন। সময়তো মাত্র ১ ঘণ্টা! ১০০টি প্রশ্নের উত্তর। সকল পাবলিক পরীক্ষাতেই তাই। কিন্তু একবার মনোযোগ-মনোনিবেশে ছেদ ঘটলেই সেটাতে আবার ফিরে আসাটা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে বার কাউন্সিলের পরীক্ষায়। এমসিকিউ পরীক্ষা যতটা না আপনার পারা না পারার ব্যাপার বা আপনার যোগ্যতার ব্যাপার তার চেয়ে বড় ব্যাপার – এটা একটা সময়ের খেলা। এই সময়ের খেলায় এভরি সিঙ্গেল সেকেন্ড এর টাইমিং খুব গুরুত্বপূর্ণ! বাংলাদেশের ক্রিকেট টিমের ব্যাপারে খুব সহজেই দর্শক হিসেবে আমরা বলে দিতে পারি – এই মুশফিককে বাদ দেওয়া উচিত। অথবা সাকিব একটা ভুয়া, কিংবা তামিমকে নিয়ে একটা গালি দিলেন। কিন্তু সাকিব-মুশফিকদের ২২ গজের যন্ত্রণা, চাপ, নার্ভাসনেস, সিচুয়েশন – এত্তসব আপনাকে-আমাকে বোঝানো যাবে না। ‘কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে, কভূ আশীবিষে দংশেনি যারে’!! সেভাবেই পরীক্ষার হলে একটু এদিক ওদিক হলে আপনার দশাও খারাপ হতে পারে। হল থেকে বের হয়ে কত ব্যাখ্যা দিতে থাকি আমরা – এই হলো, সেই হলো, ‘বলিসনা দোস্ত! ঐ স্যারটাই আমার মেজাজ এমন খারাপ কইরা দিছে, কয় – এডমিটের ছবির সাথে নাকি আমার চেহারার মিল নাই!’ ইত্যাদি। তখনো সাকিব-মুশফিকদের যেমন আমরা বুঝিনা, আপনাকেও কেউ বুঝবে না! কাউকে বোঝাতেও পারবেন না কী কী হয়ে যাচ্ছিলো আপনার মনের আর মাথার ভেতর।
পরীক্ষার সময়টি ফলে বিশেষ একটি পারফরম্যান্স এর সময়। পরীক্ষার হলে ঢুকে টাইমিংটা কিভাবে সাজাবেন, নিজেকে মানসিকভাবে কিভাবে রেডি করবেন সে আরেকদিন একটি নিবন্ধ দেবো। সে আলাপ অন্যদিন।
পরীক্ষার্থীরা একটা জিনিস ভুল করে বসে প্রায়ই – প্রশ্নটিই ঠিকমতো পড়ে না। সবার আগে অতি সতর্কতার সাথে একটি প্রশ্ন পড়তে হবে। কী জানতে চেয়েছে এটা বুঝতে পারলে সঠিক উত্তরটা বাছাই প্রাথমিকভাবে করে নিয়ে বাকি অপশনগুলো একবার চেক করে দেখবেন। বাকিগুলো নিশ্চিত হবেন যে, এগুলো সঠিক উত্তর নয়। আবার, এও করতে পারেন যে, বই থেকে পড়ার সময় উত্তরগুলো একটা শক্ত কাগজ বা বোর্ড দিয়ে ঢেকে রেখে রেখে শুধু প্রশ্নটা পড়বেন। প্রশ্নটি পড়ে বুঝে নিয়ে একবার রিকল করুন – এটা কোন ধারা, সেই ধারার মূল কথাগুলো কী কী, ইত্যাদি। যতোটা মনে করতে পারলেন, সেতো পারলেনই, আপনার কনফিডেন্সটাকে বাড়াচ্ছেন এর মাধ্যমে। তারপর দেখুন অপশনগুলো।
একেকটা বিষয় বা কোর্স একবার করে অধ্যায় বা সিলেবাস অনুযায়ী শেষ করে নিয়ে পরে বারবার র্যানডমলি এমসিকিউ দেবেন। আবার অন্য কোর্সগুলো একেকটা করতে থাকার সময় ১৫/২০ দিন আগে পড়ে আসা অন্য একটি কোর্সের এমসিকিউ অনুশীলন করবেন কোনোরকম মূল বই রিভিশন না দিয়েই। আর সবগুলো কোর্স শেষ করার পরে ১০০ নম্বরের টেস্ট তো দিতেই থাকবেন, বলা বাহুল্য। পরীক্ষার হলের টেকনিক্যাল টাইমটা গুরুত্বপূর্ণ হবার কারণে বাস্তবে পরীক্ষা নিজে নিজেই এটেন্ড করাটা জরুরি। সে কারণে প্রয়োজনে বাসায় বসে বসে ওএমআর শিট নিয়ে নিজে নিজে অনুশীলন করতে পারেন। অথবা বিভিন্ন কোচিং সেন্টার মডেল টেস্ট দেওয়ার সুযোগ দিয়ে থাকে, সেইসবে এটেন্ড করতে পারেন কনফিডেন্স কম থাকলে। যেভাবেই হোক, পরীক্ষার আগে অন্তত ১৫/২০টা পরীক্ষা নিজে অথবা কোচিং সেন্টারে আপনাদেরকে দিতে হবে।
বাটার জুতার দাম ১৯৯৯ টাকা কেন?
বাটার জুতা [ইদানীং সব জুতার ব্রান্ডেই দেখা যায়] যারা কেনেন, তারা নিশ্চয়ই বিষয়টা খেয়াল করেছেন যে, তাদের জুতা বা স্যান্ডেলের দাম ১৩৯৯ বা ৭৯৯ বা ১৯৯৯ টাকা লেখা থাকে। ১৪০০ বা ৮০০ বা ২০০০ লিখলেইতো পারতো! এটা কেন থাকে জানেন? এটাকে মার্কেটিং এর ভাষায় সাইকোলজিক্যাল প্রাইসিং [Psychological Pricing] বলে থাকে। এটার সুবিধা হলো – আপনার মনে হবে না যে, জুতাটির দাম ২০০০ টাকা। ২০০০ টাকা আপনার কাছে মানসিকভাবে মনে হবে অনেক দাম! কিন্তু ১৯৯৯ হলে মনে হবে দামতো কমই আছে! যাই হোক, কথাটার অবতারণা করলাম এজন্য যে, প্রশ্নও এমনভাবে করা সম্ভব যে, আপনি সাইকোলজিক্যালি বিভ্রান্ত হতে পারেন। আবার সামান্য মনোযোগের সাথে সেই বিভ্রান্তি কাটিয়ে উঠলে বা বেসিক ধারণা থাকলে সহজেই আপনি এমনকি স্পেসিফিকভাবে না জানা প্রশ্নেরও উত্তর দিতে পারবেন। কারণ যেগুলো উত্তর হিসেবে সঠিক নয়, সেগুলো বাদ দিতে পারলেও সঠিক উত্তর বের করা সম্ভব।
সদ্য সমাপ্ত ২০১৭ সালের এমসিকিউ পরীক্ষার একটি প্রশ্ন দেখুন পরের পৃষ্ঠায়! মজা পাবেন।
দেওয়ানি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় কোন বিষয়ে বর্ণিত রয়েছে? [বার : ২০১৭]
ক. বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার
খ. সম্পত্তি বাটোয়ারা অথবা অংশ বিভাজন
গ. চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা
ঘ. মৃত্যুদণ্ড হ্রাসকরণ
দেওয়ানি কার্যবিধির ৫৪ ধারা বিশেষ কোনো বিখ্যাত বা বিশেষ আলোচিত কোনো ধারা নয়। অন্যদিকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা খুব বিখ্যাত বা আলোচিত একটি ধারা। সবাই ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারাটিকে বিশেষভাবে দেখে রেখেছে এবং মনে রেখেছে যেন পরীক্ষায় কোনো ভুল না হয়।
কিন্তু পরীক্ষায় দিয়ে বসলো – দেওয়ানি কার্যবিধির ৫৪ ধারা! উত্তরের অপশনগুলোর ভেতরেও ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারার বিষয়বস্তু ‘বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার’ দেওয়া আছে! এবার ঠেলা সামলান।
যারা সাইকোলজিক্যাল ফাঁদে পড়েননি, তারা সতর্কভাবেই সঠিক উত্তর দিয়েছেন যে, ‘সম্পত্তি বাটোয়ারা অথবা অংশ বিভাজন’। কিন্তু অনেকেই [এ রকম প্রচুর শিক্ষার্থী আমার নিজের চোখে দেখা আছে] সঠিকভাবে প্রশ্নটি না পড়েই ভেবেছে যে, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারার বিষয়বস্তু চেয়েছে! ফলত তারা উত্তর করে এসেছে ‘বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার’! হলের বাইরে এসে মাথার চুল ছেঁড়াছেড়ি অবস্থা!
এই প্রশ্ন থেকে আরেকটি বিষয় শেখার আছে। আপনার যদি বার কাউন্সিলের সিলেবাসের সবগুলো আইনের মূল বিষয়গুলো সম্পর্কে মিনিমাম বেসিক আইডিয়া থাকে তবুও এই উত্তর পারার কথা। ধরা যাক, ‘সম্পত্তি বাটোয়ারা অথবা অংশ বিভাজন’ সম্পর্কে দেওয়ানি কার্যবিধিতে যে বলা আছে, নির্দিষ্টভাবে তা আপনার জানা নেই। এবং জানা না থাকাটি ৯৫ ভাগ শিক্ষার্থীর জন্য স্বাভাবিক। প্রশ্নটিতে অন্যান্য অপশনগুলো ভালোভাবে লক্ষ্য করুন। দেখবেন ক, গ ও ঘ অপশনটিও ভিন্ন ভিন্ন আইনের [যথাক্রমে ফৌজদারি কার্যবিধি, সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন এবং দণ্ডবিধি] ৫৪ ধারারই বিষয়বস্তু। অর্থাৎ অন্য বিষয়গুলো জানা থাকলেই আপনি এর উত্তর সহজে পারবেন, কেননা প্রশ্নে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে দেওয়ানি কার্যবিধির ধারা সম্পর্কে। জাস্ট আ সিম্পল লজিক।
অথবা ধরুন, বলা হলো যে –
‘৬ জন লোক একটি সাধারণ উদ্দেশ্য নিয়ে বেআইনি সমাবেশ এর মাধ্যমে অন্য একজনের ফসল রক্ষায় বলপ্রয়োগ করলো তাদের অপরাধটি নিচের কোনটি?’
প্রশ্নটি ঠিকভাবে খেয়াল না করলে চোখেই হয়তো পড়বেনা যে, এখানে জমির ফসল রক্ষায় বলপ্রয়োগ করা হচ্ছে। ফলে এখানে বেআইনি সমাবেশের সকল উপাদানের উপস্থিতি থাকলেও এটা কোনো অপরাধ হবে না। অনেকেই ভুলভাবে এটার উত্তর তাড়াহুড়ো করে দিয়ে ফেলতে পারেন যে, এটা বেআইনি সমাবেশের অপরাধ। সুতরাং, সাধু সাবধান! এই বিভ্রান্তি এড়াতে সবসময়ই প্রশ্নগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। সো, ভালো করে প্রশ্ন পড়ার বিকল্প নেই। সাইকোলজিক্যাল ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না।
যথেষ্ট হয়েছে, আর নয়। ভালো থাকুন সবাই।
লেখক : আইনজীবী ও আইনের ধারাপাত – MCQ মডেল টেস্ট বুকের রচয়িতা এবং পরিচালক – juicylaw.com