৭০ মামলা মাথায় নিয়ে দিনমজুর সাইফুল গতকাল রোববার (২৬ মে) রাজশাহীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজিরা দিতে এসেছিলেন। তিনিসহ এই মামলার ১৯ আসামি উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জন নারী। পাঁচজনের কোলেই ছিল শিশুসন্তান। এই অসহায় নারী-পুরুষদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা মামলার বাদীকে মারধর করার হুমকি দিয়েছেন।
কাজ ফেলে কোলে শিশুসন্তান নিয়ে এই অসহায় মানুষগুলো মামলার হাজিরা দিতে তানোর থেকে রাজশাহীর আদালতে উপস্থিত হলেও মামলার বাদীর কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। গতকাল যে মামলায় তাঁরা হাজিরা দিতে আসেন, সেই মামলার বাদী হচ্ছেন তানোরের মুন্ডুমালা পৌর এলাকার করিমপুর চোরখোর মহল্লার হাফেজ মোড়লের ছেলে বাদেশ।
এভাবে দেশের ১২টি জেলায় সাইফুল ইসলাম, তাঁর পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক ৭০টি মামলা করা হয়েছে বলে তাঁর অভিযোগ। একই সঙ্গে তিনটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার খবর শুনে সাইফুল ইসলামের বড় ভাই তইফুর রহমান ওরফে টুটুল ১৫ মে মারা গেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, দিনমজুর সাইফুল ইসলামকে ভিটাবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার জন্যই চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলী নগরের শফিকুল ইসলাম নামে-বেনামে ও অন্যদের দিয়ে এসব মামলা করেছেন। শফিকুলের ভাই রফিকুল ইসলাম পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ছেন। এ নিয়ে ২৪ মে একটি জাতীয় দৈনিকে ‘৯ শতক জমির জন্য ১২ জেলায় ৭০ মামলা দিনমজুরের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর ব্র্যাকের মানবাধিকার আইন সহায়তা কর্মসূচির কর্মকর্তারা তানোরের মুন্ডুমালা পৌর এলাকার হাসনাপাড়া চোরখোর মহল্লায় সাইফুলের বাড়িতে যান। তাঁরা এলাকার মানুষের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছেন যে মামলাগুলোর সবই হয়রানিমূলক। তাঁরা সাইফুলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এসব মামলায় আইনি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেন।
গতকাল রাজশাহীর নির্বাহী হাকিমের আদালতের সামনে মামলার হাজিরা দিতে আসা সাইফুলের পরিবার ও তাঁর আত্মীয়স্বজনকে দেখে অনেক মানুষ ভিড় করেন। অনেকেই বাদীকে দেখতে চান। কিন্তু খোঁজাখুঁজি করেও বাদীকে পাওয়া যায়নি। বাদী না এলেও গতকাল হাজিরা দিতে আসেন সাইফুল ইসলাম এবং তাঁর স্ত্রী হারেসা বেগম। হারেসা বেগমের কোলে সেই শিশুসন্তান, যার জন্মের প্রসববেদনা উঠেছিল আদালতের ভেতরেই। এসেছিলেন সাইফুলের মেয়ে শাকিলা খাতুন, ভাতিজা রয়েল ও রুবেল, ওই দুই ভাতিজার স্ত্রী আয়েশা ও সাথী, সাইফুলের শাশুড়ি বাদেনুর বেগম, শ্বশুর বিশু, দুলাভাই আবদুস সামাদ ও তাঁর স্ত্রী রুবিনা, ছেলে কামরুল ও তাঁর স্ত্রী সোনিয়া, সামাদের আরেক ছেলে সাদ্দাম, সাদ্দামের স্ত্রী নার্গিস, সাইফুলের চাচাতো ভাই মোয়াজ্জেম, তাঁর স্ত্রী শিরিন, প্রতিবেশী শওকত আলী ও তাঁর স্ত্রী রোকসানা। আসামির মধ্যে শুধু সাইফুলের যে ভাই সদ্য মারা গেছেন, তাঁর স্ত্রী আসতে পারেননি।
আদালতে উপস্থিত ছিলেন ব্র্যাকের মানবাধিকার আইন সহায়তা কর্মসূচির রাজশাহী জেলা ব্যবস্থাপক আবদুল কাদের। তিনি বলেন, তাঁরা সব ঘটনা জেনেছেন। এখন মামলার কাগজপত্র নিয়ে তাঁরা খোঁজ নিয়ে দেখবেন, কোন জেলার মামলা কোন অবস্থায় রয়েছে। সব জেলাতেই তাঁদের প্যানেল আইনজীবী রয়েছেন। তাঁদের মাধ্যমে সাইফুলকে আইনি সহায়তা দেবেন তাঁরা।
সব মিলিয়ে গত দুই বছরে মোট ৭০টি মামলা হয়েছে সাইফুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ২৫টি মামলা হয়েছে রাজশাহীর বাইরে ১০টি জেলায়। ঢাকা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, টাঙ্গাইল ও নরসিংদীতে চারটি করে। নারায়ণগঞ্জ ও মানিকগঞ্জে দুটো করে। আর চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নাটোর, নওগাঁ ও পাবনায় একটি করে মামলা হয়েছে।