আল ইমরান খান :
প্রায়শই সাধারণ মানুষের কিছু অভিযোগ থাকে ‘আমি নিরপরাধ কিন্তু মিথ্যা মামলায় হাজত খেটেছি’; আবার কারো অভিযোগ থাকে ‘আসামীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ লেখা আছে কিন্তু আসামী তারপরেও কোর্ট থেকে জামিন পেলো!’ বিচারক হিসাবে বিষয়গুলো আমাদের বিব্রত করে। কিন্তু মামলা দায়ের বা পরিচালনা প্রক্রিয়ার সাথে শুধু বিচারকগণ জড়িত নন; বিভিন্ন পক্ষ, ফ্যাক্টর মামলার সাথে জড়িত। বিচারকগণ শুধুমাত্র উপস্থাপিত কাগজ, আইন এবং যুক্তির উপর সিদ্ধান্ত দিয়ে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে মামলা প্রভাবিতকরণ উপকরণ যেমন ভুয়া মেডিকেল কাগজ, সার্টিফিকেট, ওয়ারেন্ট, ভুয়া জামিননামা তৈরির সাথে এক শ্রেণীর অসাধু টাউট প্রকৃতির লোকজন জড়িত যারা আইন পেশার সাথে যুক্ত নয়।
ঢাকা আইনজীবী সমিতির টাউট উচ্ছেদ কমিটি একটি প্রশংসনীয় কাজ করেছেন- বুধবার (১২ জুন) জালিয়াত চক্রের কিছু সদস্যদের ব্লাংক ওয়ারেন্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট, ভুয়া এবং জাল স্বাক্ষর সমেত ডেথ সার্টিফিকেট, ইনজুরি সার্টিফিকেট, মেডিকেলের জরুরী বিভাগের টিকেট ইত্যাদি সহ ধৃত করেছেন। কি ভয়ংকর! অনেক গুরুত্বপূর্ণ মামলা প্রভাবিত করতে, নিরপরাধ ব্যক্তিকে হাজত খাটাতে বা দাগী ক্রিমিনালদের হাজত থেকে বের করতে এগুলো নিশ্চিত ব্যবহৃত হতো! এছাড়া, ভুয়া কাবিননামা সৃজন, ভুয়া এ্যাফিডেভিট, টাকার রশিদ, ব্যাকডেইট দিয়ে পুরোনো স্ট্যাম্প ব্যবহার করে অঙ্গীকারনামা তৈরি ইত্যাদি সম্পর্কিত অভিযোগও হরহামেশা পাওয়া যায়।
লালসালুর ওপার এবং এপারের পক্ষদের মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক; কিন্তু কিছু অসাধু ব্যক্তিদের দ্বারা উপস্থাপিত এরূপ জাল কাগজপত্রের ব্যবহার প্রকৃত ন্যায়বিচার প্রত্যাশীদেরও বিচার প্রাপ্তিতে বাধার কারণ হয়ে দাঁড়ায়; পক্ষদের কিছু অসাধু আচরণ বিশ্বাসের সম্পর্ক থেকে বিচারকদের অবিশ্বাসী হতে শেখায়! কতক ক্ষেত্রে আদালত সম্পর্কে মানুষের বিরুপ ধারণা আনতেও বাধ্য করে।
মামলা থাকা উচিৎ শুধু আইনজীবীদের হাতে; ভাড়াটিয়া-মামলা সৃষ্টিকারী-ফড়িয়া-টাউট-দালাল মধ্যস্বত্বভোগীরা আদালতের পরিবেশ নষ্ট করে। জনগনের কাছে আদালত এবং আইনপেশার সাথে জড়িত মানুষদের বিষয়ে ভ্রান্ত ধারণা দেয়।
আইনজীবিরা কোর্ট অফিসার। আদালতের কাছে তাদের একধরণের জবাবদিহিতা রয়েছে কিন্তু মধ্যস্বত্বভোগী টাউট-দালাল, জাল মেডিকেল বা অন্যান্য কাগজ সৃষ্টিকারীরা আদালতের নজরের বাইরে থেকে অপকর্মগুলো করে; সবচে’ বড় কথা দুটো টাকার জন্য তারা এমন অপকর্মে জড়িয়ে পড়তে পারে যা শিক্ষিত বিবেকবান একজন আইনজীবী কোটি টাকার বিনিময়েও করবে না।
বাংলাদেশে সকল আইনজীবী সমিতির উচিৎ মামলা উকিল সাহেবদের কাছে রাখা; মধ্যবর্তী ফড়িয়াদের পাত্তা না দেওয়া এবং সবচে বড় কথা চিহ্নিত এরুপ জালিয়াতদের বিরুদ্ধে একযোগে ব্যবস্থা নেওয়া.. অন্যথায় ভবিষ্যতে আইনপেশা আর আইনজীবিদের হাতে থাকবে কিনা সে বিষয়ে ভাববার যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
লেখক: মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট, চট্টগ্রাম।