ধর্ষিতা নারী ও শিশুর পুনর্বাসনের জন্য একটি ক্ষতিপূরণের স্কিম (রূপরেখা প্রকল্প) তৈরিতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
জনস্বার্থে দায়ের করা এ সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত মঙ্গলবার (১১ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রুল জারি করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মো. আব্দুল হালিম।
একইসঙ্গে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে চলন্ত বাসে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্স শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে গণধর্ষণ ও হত্যা এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করা রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বর্ষার পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ কেন দেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
এছাড়া নারী-শিশুদের সুরক্ষায় রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন সরকারের নজরদারিতে আনতে এবং যৌন হয়রানি বা যৌন সন্ত্রাস থেকে তাদের নিরাপদ রাখতে ও সুরক্ষা দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তাও জানতে চাওয়া হয়েছে।
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, নারী ও শিশু মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা সচিব, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, আইনগত সহায়তাকারী সংগঠনের চেয়ারম্যান, পরিচালক, পুলিশের মহাপরিদর্শক, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহীর পুলিশ সুপার, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর থানা ও রাজশাহীর মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে, গত ২৬ মে শাহিনুর আক্তার তানিয়াকে গণধর্ষণ ও হত্যা এবং ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করা স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বর্ষার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়। জনস্বার্থে মানবাধিকার সংগঠন চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এ রিট করেন।
প্রসঙ্গত, গত ৬ মে রাত আটটার পরে কটিয়াদী পার হওয়ার পর একজন বৃদ্ধ যাত্রী নামলে শাহিনুর আক্তার তানিয়া বাসটিতে একা হয়ে যান। বাসটি বাজিতপুর উপজেলার বিলপাড় জামতলার নির্জন স্থানে একটি কলাবাগানের কাছে এলে, এর সব জানালা লাগিয়ে দিয়ে বাসচালক নুর তানিয়াকে ধর্ষণ করে। পরে হেলপার লালন মিয়া এবং বাসচালক নুরের খালাতো ভাই ও বাসের অপর হেলপার বোরহান- এই তিনজন মিলে ধর্ষণ করে তানিয়াকে। এ ঘটনাকে সড়ক দুর্ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দিতে তানিয়াকে বাস থেকে নিচে ফেলে দেয়া হয়। পরে মৃত্যু হয় তার।
এছাড়া প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় গত ২৩ এপ্রিল অপহৃত হয় রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার ৯ম শ্রেণীর স্কুলছাত্রী সুমাইয়া আক্তার বর্ষা। অভিযোগ ওঠে, সহপাঠীর সহায়তায় অপহরণের পর বর্ষাকে ধর্ষণ করে প্রতিবেশি বখাটে মুকুল হোসেন। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ করতে গিয়ে অপমানিত হন বর্ষার বাবা।
পরে এলাকার মানুষ বর্ষাকে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা করতে থাকে। সমাজের মানুষের নেতিবাচক মন্তব্য আর একপাক্ষিকভাবে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে দায়ী করায় বিষিয়ে ওঠে বর্ষার তারুণ্যেভরা মনও। এসব সইতে না পেরে ১৬ মে চিরকুট লিখে নিজ ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে বর্ষা।
এই দুই ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে গত ২৬ মে চিলড্রেনস চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের (সিসিবি) চেয়ারম্যান হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন। ওই রিটের শুনানি নিয়েই আদালত রুল জারি করেন।