শুধু ঈদ বা রোজাতেই নয়, সারাবছর ঢাকাসহ গ্রামের হাট বাজারেও তাদের অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে ঢাকায় ভেজাল খাদ্যের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ৩ টি অভিযান করতে হবে বলেও নির্দেশ দেন আদালত।
বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় বাজারে থাকা নিম্নমানের ৫২ পণ্যের বিষয়ে শুনানিতে আজ রোববার (১৬ জুন) হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম ও বিএসটিআইয়ের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আর হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেছুর রহমান।
এর আগে সকালে আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া নামি-দামি কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের (সাবস্ট্যান্ডার্ড) ৫২ পণ্য বাজার থেকে দ্রুত সরাতে না পারার ব্যাখ্যা দিতে রোববার (১৬ জুন) সকালে আদালতে হাজির হন মাহফুজুল হক। পণ্যগুলো বাজার থেকে সরিয়ে নিতে ব্যর্থ হওয়ায় তিনি নিঃশর্ত ক্ষমা চান তিনি।
আদালত তার কাছে জানতে চান ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষের কেন কোনো হটলাইন নেই?। এসময় বিচারক জানান, তিনি নিজেই এর ভুক্তভোগী। আগামী দুই মাসের মধ্যে ভোক্তা অধিকার কর্তৃপক্ষকে হটলাইন চালুর নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এ সময় বিএফএসএ চেয়ারম্যান জানান, আনুষ্ঠানিক হটলাইন নম্বর চালু না করা পর্যন্ত ০১৭৭৭৭৫৩৬৬৮ নম্বরটি ভোক্তা অধিকারের অভিযোগ প্রদান নম্বর হিসেবে থাকবে।
এরপর নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হককে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেন হাইকোর্ট। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে খাদ্য নিরাপত্তায় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ও নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নিয়েছে তার প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত।
আদালত বলেন, সরকারের সাথে আমাদের বিরোধ নেই। আদালত চায় খাদ্য নিরাপদ হোক। শুধু ৫২টি পণ্য নয়, বাজারে সব ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এর আগে গত ১২ মে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) পরীক্ষায় প্রমাণিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি ভেজাল ও নিম্নমাণের পণ্য বাজার থেকে যত দ্রুত সম্ভব প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে এ নির্দেশ পালন করে ১০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন আদালত। পাশাপাশি পণ্যগুলোর বিষয়ে যথাযথ আইন অনুসারে তা নিষ্পত্তি করার নির্দেশ দেওয়া হয়।
এছাড়া, সংশ্লিষ্ট ভেজাল পণ্যের মানোন্নয়ন না হওয়া পর্যন্ত তা উৎপাদন ও বাজারজাত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু আদালতের সেই আদেশ প্রতিপালন না করায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে তলব করেন হাইকোর্ট।
প্রসঙ্গত, গত ৩ ও ৪ মে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে উল্লেখ করা হয়, বিএসটিআই সম্প্রতি ২৭ ধরনের ৪০৬টি খাদ্যপণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালায়। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৫২টি পণ্য নিম্নমানের ও ভেজাল। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ রিপোর্ট প্রকাশ করে বিএসটিআই।