‘মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২’ তে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান যুক্ত করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। একইসঙ্গে মানবপাচারে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে এবং প্রতারক ট্রাভেল এজেন্সি ও মানব পাচার চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ এমদাদুল হক সুমন জনস্বার্থে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রোববার (১৬ জুন) এ রিট আবেদন দায়ের করেন। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ রিটের ওপর শুনানি হবে বলে জানান রিটকারী আইনজীবী।
সেই সঙ্গে সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে নিহত ৩৭ জনের প্রত্যেকের পরিবারকে ১ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে এ রিট আবেদনে। এছাড়াও মানবপাচারে জড়িত প্রতারক চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সিলেট ও নোয়াখালীর পুলিশ সুপারকে হাইকোর্টে হাজিরের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে এবং ৭ দিনের মধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ৩০ দিনের মধ্যে মানবপাচারের ঘটনার তদন্ত করে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
এদিকে এ রিটে আবেদনে মানবপাচারে জড়িতের অভিযোগ আসা ১৭টি ট্রাভেল এজেন্সি, ১৫টি পাচার চক্র এবং নোয়াখালীর তিন ভাই চক্রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষনা করা হবে না এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবেনা সে মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে।
এ রিটের বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ এমদাদুল হক সুমন গণমাধ্যমকে বলেন, গত ৯ মে ভূমধ্য সাগরে তিউনিসিয়ার উপকূলে নৌকাডুবিতে ৩৭ বাংলাদেশীর মৃত্যু হয়। এ ঘটনার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশের নাগরিকদের নিহতের ঘটনার পর সিলেটের দুইজনকে গ্রেফতার করে আইন শৃঙ্খলাবাহিনী।
গ্রেফতারের পর তাদের স্বীকারোক্তি থেকে মানবপাচারে ১৭টি ট্রাভেল এজেন্সি, ১৫টি পাচার চক্র এবং নোয়াখালীর তিন ভাই চক্রকে চিহ্নিত করা হয়। কিন্তু এদের চিহ্নিত করা হলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় কোনো ব্যবস্থা নেয়নি এবং আইন শৃঙ্খলাবাহিনী এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়নি।
এই পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৮ মে স্বরাষ্ট্র সচিব ও প্রবাসী বৈদাশিক কল্যাণ সচিব বিরাবর একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠান হয়। ওই নোটিশের জবাব না পেয়ে মানবপাচার বিষয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিটটি করা হয়।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি নদী বা সাগরপথে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে চাকরি বা বসবাসের নামে মানবপাচারের ঘটনা বাড়ছে। প্রতিদিন এ সংক্রান্ত বিভিন্ন খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আসছে। গত ১২ মে অবৈধভাবে সমুদ্র পথে লিবিয়া থেকে ইউরোপ যাওয়ার চেষ্টাকালে তিউনিশিয়ার উপকূল সংলগ্ন ভূমধ্যসাগরে ৭০ জন যাত্রী নিয়ে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় ৩৭ জন বাংলাদেশির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত বাংলাদেশিদের মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি সিলেট এবং একজনের বাড়ি মৌলভীবাজার বলে জানা যায়।