মিসরের ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসি আর নেই। ১৭ জুন সোমবার রাতে দেশটির একটি আদালতে মৃত্যু হয় বর্ষীয়ান এ রাজনীতিকের। তার বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। ২০১৩ সালে রক্তক্ষয়ী সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই অন্ধকার কারাপ্রকোষ্ঠ ছিল তার ঠিকানা। এ সময়ে মাঝে মধ্যেই আদালতে তোলা হতো তাকে। মিসরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, ‘আদালতের এজলাসে হঠাৎ পড়ে গিয়ে’ তার মৃত্যু হয়েছে।
দীর্ঘদিন থেকেই মুরসি’র পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করে আসা হচ্ছে, অন্ধকার কারাপ্রকোষ্ঠে তিলে তিলে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জেনারেল সিসি। ২০১৮ সালের মার্চে তার পরিবারের উদ্যোগে গঠিত ব্রিটিশ আইনপ্রণেতা ও আইনজীবীদের একটি প্যানেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, মুরসির ক্ষেত্রে বন্দিত্বের ন্যূনতম অধিকারের জন্য নির্ধারিত আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করা হয়নি। তাকে রাখা হয়েছে খুবই বাজে অবস্থায়। প্রতিবেদনে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টের আইনি সুরক্ষা পাওয়ার অধিকার খর্ব করার অপরাধে বর্তমান প্রেসিডেন্ট সেনাশাসক জেনারেল ফাত্তাহ আল সিসিকে দায়ী করার সুপারিশ করা হয়।
২০১১ সালে গণঅভ্যুত্থানে হোসনি মোবারকের পতনের পর ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন মুসলিম ব্রাদারহুড নেতা মোহাম্মদ মুরসি। ২০১৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেন দেশটির সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। ওই অভ্যুত্থানে সমর্থন দেয় সৌদি আরব, ইসরায়েলের মতো আঞ্চলিক শক্তিগুলো। সরকারিভাবে বিবৃতি দিয়ে মুরসি সমর্থকদের ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে আখ্যায়িত করে সৌদি আরব।
ক্ষমতা দখলের পর মুরসি সমর্থকদের ওপর ব্যাপক তাণ্ডব চালায় সেনাবাহিনী। বেসরকারি হিসেবে সে সময় সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত হন সহস্রাধিক মুরসি সমর্থক। কারাগারে পাঠানো হয় মুরসিকে। ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করা হয়। গ্রেফতার করা হয় কয়েক হাজার মুরসি সমর্থককে। মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় ব্রাদারহুড প্রধানসহ দলটির ৯ শতাধিক নেতাকর্মীকে।
মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর ব্রাদারহুড নেতা মোহাম্মদ বদিসহ দলটির প্রায় সব শীর্ষস্থানীয় নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। সহিংসতা, জেল ভাঙা, নাশকতা, রাষ্ট্রদ্রোহসহ নানা অভিযোগের মামলায় বিচার চলতে থাকে তাদের। যুক্তরাজ্যভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, দেশটিতে প্রায় ৬০ হাজার রাজনৈতিক কর্মী আটক রয়েছেন। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এসব বিচারকে রাজনৈতিক আখ্যা দিলেও তাতে কর্ণপাত করেনি দেশটির সামরিক জান্তা।