রিচার্ড দত্ত:
আজ বিশ্ব শরণার্থী দিবস। পৃথিবীর নানা দেশে প্রতিবারের মত এবারো পালিত হচ্ছে বিশেষ এই দিনটি। কারা এই শরণার্থী? সাবই কি এই স্ট্যাটাস দাবি করতে পারে, নাকি কেবলমাত্র নির্দিষ্ট কিছু ব্যাক্তির জন্যই এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে? আমার মনে হয় পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায়, নিপীড়িত-নির্যাতিত ব্যাক্তিই শরণার্থী বা রিফিউজি। কারন তারা নিজদেশেই থাকতে পারছেনা। এর থেকে কষ্টকর আর কি হতে পারে?
আজকের দিনে এই আহ্বান করি যেন এক জন প্রকৃত শরণার্থীও আশ্রয় বঞ্ছিত না হয়, কারন আশ্রয় পাওয়া তার অধিকার, কোন দয়া দাক্ষিণ্য নয়।
যে ব্যাক্তি তার বর্ণ, ধর্ম, জাতিসত্তা, রাজনৈতিক মতামত অথবা নির্দিষ্ট কোন সামাজিক গুষ্টির অন্তর্গত হওয়ার দরুন নিজের দেশে নির্যাতন বা আক্রমনিত হবার সুস্পষ্ট এবং সুঢৃর কারন কেবলমাত্র সেই ব্যাক্তিই শরণার্থী হিসাবে আশ্রয় পাবে। এবং যদি সে নিজ দেশে ফেরত যায় তাহলে আক্রমণ বা নির্যাতনের শিকার হতে পারে।
এই সকল ব্যাক্তিকে আশ্রয় দেওয়া প্রত্যেক দেশের তথা সমাজের নৈতিক দায়িত্ব। যেহেতু আন্তর্জাতিক আইন কেবল নিয়ম সর্বস্ব, এটি শরণার্থীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় পর্যাপ্ত ভূমিকা রাখতে পারছে না। যেমন, শরণার্থীদের আশ্রয় বাধ্যতামূলক করার মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ আন্তর্জাতিক আইন রাষ্ট্রসমূহের উপর চাপিয়ে দিতে পারে না। নানান অজুহাতে রাষ্ট্রসূমহ তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে এবং ঠিক তাই হচ্ছে। ঠিক যেমন রুহিঙ্গারা বাংলাদেশে সীমানা থেকে বারবার ফিরে যাচ্ছে। তবে এই কথাও মনে রাখা দরকার, আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থা এত উন্নত হয়নি যে এই বিপুল পরিমান বিপন্নদের আশ্রয় প্রদান করতে আমরা সক্ষম। কারন একজন শরণার্থীকে শুধু আশ্রয় দিলেই হবে না, তাকে একজন বিদেশী নাগরিক হিসাবে গন্য করে তাকে সকল সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে। সেটা আমাদের জন্য সত্যি কষ্টসাধ্য।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের কথা না বললেই নয়। সারা বিশ্বে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ রিফিউজি স্ট্যাটাস দাবি করছে উন্নত দেশে পাড়ি জমানোর জন্য। তারা সবাইকি সত্যি নিজ দেশে আক্রমণ কিংবা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে কিংবা হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে?
সত্যি বলতে কি ওই ব্যাক্তিদের রিফিউজি না বলে ইকনোমিক মাইগ্রেন্ট বলাই শ্রেয়। কারন তারা কেবলমাত্র তাদের এবং তাদের পরিবারের অর্থনীতিক অবস্থা উন্নত করার জন্যই ভিনদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। কিন্তু তারা যখন শরণার্থী স্ট্যাটাস দাবি করছেন তারা অন্য যারা সত্যিকার অর্থেই ওইটার দাবিদার তাদের হক/দাবি নষ্ট করছেন। সাথে সাথে নিজের দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট করছেন।
তাই আজ ২০ জুন বিশ্ব শরণার্থী দিবসে এই প্রতিপাদ্য হোক যেন প্রত্যেক আশ্রয় প্রত্যাশী যে প্রানভয়ে নিজদেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে তারা যেন আশ্রয় বঞ্ছিত না হয়। একই সাথে অন্যদের কাছে এই প্রত্যাশা, কেবলমাত্র অর্থনীতিক উদ্দেশ্যে বিদেশ গিয়ে শরণার্থী স্ট্যাটাস দাবি করে নিজ জন্মভূমিকে বিশ্ব-পরিমণ্ডলে হেয় প্রতিপন্ন করবেন না।
লেখক: আইনজীবী, জেলা ও দায়রা জজ আদালত, ঢাকা