অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ:
অনেক শিক্ষার্থীর সাথে আলাপপ্রসঙ্গে দেখেছি যে, দণ্ডবিধি ও ফৌজদারি কার্যবিধি নিয়ে কম মনোযোগী এবং অনেকের কাছে নাকি জটিলও ঠেকে! অনেকের আবার মনে থাকে না বা ইত্যাদি নানারকম সমস্যা। এই সমস্যাগুলো মোকাবেলায় দণ্ডবিধির একটি ভালো ওভারভিউ বা সামগ্রিক একটি আলোচনা বোঝা থাকলে সহজেই দণ্ডবিধি বোঝা যায়। সেই কারণে এই লেখাটির অবতারণা। এর মোট ৫টি সিরিজ লেখা রয়েছে। সেগুলো ধারাবাহিকভাবে এখানে প্রকাশিত হবে আশা রাখি। তারই প্রথম পর্বের লেখা এটি।
দণ্ডবিধি একটি তত্ত্বগত আইন। কিন্তু পুরো দণ্ডবিধিটি যে তাত্ত্বিক ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত সেটিরই বর্ণনা করা আছে এর ১ থেকে ১২০খ পর্যন্ত ধারাগুলোতে। বার কাউন্সিল বা জুডিসিয়ারির এমসিকিউ পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য পড়ার সুবিধার্থে দণ্ডবিধিকে প্রধান ৫টি ভাগে ভাগ করবো। এর প্রথম অংশে ‘দণ্ডবিধির বেসিক’ শিরোনামের ভেতরে ধারা ১ থেকে ১২০খ, ‘বিবিধ অপরাধ – ১’ শিরোনামে ধারা ১২১ থেকে ২৯৮ পর্যন্ত, ‘দেহ ও জীবন সংক্রান্ত অপরাধ’ শিরোনামে ২৯৯-৩৭৭ ধারা পর্যন্ত, ‘সম্পত্তি সংক্রান্ত অপরাধ’ শিরোনামে ৩৭৮-৪৮৯ঙ পর্যন্ত এবং সবশেষে ‘বিবিধ অপরাধ – ২’ শিরোনামে ৪৯০-৫১১ ধারা পর্যন্ত। এই ৫টি ভাগের অধ্যায় উল্লেখসহ একটি ছক তুলে দেওয়া হলো আপনাদের পারসেপশনের সুবিধার্থে।
দণ্ডবিধিকে তত্ত্বগত আইন বলা হয় এই কারণে যে, এই আইনে প্রায় সমস্ত রকম ফৌজদারি অপরাধের কথা বলা আছে। এখানে প্রধান ফৌজদারি অপরাধগুলোর সংজ্ঞা, তার ব্যতিক্রম, বিভিন্ন শর্ত, প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা, উদাহরণ এবং কোন অপরাধের শাস্তি কী পরিমাণ ইত্যাদি উল্লেখ করা আছে। এককথায় সমস্ত অপরাধের সংজ্ঞা ও শাস্তির পরিমাণ উল্লেখ করা আছে। ফলে এটি তত্ত্বগত আইন। আর এই আইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে ফৌজদারি কার্যবিধি [এটি একটি পদ্ধতিগত আইন] অনুযায়ী তার বিচার কাজ সম্পন্ন করতে হয়। বাংলাদেশে ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় এই দণ্ডবিধি এবং ফৌজদারি কার্যবিধিই প্রধানতম আইন। এর সাথে সাক্ষ্য আইনও কাজে লাগে। তবে বিশেষভাবে এটি মনে রাখলেই চলবে যে, দণ্ডবিধিতে তাত্ত্বিক যা বিষয়বস্তু বর্ণিত আছে তারই বাস্তব প্রয়োগ করা হয় ফৌজদারি কার্যবিধি দিয়ে। যাইহোক, ফৌজদারি কার্যবিধির কথা ভুলে যান। দণ্ডবিধি নিয়ে আমরা কথা বলছি। চলে আসি মূল পয়েন্টে।
এবার আপনাদের জানা দরকার যে, কেন দণ্ডবিধির ১ থেকে ১২০খ ধারা পর্যন্ত দণ্ডবিধির বেসিক বলে উল্লেখ করলাম?
দণ্ডবিধিতে যে বিভিন্নরকম অপরাধের সংজ্ঞা ও শাস্তির পরিমাণ উল্লেখ আছে, সেগুলোরও একটি ভিত্তি আছে। একটি ছোট্ট উদাহরণে যাই। ধরুন, দণ্ডবিধিতে কোনো একটি সংজ্ঞায় ‘অসাধুভাবে’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। ‘অসাধুভাবে’ শব্দটির সংজ্ঞা দণ্ডবিধিতে ২৪ ধারায় দেওয়া আছে। ফলে দণ্ডবিধির যেকোনো স্থানে যেকোনো অপরাধের সংজ্ঞায়, ব্যাখ্যায় বা উদাহরণে যখন এই ‘অসাধুভাবে’ শব্দটি ব্যবহার হবে সেটির অর্থ তখন উক্ত ২৪ ধারায় বর্ণিত ‘অসাধুভাবে’ শব্দটির সংজ্ঞা অনুযায়ীই ব্যাখ্যা করতে হবে। অর্থাৎ দণ্ডবিধির সংজ্ঞাগুলো এই বেসিক অংশে বর্ণিত বিভিন্ন শব্দের সংজ্ঞা অনুযায়ীই ব্যাখ্যা করতে হবে। ফলত এটি দণ্ডবিধির বেসিক অংশ।
আবার দণ্ডবিধিতে বিভিন্ন অপরাধের শাস্তি বর্ণিত আছে। সেই শাস্তির মূলনীতিগুলোও এই বেসিক অংশে আছে [ধারা ৫৩-৭৫]।
তুলনামূলক জটিল হলেও আরেকটি উদাহরণ বিবেচনায় নিতে পারেন। ধরুন, খুন করা একটি অপরাধ। কিন্তু যখন আপনি নিজের আত্মরক্ষার্থে খুন করবেন, অর্থাৎ সামান্য মুহূর্ত একটু এদিক-ওদিক হলেই আপনি নিজেই খুন হয়ে যেতে পারতেন, এমতাবস্থায় আপনি যদি সেই আক্রমণকারীকে খুন করে বসেন তাহলে এটি কোনো অপরাধ নয়। এটি দণ্ডবিধির ১০০ ধারার বিষয়বস্তু। ১০০ ধারায় আরো সুনির্দিষ্টভাবে ৬টি কারণ উল্লেখ করা আছে যেখানে আপনি অন্য একজনকে খুন করে বসলেও সেটি খুন বলে গণ্য হবে না আইনের দৃষ্টিতে। যেমন, একটি ভালো উদাহরণ হতে পারে – ধর্ষণের উদ্দেশ্যে কোনো নারীকে আঘাত বা আক্রমণ করা হলে, সেই নারীটি উক্ত সম্ভাব্য ধর্ষণকারীকে তাৎক্ষণিকভাবে খুন করে ফেললেও সেটির জন্য খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত হবেন না উক্ত ভিকটিম। এটিকে দণ্ডবিধির সাধারণ ব্যতিক্রম বলা হয়। তো, খুন কাকে বলে এটির সংজ্ঞা দণ্ডবিধিতে ৩০০ ধারায় দেওয়া আছে। তাহলে ৩০০ ধারায় থাকা খুনের সংজ্ঞাটি ১০০ ধারার এই ব্যতিক্রমসাপেক্ষে পড়তে হবে, যদিও ৩০০ ধারায় এটি বলা নাও থাকে যে, ১০০ ধারায় বর্ণিত বিষয়সমূহের ব্যতিক্রমসাপেক্ষে খুনের সংজ্ঞাটি বিবেচনা করতে হবে! ১০০ ধারাটি দণ্ডবিধির সাধারণ ব্যতিক্রম। এরকম আরো ‘সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ’ সংক্রান্ত সমস্ত ধারাই পুরো দণ্ডবিধিতে সমস্ত সংজ্ঞার ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আকারে ধরতে হবে যদিও উক্ত অপরাধের সংজ্ঞার ধারায় ব্যতিক্রমের কথা উল্লেখ নাও থাকে – এই নীতিটির কথা সুনির্দিষ্টভাবে ৬ ধারাতে বলা আছে!
উদাহরণ প্রসঙ্গে ‘সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ’ এর কথা বললাম উপরের প্যারায়। এটি দণ্ডবিধির ৭৬ থেকে ১০৬ ধারা পর্যন্ত বিধৃত রয়েছে। তাহলে এই ‘সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ’ দণ্ডবিধির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা কিনা পুরো দণ্ডবিধির সমস্ত অপরাধের সংজ্ঞাতেই প্রভাব বিস্তার করে। তাহলে এটিকে দণ্ডবিধির বেসিক অংশ বলে ঘোষণা করতে কোনোই দ্বিধা নেই। এরূপভাবে দণ্ডবিধির ১ থেকে ১২০খ পর্যন্ত যা কিছু বর্ণিত আছে তার সবই দণ্ডবিধির বেসিক অংশ হিসেবে আমি চিহ্নিত করেছি।
এবারে আমরা এর প্রতিটি অংশের আলাদা আলাদা করে সংক্ষিপ্ত পরিচয় বুঝবো। সম্ভব হলে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে পারস্পরিক সম্পর্ক অনুধাবনেরও চেষ্টা করবো।
প্রতিটি আইনেই শুরুতে উক্ত আইনের উদ্দেশ্য, কার্যকরীকরণের সময়, সাল, বিস্তৃতি, সংজ্ঞা এবং আইনের প্রাধান্য বিষয়ক ধারা সন্নিবেশিত থাকে। দণ্ডবিধিও তার ব্যতিক্রম নয়। এর ধারা ১ থেকে ৫ পর্যন্ত এর প্রথম অধ্যায়। এই কয়েকটি ধারায় সংজ্ঞামূলক ধারাগুলো নেই, তবে এর একেবারে বেসিক বৈশিষ্ট্য উল্লেখ আছে। ৩ ও ৪ ধারা দুইটি একত্রে পাঠ করতে হবে। একই বিষয়বস্তু বর্ণিত আছে। ৫ ধারাটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে বুঝে নেবেন ধারাটি। এই ধারায় যে নীতির কথা বলা আছে, তা প্রায় প্রতিটি মূল আইনেই কোনো না কোনোভাবে বলা আছে। নীতিটি হচ্ছে – বিশেষ আইন সাধারণ আইনের চেয়ে প্রাধান্য পাবে। দণ্ডবিধি একটি সাধারণ আইন বা মূল আইন। অপরাধ সংক্রান্ত অন্য কোনো বিশেষ আইনের উপস্থিতি থাকলে দণ্ডবিধির সংজ্ঞা কম গুরুত্ব বহন করবে – এটিই এই নীতির মূল কথা। আইনের অন্যতম প্রধান নীতিগুলোর মধ্যে এটি একটি।
অনেক অতিচালাক শিক্ষার্থী ভাবতে পারেন যে, এইরকম একটি তত্ত্বীয় বিষয়সমৃদ্ধ ধারা থেকে এমসিকিউ পরীক্ষায় প্রশ্ন আসবে না! উক্ত অতিচালাকের গলায় কিন্তু দড়ি হয়ে যেতে পারে!! কথায় আছে – ‘অতিচালাকের গলায় দড়ি’। ৫ ধারা থেকে ধারাভিত্তিক বা বিষয়বস্তুভিত্তিক প্রশ্ন আসতে পারে। গুণগত মানের দিক থেকে এটি একটি ভালো এমসিকিউ প্রশ্ন হতে পারে। আবার এই ৫ নং ধারাটি বুঝে উঠলে অন্যান্য আইনের ক্ষেত্রেও সমজাতীয় ধারণার ধারা আছে। ফলে সেটিও বুঝে ফেলা ও মনে রাখা সহজ হবে।
২য় অধ্যায়ে আসুন এবার। এর বিস্তৃতি ৬ থেকে ৫২ক পর্যন্ত। এই ধারাগুলোর বা অধ্যায়টির শিরোনাম হলো ‘সাধারণ ব্যাখ্যাসমূহ’। এই শিরোনামে এখানে মূলত দণ্ডবিধিতে বহুল ব্যবহৃত হয়েছে বা একাধিক অর্থ করা যেতে পারে বা কনফিউশন হতে পারে এমন শব্দগুলোর সংজ্ঞা দেওয়া আছে। যেমন, নারী বা নর বলতে কী বোঝাবে, বা বিচারক, আদালত, অসাধুভাবে, দলিল ইত্যাদির সংজ্ঞা দেওয়া আছে। বিচারকের সংজ্ঞা কত ধারায় আছে দণ্ডবিধিতে এমন প্রশ্ন বিগত ২০১৭ সালে এসেছিলো। তার মানে এগুলো বাছাই করে সিস্টেম করে হজম করে ফেলতে হবে। পরীক্ষার আগে এসব মনে রাখার ভালো টিপস দেবো অনলাইনে। যাইহোক, এরকম বিভিন্ন শব্দের সংজ্ঞা দেওয়া থাকলেও এর শুরুর দুইটি ধারায় [ধারা ৬ ও ৭] কোনো শব্দের সরাসরি সংজ্ঞা দেওয়া নেই। তবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা আছে। যেমন ধরুন, এর ৬ ধারাটি। আমি নিজে এই ধারাটিকে দণ্ডবিধির ‘সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ’ অর্থাৎ ৭৬-১০৬ ধারাগুলোর ‘প্রাণভোমরা’ নামে অভিহিত করেছি আমার বইয়ে। ধারাটি পড়লেই বুঝবেন। উপরের উদাহরণেও এককথায় প্রসঙ্গটি টেনে এনেছিলাম। যাইহোক, বই থেকে পড়বেন ভালো করে।
২য় অধ্যায় নিয়ে আরেকটু কথা আছে। ৩৪ থেকে ৩৮ ধারা – এই ৫টি ধারা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এই ৫টি ধারা একত্রে পড়তে হবে। এখানে ‘সাধারণ অভিপ্রায়’ নিয়ে আলোচনা আছে। এই কয়েকটি ধারা এবং ধারণার সাথে দণ্ডবিধির ৫ ও ৫ক অধ্যায় দুইটির ধারণাগুলোর সাথে গুলিয়ে ফেলেন অনেকেই। পারস্পরিক সম্পর্ক ও পার্থক্য বুঝতে পারেন না। অপরাধের ক্ষেত্রে যৌথ দায় নির্ধারণ করা হয় নিম্নোক্ত ৩টি টপিক থেকে।
১. সাধারণ অভিপ্রায় [ধারা ৩৪-৩৮]
২. অপরাধে সহায়তা [ধারা ১০৭-১২০]
৩. অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র [ধারা ১২০ক-১২০খ]
এগুলো ভালো করে না বুঝে পরীক্ষার বৈতরণী পার হতে পারলেও বাস্তব জীবনে গিয়ে সমস্যায় পড়বেন। এখনই সময়!
৩য় অধ্যায়ে আসি এবার। এর বিস্তৃতি ৫৩-৭৫। এর শিরোনাম ‘সাজা প্রসঙ্গে’। প্রতিটি অপরাধের সংজ্ঞার ধারায় অথবা তার পরপরই ধারাগুলোতে একটি অপরাধের শাস্তির পরিমাণ কী হবে, তা কোন কোন শর্তের অধীনে হবে এসবের বর্ণনা থাকলেও আলাদাভাবে দণ্ডবিধিতে এই অধ্যায়ে সাজা বা শাস্তি প্রসঙ্গে বেসিক নীতিসমূহ বর্ণিত আছে। এই ৩য় অধ্যায়ের ধারাগুলোতে কোনো নির্দিষ্ট অপরাধের শাস্তির কথা বলা হয়নি; বলা হয়েছে শাস্তির নীতি প্রসঙ্গে। যেমন, শাস্তি কত প্রকার, শাস্তি হ্রাস বা লঘু করার ক্ষমতা, সর্বোচ্চ শাস্তি কী, সশ্রম বা বিনাশ্রম সাজার নীতি, অর্থদ- বা জরিমানার নীতি, নির্জন কারাবাস ইত্যাদি প্রসঙ্গে এক্কেবারে বেসিক কথাগুলো। শাস্তির এই অধ্যায় থেকে ঝুমবৃষ্টির মতো প্রশ্ন আসতে পারে। ২০১৫ সালের এমসিকিউ পরীক্ষায় দণ্ডবিধির জন্য বরাদ্দকৃত ২০টি প্রশ্নের ভেতরে ৮টি প্রশ্ন শুধু এই অধ্যায় থেকেই এসেছিলো। ফলে গুরুত্ব দিয়ে এটি পড়তে হবে।
৪র্থ অধ্যায় সেই ৬ ধারাটির সাথে সম্পর্কিত। ‘সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ’ এর শিরোনাম। ৭৬ থেকে ১০৬ ধারা পর্যন্ত। তবে এই অধ্যায়ে একটি আলাদা উপশিরোনামে ৯৬-১০৬ ধারা পর্যন্ত ধারাগুলো বিন্যস্ত আছে – ‘ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার’ শিরোনামে। এটি একটি মজার ও সহজ অংশ।
৫ম অধ্যায়ে অপরাধে সহায়তা বা অপসহায়তা, প্ররোচনা ইত্যাদি সম্পর্কে অনেকগুলো ধারায় [১০৭ থেকে ১২০] বিস্তৃত বর্ণনা রয়েছে। তবে ১০৭, ১০৮, ১০৯ এর প্রধান তিনটি ধারা। অন্য ধারাগুলোও বাদ দিয়ে পড়াটা মুশকিল। তবে কম করে হলেও ১১৫, ১১৬ এবং ১১৭ ধারা তিনটি দেখবেন।
এরপর ৫ক অধ্যায়। এই অধ্যায়টি ১৮৬০ সালে যখন প্রণীত হয় তখন ছিলো না। ১৯১৩ সালে ব্রিটিশ শাসনাধীনে থাকার সময়ই একটি সংশোধনীর মাধ্যমে এই অধ্যায়টি যুক্ত হয় দুইটি ধারা দিয়ে; ১২০ক ও ১২০খ [CHAPTER VA was inserted by the Indian Criminal Law (Amendment) Act, 1913 (Act No. VIII of 1913)]। এই দুইটি ছোট্ট ধারা থেকেই অনেকগুলো প্রশ্ন করা সম্ভব। এর প্রতিটি শব্দ বুঝে বুঝে পড়ে নেবেন।
গুরুত্বপূর্ণ ধারা ও পড়ার নির্দেশনা
১. ধারা ৩ ও ৪ একসাথে পড়বেন। কোনো অপরাধ দেশের ভেতরে হোক অথবা বাইরে হোক; অপরাধী দেশের নাগরিক হোক অথবা বাইরের হোক; নীতি বা বিবেচনা একটাই – দেশের আইনে উক্ত অপরাধটি ‘অপরাধ’ কিনা – তাহলেই দেশের আদালতে দণ্ডবিধি অনুযায়ী তার বিচার করা যাবে!
২. ধারা ৫। বিশেষ আইন সাধারণ আইনের ওপর প্রাধান্য পাবে[Special law prevails over general law] – এটিই ৫ ধারা মূলকথা।
৩. ধারা ৬। দণ্ডবিধির সমস্ত সংজ্ঞা ব্যতিক্রমসমূহ সাপেক্ষে হবে। এটি দণ্ডবিধির ৪র্থ অধ্যায়ের প্রাণভোমরা। ব্যাপারটা একবারেই বুঝে নেবেন। সারাজীবন কাজে দেবে।
৪. ধারা ৭। দণ্ডবিধিতে একবার প্রকাশিত অর্থ সমস্ত স্থানেই একই অর্থ বহন করবে।
৫. ধারা ৩৪-৩৮ একসাথে পড়বেন। সাধারণ অভিপ্রায় নিয়ে আলোচনা। ৩৪, ৩৫ ও ৩৮ ধারা ভালো করে বুঝে রাখতে হবে। একটি বিশেষ কথা মনে রাখবেন – সাধারণ অভিপ্রায়ের উপস্থিতি প্রমাণের জন্য অপরাধটি অবশ্যই সংঘটিত হতে হবে।
৬. সংজ্ঞা সংক্রান্ত অন্যান্য ধারাগুলোর ভেতরে ১০, ১১, ১৯, ২০, ২২-২৫, ২৯, ৩৩, ৩৯, ৪০, ৪৫, ৪৬ ও ৪৯ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
৭. ৫৩ থেকে ৭৫ শাস্তির নীতি সংক্রান্ত বিভিন্ন ধারা রয়েছে। এগুলো শুরুতেই প্রধান ২টি অংশে ভাগ করে নিতে পারেন। যেমন, ৫৩ থেকে ৬০ ধারা পর্যন্ত মূলত কারাদণ্ড নিয়ে কথা। ৬৩ থেকে ৭০ পর্যন্ত অর্থদণ্ড নিয়ে কথা। আবার, কারাদণ্ড অংশে ৫৩ ও ৫৩ক মূলত দণ্ডের প্রকার ও ধরণ নিয়ে কথা। ৫৪, ৫৫ ও ৫৫ক মূলত কোনো শাস্তিকে হ্রাস করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি ও সরকারের ক্ষমতার কথা বলা আছে। এভাবে এগুলোর একটি ধারাবাহিকতা ও মিল অমিল খেয়াল রেখে পড়লে মনে থাকবে। এই অংশের সবগুলো ধারাই গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে বারংবার অনুশীলন করতে হবে যে আপনি না দেখে সেগুলো মনে রাখতে পারছেন কিনা।
৮. ধারা ৭৬ থেকে ১০৬ পর্যন্ত দণ্ডবিধির সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ আলোচনা করা আছে। এখানে একটি উপশিরোনামে ধারা ৯৬ থেকে ১০৬ পর্যন্ত মূলত ব্যক্তিগত আত্মরক্ষার অধিকার আলোচনা করা আছে যেটি অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
-
৯৬ ধারা এর বেসিক।
-
৯৭ ধারায় ৯৯ ধারাটির ব্যতিক্রমসাপেক্ষে দেহ ও সম্পত্তির ক্ষেত্রে আত্মরক্ষার অধিকারের বিধান আলোচিত হয়েছে।
-
১০০, ১০১ এবং ১০২ এ দেহ সংক্রান্ত আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলা আছে।
-
একই ছন্দে আবার ১০৩, ১০৪ ও ১০৫ এ সম্পত্তি সংক্রান্ত আত্মরক্ষার অধিকারের কথা বলা আছে।
-
আবার ১০০ ধারায় দেহরক্ষা বিষয়ে কোন ৬টি ক্ষেত্রে অন্যের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যাবে সেটি বলা আছে, তেমনি ১০৩ ধারায় সম্পত্তি রক্ষায় কোন ৪টি ক্ষেত্রে অন্যের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটানো যাবে সেটি বলা আছে।
-
ওদিকে আবার ৭৬-৯৫ ধারা পর্যন্ত ৮২-৮৬ ধারাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবাদে অন্যান্য ধারাগুলোর একবার মনোযোগী রিডিং দেয়া জরুরি, বিশেষ করে এসবের উদাহরণগুলোতে।
দণ্ডবিধির সাধারণ ব্যতিক্রমসমূহ সংক্রান্ত এই চতুর্থ অধ্যায়টির সাথে ধারা ৬ এর একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে – তা ভোলা যাবেনা। দ্যাটস অল ইয়োর অনার!
৯. ধারা ১০৭ থেকে ১২০ পর্যন্ত অপরাধে সহায়তা বা অপসহায়তা [Abetment] নিয়ে আলোচনা। এখানে মূলত ১০৭-১০৯ এবং ১১৫-১১৭ এই ৬টি ধারা গুরুত্ব দিয়ে পড়বেন।
১০৭ ধারায় ৩ উপায়ে এবেটমেন্ট করা যায় তা বলা আছে। ১০৮ এ এবেটর এর সংজ্ঞা। ১০৮ ধারায় আরেকটি জরুরি কথা হচ্ছে – অপসহায়তার ক্ষেত্রে প্ররোচনা দিলেই তার অপরাধ অনুষ্ঠিত হবে; এর জন্য অপরাধটি সংঘটিত হবার কোনো প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ প্ররোচনাকারীর কোনো রেহাই নেই আইনে। আর ১০৯ ধারায় মূলত অপসহায়তার ক্ষেত্রে অপরাধটি সংঘটিত হলে অপসহায়তাকারীর শাস্তির নীতি বর্ণিত আছে। খুব জরুরি ধারা।
১০. ধারা ১২০ক ও ১২০খ তে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের কথা। এর শাস্তি সম্পর্কিত ১২০খ ধারাটি খুব ভালোভাবে আত্মস্থ করলেই এই অংশের পড়া শেষ বলে মনে করতে পারেন আপনি।
আজ এটুকুই। আপনাদের সব্বার জন্য শুভকামনা আমার পক্ষ থেকে।
লেখক : আইনজীবী ও ‘আইনের ধারাপাত – MCQ মডেল টেস্ট বুক’ এর রচয়িতা এবং ফাউন্ডার – juicylaw.com