হোলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলার মামলায় সাক্ষ্য দিতে আসা এক পুলিশ কর্মকর্তা আদালতের এজলাসেই বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়লেন আসামিপক্ষের আইনজীবীর সঙ্গে। আইনজীবীর দিকে আঙুল উঁচিয়ে পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. আ. আহাদ বলেন, তিনি কে, সে সম্পর্কে তিনি (আইনজীবী) জানেন কি না। আহাদের এ কথায় আদালতে বিতণ্ডার সৃষ্টি হয়। পরে আদালতের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ যখন মো. আ. আহাদকে জেরা করতে শুরু করলে গতকাল মঙ্গলবার (২৫ জুন) এই বাগ্বিতণ্ডার সূত্রপাত হয়। এর আগে সাক্ষী বলেন, ২০১৬ সালে ১ জুলাই তিনি বেতারবার্তায় হোলি বেকারিতে হামলার খবর পান। ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে তাঁর সময় লাগে ৫ থেকে ৭ মিনিট। তাঁর সঙ্গে ছিলেন গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মোস্তাক হোসেন। তাঁর দায়িত্ব ছিল এলাকাটি ঘেরাও দিয়ে রাখা, যেন সন্ত্রাসীরা পালিয়ে না যায়। উপকমিশনার মোস্তাক হোসেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অবহিত করেন। কিছুক্ষণ পর ডিএমপি কমিশনার হোলি বেকারির মূল ফটকের ১০ থেকে ১৫ গজ দূরে দাঁড়িয়ে পুলিশ সদস্যদের ব্রিফ করছিলেন। এ সময় হঠাৎ পুলিশকে লক্ষ্য করে সন্ত্রাসীরা গ্রেনেড ছোড়ে। তিনি সহ ৩০ থেকে ৩৫ জন আহত হন। তাঁর দুই পায়ে ১০ থেকে ১৫টি স্প্লিন্টার ঢোকে। অঝোরে পা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। তাঁর এক সহকর্মী তাঁকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যান। তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে চিকিৎসা নেন।
জেরার শুরুতে ফারুক আহম্মেদ জানতে চান, আ. আহাদ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে চেনেন কি না। আরও জানতে চান, তাঁরা অধস্তন কর্মকর্তা ও অন্যদের আইন সম্পর্কে অবহিত করেন কি না? জবাবে মো আ. আহাদ বলেন, তিনি আইও কে চেনেন এবং তাঁদের আইন শেখানো হয়। ফারুক আহম্মেদ বলেন, এজলাসে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বসে আছেন। তিনি সাক্ষীদের শিখিয়ে-পড়িয়ে দেন। এটা ঠিক না। এর একটু পরই সরকারি কৌঁসুলি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তদন্ত কর্মকর্তাকে বাইরে পাঠিয়ে দেন। ফারুক আহম্মেদ জানতে চান, আইওকে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি নিজে হাতে লিখেছেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, তিনি স্বাক্ষর করেছেন। সাক্ষ্যটি টাইপ করা। পিপি বলে ওঠেন, টাইপ করে দিলে অসুবিধা কোথায়? ফারুক আহম্মেদ সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ২১ এর ২ ধারার উল্লেখ করে বলেন, এটি একটি বিশেষ আইন। এই আইনে নিজে হাতে সাক্ষ্য লেখার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। ফারুক আহম্মেদ বলেন, লিখিত বক্তব্যে তিনি মোস্তাক হোসেনের নাম একবারও উল্লেখ করেননি। ফারুক আহম্মেদ নথিপত্র নিয়ে তাঁর দিকে এগিয়ে গেলে আ. আহাদ চিৎকার করে ওঠেন। তিনি বলেন, তাঁকে কেন সব কথা লিখতে হবে? গুলশানের উপকমিশনার মানেই মোস্তাক হোসেন। তিনি একটি ‘ইনস্টিটিউশন’। তিনি নিজে (আহাদ) একজন প্রত্যক্ষদর্শী ও আঘাতপ্রাপ্ত। তিনি তাঁকে তাঁর জায়গায় ফিরে যেতে বলেন। চিকিৎসা-সম্পর্কিত কাগজপত্র দিয়েছেন কি না? তিনি সাক্ষ্য দেওয়ার আগে থাইল্যান্ড গিয়েছিলেন, নাকি পরে যান? কারণ তাঁর সাক্ষ্যে থাইল্যান্ড যাওয়ার কথা বলা নেই। এতে রেগে গিয়ে মো. আ. আহাদ আঙুল উঁচিয়ে বলেন, ‘আপনি এই প্রশ্ন কেন করেন? মশকরা করেন? ক্রিটিসাইজ করেন?’ জবাবে ফারুক আহম্মেদ বলেন, তাঁর ব্যথায় তিনিও ব্যথিত। নথিপত্রে থাইল্যান্ডের উল্লেখ নেই বলে তিনি প্রশ্ন করেছেন।
এ পর্যায়ে বিচারক মজিবুর রহমান পুলিশ কর্মকর্তার উদ্দেশে বলেন, ‘মাইন্ড ইট। এটা কোর্ট। অনেক রকম প্রশ্ন আসতে পারে। আপনি টেম্পার (মেজাজ) হারাবেন না।’ বিচারক ফারুক আহম্মেদকে বলেন, ‘আপনি একজন লার্নেড (বিজ্ঞ) আইনজীবী। আপনি লে ম্যানদের মতো প্রশ্ন কেন করেন?’
বাগ্বিতণ্ডার সময় এজলাসের ভেতর আইনজীবীরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। মো. আ. আহাদ ছাড়াও এ দিন আরও চারজন সাক্ষ্য দেন। পরবর্তী শুনানির তারিখ ২ জুলাই।
শরিফুলের পক্ষে জামিন আবেদন
আসামি শরিফুল ইসলাম খালেদের পক্ষে জামিন প্রার্থনা করেন আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। তিনি আদালতকে বলেন, ৬০ জন এ পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁদের কেউ শরিফুল ইসলাম খালেদের ব্যাপারে কোনো বক্তব্য দেননি। শরিফুল নিজেও দায় স্বীকার করে বক্তব্য দেননি। হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার সময় শরিফুলকে গোয়েন্দা বিভাগ আটকে রেখেছিল। পরে বের করে এনে গ্রেপ্তার দেখায়।
পিপি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, শরিফুলের সম্পৃক্ততার ব্যাপারে অন্য আসামিরা জবানবন্দিতে বলেছেন। পরে বিচারক জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।