কর আইনজীবীদের সংবাদ সম্মেলন

আয়কর অধ্যাদেশ ১৭৪ ধারা পুনর্বহালে কর আইনজীবীদের আল্টিমেটাম

বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশের ১৭৪ ধারার পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে আগামী ৩০ তারিখের পর থেকে বৃহত্তর আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কর আইনজীবীরা। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর চেয়ারম্যন মোঃ মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়ার আশ্বাসে আগামী পাঁচদিন কড়া অবস্থানে না গিয়ে দেশব্যাপী ছোট আকারে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করবেন বলে জানান তারা।

এনবিআরের নিচতলায় মঙ্গলবার (২৫ জুন) বাংলাদেশ ট্যাক্স ল ইয়ার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিটিএলএ) এবং ঢাকা ট্যাক্সেস বার এ্যাসোসিয়েশনের যৌথ উদ্যোগে প্রস্তাবিত অর্থ বিল, ২০১৯-এ আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ১৭৪(২)(এফ) ধারার পুনর্বহাল ও বাজেট বাস্তবায়নে কর আইনজীবীদের ভূমিকা সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন সংগঠনের নেতারা।

তারা বলছে সরকারের রাজস্ব আহরণে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাশাপাশি সহযোগী ভূমিকা পালন করে আসলেও এনবিআরের একজন কর্মকর্তা অসৎ উদ্দেশে সরকার ও আইনজীবীদের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।

বক্তারা বলেন, আইনজীবীদের এই আন্দোলন বাজেট বা সরকারের বিরুদ্ধে নয় শুধু একটি ধারার বিরুদ্ধে যা বাস্তবায়ন হলে এই পেশাটি হুমকির মুখে পড়বে।

সাবেক এমপি ও বিটিএলএ’র আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট মোঃ সোহরাব উদ্দিন বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আয়কর অধ্যাদেশ, ১৯৮৪-এর ১৭৪(২)(এফ) পরিবর্তন যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে আয়কর কর্মকর্তারা ট্যাক্সেস বারের সদস্য না হয়েই আয়কর আইনজীবী হিসেবে পেশায় নিয়োজিত হতে পারবেন। এতে এই পেশার মান নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেবে বলে তিনি মনে করেন।

৩০ তারিখের পর বৃহত্তর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে তিনি বলেন, ‘এনবিআরের চেয়ারম্যনের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে তিনি বলেছেন, বাজেটে ১৯৮৪-এর ১৭৪(২)(এফ) ধারাটি বাতিলের যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা বর্তমানে আইনটি যেভাবে আছে সেভাবেই বহাল রাখা হবে। তার আশ্বাসে আশ্বস্ত হয়ে আমরা ৩০ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাই। ৩০ তারিখ সংসদে বাজেট পাস হবে। বাজেট পাসের পর যদি দেখি আমাদের দাবি মানা হয়নি তখন থেকেই দেশব্যাপী দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলব।’

সাবেক এমপি এ্যাডভোকেট শাহ্ জিকরুল আহমেদ বলেন, এনবিআর যে বিশাল পরিমাণ রাজস্ব সরকারকে দেয় তার সহায়তা করি আমরা আয়কর আইনজীবী। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এক কর্মকর্তা সম্পূর্ণ নিজ হীন উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে সরকারের উপর মহলকে ভুল বুঝিয়েছে। শত বছরের একটি সুন্দর আইন পরিবর্তন করে একটি কালো আইন তৈরি করে আইনজীবীদের সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। তিনি অবিলম্বে দাবি মেনে নিয়ে আইনজীবীদের বিশাল বাজেটের রাজস্ব আহরণে মনোযোগ দেয়ার সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ঢাকা ট্যাক্সেস বার এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা বাজেটকে স্বাগত জানাই। তবে বারকে পাশ কাটিয়ে যাওয়াটা অসম্মানজনক। আমরা আলোচনা করছি, দাবি করছি এটি সমাধানের।

বাংলাদেশ ট্যাক্স ল ইয়ার্স এ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সচিব মোঃ খোরশেদ আলম বলেন, যে আইনটি প্রস্তাব করা হয়েছে তা বাতিল করতে এই দাবি। এ সময় নেতারা বলেন, এই আইনটি পাস করা হয়েছে কুচক্রি মহলের ইন্ধনে। এমনকি এনবিআর চেয়ারম্যানও বিষয়টি অবহিত ছিলেন না বলেও জানান তারা। বক্তারা বলেন, এনবিআর আয়কর নীতি সদস্য কানন কুমার রায় একজন দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তি। তিনি এককভাবে এনবিআর বোর্ডকে অবহিত না করে একপেশে বিষয়টি উত্থাপন করেছেন বলেও অভিযোগ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে আয়োজকরা জানান, এই আইন হলে একটি বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে। সংসদে যেহেতু উঠানো হয়েছে তাই আমরা সংসদের বিভিন্ন উইংয়ে যোগাযোগ করছি। অর্থমন্ত্রী সুস্থ হচ্ছেন দ্রুতই তার সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি তুলে ধরব।

প্রস্তাবিত বাজেটকে উন্নয়নের বাজেট আখ্যায়িত করে বক্তারা বলেন, কর আইনজীবীরা কর আহরণে যে ভূমিকা রেখে যাচ্ছে তাতে দাবিকৃত সংশোধনী বাস্তবায়ন করা হলে রাজস্ব আদায় বাড়বে। অন্যথায় পেশার মর্যাদা হারানোর পাশাপাশি রাজস্ব আহরণ কমে যাওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন। এই বিষয়ে অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। সেই সঙ্গে যে কর্মকর্তা অর্থাৎ আয়কর নীতির সদস্য একতরফাভাবে এটি বাস্তবায়নের এজেন্ডা হিসেবে নিয়েছেন তার শাস্তি দাবি করেন সংবাদ সম্মেলনে।