জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজের পর বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা এজলাসে আদালতকে উদ্দেশ্য করে শেম শেম (লজ্জা) বলাসহ বিভিন্ন শব্দ ব্যবহার করে হট্টগোল শুরু করেন। এ সময় বিএনপির সিনিয়র আইনজীবীরা আদালতের সামনের সারিতে বসা থাকলেও তাদের নিষেধ করেননি বলে অভিযোগ তুলেছেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট্র দুর্নীতি মামলায় বেগম খালেদা জিয়ার জামিন হাইকোর্টে খারিজ হওয়ার পর বুধবার (৩১ জুলাই) বিকেলে অ্যাটর্নি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের কাছে এ অভিযোগ তোলেন তিনি।
মাহবুবে আলম বলেন, ‘খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনটি খারিজের পর কোনো কোনো আইনজীবী আদালতে অভদ্রভাবে মন্তব্য ও চিৎকার করছিলেন। তখন কিন্তু বিএনপির আইনজীবী নেতারা প্রথম বেঞ্চে (আদালত কক্ষের) বসা ছিলেন। তারা কিন্তু তাদের থামাননি। কাজেই এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। সাধারণ আইনজীবীদের উচিত উত্তেজিত না হওয়া এবং আদালতের যে ক্ষমতা ও পরিবেশ তা ঠিকমতো বজায় রাখা। সিনিয়র আইনজীবীদের উচিত ছিল যারা সেখানে উচ্ছৃঙ্খলতা করেছে, তাদের নিবারণ করা। কিন্তু তাও উনারা করেননি।’
এর আগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ডাদেশ পাওয়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন সরাসরি খারিজ করেন হাইকোর্ট। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদেশের পরপর বিচারপতিরা এজলাস ছেড়ে যাওয়ার সময় বিএনপির অর্ধশতাধিক আইনজীবী ‘শেইম শেইম’ (লজ্জা) বলে চিৎকার দিতে থাকেন। ‘এ আদেশ মানি না, শেখ হাসিনার দালাল’ বলে এজলাস কক্ষে চিৎকার করতে থাকেন।
এ সময় কিছু জুনিয়র আইনজীবী সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক এবং বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে ঘিরে ধরে বলেন, আপনি আন্দোলনের আদেশ দেন। আমরা আদালতে আন্দোলন করব।
মাহবুব উদ্দিন খোকন সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। কিন্তু সবাই হৈ চৈ করতে থাকেন। একপর্যায়ে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে জুনিয়র আইনজীবীদের রোষানলে পড়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমসহ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা এজলাস কক্ষে চুপচাপ বসে থাকেন। বিএনপির আইনজীবীরা বিচারকক্ষ ছেড়ে যাওয়ার পর তারা রাষ্ট্রপক্ষ এজলাস ত্যাগ করেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘ইতোমধ্যে তিনি আরেকটি মামলায় আপিল বিভাগে আবেদন (আপিল) জানিয়েছেন। কিন্তু জামিনের বিষয়ে এখনও মুভ করেননি।’
এ মামলায় আদালত তাকে সাত বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন। উনার (খালেদা জিয়ার) পক্ষে আপিল ফাইল করে জামিন আবেদন করা হয়। আমি শুনানিতে আদালতকে বলেছি, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত থেকে যদি এমন আর্থিক দুর্নীতিতে কেউ জড়ান তাহলে এটাকে হালকাভাবে দেখার কোনো উপায় নেই। তাছাড়া উনার বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া আগের মামলাটি খুব অল্প সময়ের মধ্যে পেপার বুক তৈরি করা হয়েছিল। এবং আপিলটি শুনানিও করা হয়েছে। শুনানিতে আমরাও বেশি সময় নেইনি। শুনানির জন্যও আমরা প্রস্তুত,’ বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল।
আদালতের বরাত দিয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল আরও জানান, আদালতও বলেছেন, রাষ্ট্রের এমন একটি পদে থেকে দুর্নীতি করাটা হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই।