দেশে যত অনিয়ম হচ্ছে, তার সবগুলোর সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা জড়িত। তবে, এরমধ্যেও কিছু সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। তাদের সাধুবাদ জানিয়েছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।
আজ বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) আয়োজিত ‘জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটির সুপারিশের কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিতের দাবিতে’ এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন তিনি।
ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে সংঘটিত এমন কোনো অপরাধ নেই, যার সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া যায় না। সব অনিয়মের সঙ্গেই তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যোগাযোগ, সংশ্লিষ্টতা, যোগসাজশ রয়েছে। আইনের রক্ষক হয়ে নিজেরাই আইনের ভক্ষক হয়েছেন। তবে, পুলিশসহ অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যেও কিছু সৎ কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন। ইতোমধ্যে তারা ইতিবাচক দৃষ্টান্ত স্থাপন করছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত হচ্ছেন। তাদের আমরা স্বাগত জানাই।
তিনি বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার একটি অংশের আচরণ আইনের রক্ষকের পরিবর্তে ভক্ষকের মতো। এ ধারা অব্যাহত থাকলে হয়তো একসময় তাদের নামটাই পরিবর্তন করতে হবে। তখন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হয়তো হবে আইন লঙ্ঘনকারী সংস্থা। আমরা সে অবস্থা দেখতে চাই না।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উপস্থাপিত হয়, তার বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত হওয়া উচিত। দেখা যায়, বিভাগীয় তদন্ত হলেও প্রকৃত বিচার হয় না। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ক্লোজড করা হয় বা বদলি করা হয়। নাহয় রিটায়ার্ড করে দেওয়া হয়। এতে তাকে পুরস্কৃত করা হয়, সমাধান হয় না। সমাধানের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত হতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে এইচআরএফবির পক্ষ থেকে বলা হয়, গত ৯ আগস্ট জাতিসংঘের কমিটির চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণে সরকারের কাছে একগুচ্ছ সুপারিশ করে এইচআরএফবি। সুপারিশগুলোর মধ্যে ছিল, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নির্যাতন ও অমানবিক আচরণের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা সহ্য করা হবে না মতে সরকারের সুস্পষ্ট ঘোষণা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে আটকবস্থায় মৃত্যুর ঘটনায় বাহিনীর স্বাধীন কমিটির মাধ্যমে তদন্ত, গুম সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক সনদ অনুযায়ী এটিকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা, র্যাবের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের নিরপেক্ষ তদন্ত, আদিবাসী, নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠির ওপর নির্যাতনের সুষ্ঠু তদন্ত ও তাদের ক্ষতিপূরণ-পুনর্বাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, আইসিটি আইন ২০০৬, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮, বৈদেশিক সহায়তা আইন ২০১৬-এ ধরনের আইনগুলোতে সংস্কার এনে ‘রাষ্ট্রবিরোধী কার্যক্রম’, ‘জাতীয় ভাবমূর্তি বিনষ্ট’ সংক্রান্ত ধারা বিলোপ করা ইত্যাদি।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) নির্বাহী সদস্য আইনজীবী জেড আই খান পান্নার সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’র নির্বাহী পরিচালক শাহিনা হক, নাগরিক উদ্যোগের নির্বাহী পরিচালক জাকির হোসেন, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামছুল হুদা, এইচআরএফবির সমন্বয়ক তামান্না হক রিতি প্রমুখ।