কতটা পথ হাঁটলে তবে পথিক হওয়া যায়, সে প্রশ্নের উত্তর অজানাই, কিন্তু কত শুভেচ্ছা পেলে তবে খাপ্পা হওয়া যায়, তা বিলক্ষণ জানেন এলাহাবাদ হাইকোর্টের মহামান্য প্রধান বিচারপতি গোবিন্দ মাথুর।
সদ্য পেরনো জন্মাষ্টমীতে মাথুর সাহেবের মোবাইলে সহকর্মী ও অধস্তনরা কৃষ্ণ-জন্মের শুভেচ্ছা জানিয়ে এত মেসেজ পাঠিয়েছেন যে বিচারপতি মহোদয় তিতিবিরক্ত! হালফিলের কেতা মেনে হোয়াটসঅ্যাপে সে সব আকাশ-বাণী (এবং ছবি) পাঠিয়েছিলেন যাঁরা, তাঁদের মুখ চুন। কারণ, স্বয়ং রেজিস্ট্রার জেনারেল শুক্রবার (২৩ আগস্ট) রীতিমতো প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করে জানিয়ে দিয়েছেন, কোনও উপলক্ষেই আর প্রধান বিচারপতির মোবাইলে কোনও শুভেচ্ছা বার্তা দেওয়া যাবে না। নির্দেশ অমান্য করা হলে পরিণতি যে মধুর হবে না, তা-ও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে নির্দেশিকায়।
এলাহাবাদ হাইকোর্টের এই বার্তা এখন ঘুরছে কলকাতার আইনজীবী এবং বিচার বিভাগের অফিসারদের মোবাইলেও। আলোচনায় সকলেই মানছেন সকাল থেকে এমন মুঠো মুঠো মেসেজ-প্রাপ্তির যন্ত্রণা এবং বিরক্তির কথা। কলকাতা হাইকোর্টে আবার এমন কিছু আধিকারিকও আছেন, যাঁরা এ খবর শুনে মুচকি হেসেছেন। হাসবেনই, কারণ এই সাইবার যুগেও তাঁরা হোয়াটসঅ্যাপে নেই। ফলে, জরুরি প্রয়োজনেও তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবাইলে মেসেজ বা ই-মেলই ভরসা। হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার না-করা নিয়ে অবশ্য তাঁরা ‘পিছিয়ে পড়ছি’ গোছের ভাবনা পোষণ করেন না মোটেই। বরং তাঁদের মতে, যেচে অশান্তি নেওয়ার থেকে এই ভালো।
কর্মসূত্রে দীর্ঘদিন বিদেশে কর্মরত, বর্তমানে কলকাতায় তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার সিনিয়ার প্রজেক্ট ডিরেক্টর কৃষ্ণেন্দু বন্দোপাধ্যায় বলছেন, ভারতে মোবাইল নম্বর গোপন রাখার সুযোগ খুব কম। কিন্তু আমেরিকা, কানাডার মতো দেশে ফোনের মালিক ইচ্ছে হলেই তাঁর নম্বর গোপন রাখতে পারেন। ফলে, সকাল থেকে রাত সেখানে এই মেসেজের অত্যাচার নেই। কিন্তু এ দেশে সাধারণ মোবাইল ব্যবহারকারীর সেই সুযোগ নেই, ফলে এই নিত্য যন্ত্রণা থেকেই রেহাই নেই কোনও। কিছু ক্ষেত্রে সরকারি বিশেষ অনুমতিক্রমে সার্ভিস প্রোভাইডাররা নির্দিষ্ট কিছু নম্বর গোপন রাখেন। তাই, হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহার করলেও সে সব নম্বরের মালিকদের ঘুম থেকে উঠেই ‘ফরওয়ার্ডেড’ মেসেজের ঠেলায় পড়তে হয় না।
অন্যের নজর পাওয়াই সকাল থেকে মেসেজ ফরওয়ার্ডকারীর প্রথম লক্ষ্য বলে মনে করেন মনস্তত্ত্ববিদ কেদারনাথ বন্দোপাধ্যায়ের। তাঁর বক্তব্য, মেসেজ ফরওয়ার্ড করেন যাঁরা, তাঁরা মূলত কুঁড়ে প্রকৃতির হন। আগে মনে করা হত, শুধু স্কুল-কলেজ পড়ুয়ারাই মোবাইলে এমন মেসেজ বেশি পাঠায়। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে তাঁদের বাবা-মায়েরাও সেই একই নেশায় আক্রান্ত। যিনি নিজে হয়ত মেসেজের প্লাবনে বিরক্ত, কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে উত্তর দেওয়া ছাড়া পথও থাকে না। হয়তো এমনই গুরুত্বপূর্ণ কেউ তাঁকে মেসেজ পাঠালেন, যার জবাব না দিলে সমস্যা হতে পারে। ফলে, মন না চাইলেও মেসেজ দেওয়া-নেওয়ার জোয়ারে গা ভাসাতে হয়। আবার এটাও ঠিক যে, অনেকের কাছে এটা জনসংযোগের একটা পথও বটে।