শিশু নির্যাতনের জন্য বাবা-মাকেও আইনের অধীনে আনার পক্ষে মত জানিয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ বলেছেন, শিশু সুরক্ষায় উন্নত বিশ্বে এই ধরনের আইন থাকলেও বাংলাদেশে নেই; এখন তা প্রণয়নের সময় এসেছে।
সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে পুলিশ সদস্য ও সমাজসেবা কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে শনিবার (৩১ আগস্ট) ‘ডাইভারশন ফ্রম দ্য পুলিশ স্টেশন আন্ডার দ্য চিলড্রেন অ্যাক্ট ২০১৩’ শীর্ষক কর্মশালায় তিনি এ মত প্রকাশ করেন। সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটস ও ইউনিসেফ যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
শিশু সন্তান নিয়ে মা-বাবার প্রচলিত দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্টের এই বিচারক বলেন, “অনেক মা-বাবাই তার শিশু সন্তানটিকে সম্পত্তি মনে করেন। শাসনের নামে নির্যাতন করেন। কিন্তু সন্তান কখনও সম্পত্তি নয়। বিশ্বের অনেক দেশেই অভিভাবকদের এমন নির্যাতন আইন করে বন্ধ করা হয়েছে। আমাদের দেশের প্রচলিত আইনে শিশুর নিজেরই সুরক্ষা পাবার আইনগত অধিকার রয়েছে। এখন সময় এসেছে মা-বাবাকে আইনের মধ্যে নিয়ে আসার।”
শিশুরা অপরাধ করলে তার বিচারের ক্ষেত্রেও প্রচলিত পদ্ধতি পরিবর্তনের উপর জোর দেন বিচারপতি হাসান আরিফ। তিনি বলেন, ‘শিশুদের ক্ষেত্রে রেস্টিটিউটিভ জাস্টিসকে (সংশোধনমূলক বিচার) বিবেচনায় নিতে হবে। অর্থাৎ শাস্তি না দিয়ে তাদের সংশোধনমূলক পন্থায় নিতে হবে।”
কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারপতি ও সুপ্রিম কোর্ট স্পেশাল কমিটি ফর চাইল্ড রাইটস (এসসিএসসিসিআর)’র চেয়ারপারসন মোহাম্মদ ইমান আলী। তিনি বলেন, “শিশুরা ক্রাইম করার প্রবণতা নিয়ে জন্মায় না। ক্রিমিনাল (অপরাধী) হয়ে জন্মায় না। পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে তারা ক্রাইমে জড়িয়ে যায়। এর জন্য দায়ী কে, সেটাও আমাদের চিন্তা করতে হবে।
বিচারপতি ইমান আলী বলেন, “অনেক সময় মা-বাবার সঠিক পরিচর্যার অভাবে শিশু খারাপ পথে চলে যায়। তাই শিশুকে কোর্ট-কাচারিতে পাঠানো সমীচীন নয়, বিকল্প পন্থায় তাদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিৎ।”
নিউজিল্যান্ডের শিশু আদালতে বিচার পর্যবেক্ষণের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আপিল বিভাগের এ বিচারক বলেন, সে দেশে থানা থেকেই ৭০-৭৫ শতাংশ শিশুকে মামলা থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। আর যে ২৫ শতাংশ থাকে তাদের থেকে আবার ১০-১৫ শতাংশ শিশুকে ডাইভারশনের (বিকল্প পন্থায়) মাধ্যমে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
শিশুদের নিয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সংবেদনশীলতার গুরুত্ব তুলে ধরে পুলিশ ও সমাজসেবা কর্মকর্তাদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন বিচারপতি ঈমান আলী। তিনি বলেন, “আমরা সবাই জানি শিশুরা নিষ্পাপ হয়, অবুঝ হয়। সবসময় ঠিক চিন্তাভাবনা করে কোনো কাজ তারা করে না। এই কথাগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে। খারাপ পথে গেলে শিশুদেরকে কিভাবে ভাল পথে নিয়ে আসা যায়, সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আর প্রবেশন অফিসার ও শিশুদের নিয়ে কাজ করা পুলিশ সদস্যদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।”
কর্মশালায় আরও বক্তব্য দেন হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী, ঢাকা মহানগর পুলিশের ডেপুটি পুলিশ কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন, সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক (ইনস্টিটিউশন) মো. আবু মাসুদ, ইউনিসেফ বাংলাদেশের শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ শাবনাজ জাহেরীন।