জাহিদুল ইসলাম:
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন থেকে বার কাউন্সিল পরীক্ষায় ১০ নম্বরের প্রশ্ন এসে থাকে। মাত্র ৫৭ টি ধারা সংবলিত (মাত্র ৫১ টি ধারা কার্যকর আছে) ছোট পরিসরের এই আইনটি বার কাউন্সিল পরীক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে একারনে যে আইনটি ছোট ব্যাপ্তির বলে তুলনামূলক কম প্রচেষ্টায় আইনটিকে রপ্ত করা সম্ভব হয়। লেখাটিতে চেষ্টা করা হয়েছে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন এর মূলভাব উপস্থাপন করতে ও পরীক্ষায় আসার উপযোগী বিষয়বস্তু বা তথ্যাবলির সারাংশ তুলে ধরতে। শেষের দিকে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের বিভিন্ন মোকদ্দমা দায়েরের তামাদিকাল ও কোর্ট ফি একসাথে একত্রিত করে উল্লেখ করা হয়েছে যাতে সহজে মনে রাখা যায়। লেখাটিতে কিছু বিশেষ তথ্যাবলি সন্নিবেশিত করা হয়েছে। লেখাটিতে সবিস্তারে আলোচনা নেই এটি একটি সারসংক্ষেপ মাত্র যা সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা অর্জনে ও পরীক্ষার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সহজে মনে রাখতে সহায়ক হবে। বিগত বার ও বিজেএস পরীক্ষায় কোন ধারা থেকে কতটি প্রশ্ন এসেছে তার একটি তালিকা এবং বিগত পরীক্ষাগুলোতে প্রশ্ন না আসলেও যেসকল ধারাগুলো পরীক্ষার জন্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ সেগুলো উল্লেখপূর্বক একটি ফটো চার্ট লেখাটির শেষে যুক্ত করা হয়েছে।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন ১৮৭৭ সালে প্রণীত একটি তত্বগত আইন (Substantive law)। মনে রাখা ভাল যে বার কাউন্সিল পরীক্ষার সিলেবাসে থাকা আইনগুলোর মধ্যে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন এবং দন্ডবিধি হলো তত্বগত আইন (Substantive law) বাকীগুলো হলো পদ্ধতিগত আইন (Procedural law)।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার বলতে যা বোঝায়
অত্র আইনের বিধানবলে (সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন) বাদী যেসকল প্রতিকার প্রার্থনা করতে পারেন তাই সুনির্দিষ্ট প্রতিকার। বাদী যে প্রতিকার প্রার্থনা করে আদালত সে প্রতিকারটি মঞ্জুর করলে বলা হয় সুনির্দিষ্ট প্রতিকার মঞ্জুর করা হয়েছে আর বাদী যে প্রতিকার প্রার্থনা করেন আদালত সে প্রতিকারটি মঞ্জুর না করে ভিন্নরূপ প্রতিকার (আর্থিক ক্ষতিপূরণ) মঞ্জুর করলে বলা হয় সুনির্দিষ্ট প্রতিকার নামঞ্জুর করা হয়েছে বা সুনির্দিষ্ট প্রতিকার প্রদান করা হয়নি।
এই সুনির্দিষ্ট প্রতিকার মঞ্জুর করা বা নামঞ্জুর করা আদালতের ইচ্ছাধীন বা সুবিবেচনামূলক ক্ষমতা (Discretionary Power)। আইনটির ২২ ধারা আদালতকে এই ক্ষমতা অর্পণ করেছে। অর্থাৎ সুনির্দিষ্ট প্রতিকার প্রদানে আদালতকে আইন দ্বারা বাধ্য করা যায়না। পরিস্থিতি বিবেচনায় আদালত ন্যায়সংগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। তবে আদালতের এই ইচ্ছাধীন বা সুবিবেচনামূলক ক্ষমতা অবশ্যই স্বেচ্ছাচারীতামূলক হবে না বরং ন্যায় বিচার সহায়ক হবে। অর্থাৎ আদালতের সিদ্ধান্ত ন্যায় বিচার পরিপন্থী হবে না বা আদালত তার খেয়ালখুশি মোতাবেক তার এই ক্ষমতাকে (Discritionary Power) ব্যবহার করতে পারবেন না।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন অনুসারে সুনির্দিষ্ট প্রতিকারসমূহ নিন্মরূপ
🔰 স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধারঃ ধারা ৮ – ১১।
🔰 চুক্তি কার্যকরঃ ধারা ১২ – ৩০।
🔰 দলিল সংশোধনঃ ধারা – ৩১ – ৩৪।
🔰 চুক্তি রদ বা বাতিলঃ ধারা ৩৫ – ৩৮।
🔰 দলিল বাতিলঃ ধারা ৩৯ – ৪১।
🔰 ঘোষনামূলক মোকদ্দমাঃ ধারা ৪২ ও ৪৩।
🔰 রিসিভার নিয়োগঃ ধারা ৪৪।
🔰 ধারা ৪৫ থেকে ৫১ বাতিল করা হয়েছে।
🔰 নিষেধাজ্ঞাঃ ধারা ৫২ – ৫৭।
৫ ধারাতে উল্লেখ আছে যে উপরোক্ত প্রকারের প্রতিকারগুলো ৫ উপায়ে বা ৫ ভাবে প্রদান করা যায়।
স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার – ধারা ৮ থেকে ১১
স্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধারঃ ধারা ৮ ও ৯।
৮ ধারা – সুনির্দিষ্ট স্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধার/মালিকানা সহ দখল পুনরুদ্ধার ।
৮ ধারার সাথে ৪২ ধারা ( দখল ও মালিকানার ঘোষনা) সংযুক্ত করে মোকদ্দমা দায়ের করতে হয়।
৮ ধারার মামলার বৈশিষ্ট
যিনি মামলা করবেন – মালিক বা স্বত্বাধিকারী।
যা প্রমান করতে হবে – মালিকানা বা স্বত্ব।
কতদিনের মধ্যে মামলা করবেন – ১২ বছর।
রায় বা ডিক্রির বিরুদ্ধে প্রতিকার – আপীল।
কোর্ট ফি – মূল্যানুপাতিক বা Ad Valorem (সম্পত্তির মূল্যমানের ওপর ২% হারে)
** মূল্যানুপাতিক কোর্ট ফি সর্বোচ্চ হতে পারে চল্লিশ হাজার টাকা।
৮ ধারা অনুসারে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যায়।
৯ ধারা – দখলচ্যুত ব্যাক্তি কর্তৃক মামলা/শুধুমাত্র দখল পুনরুদ্ধার এর মামলা।
৯ ধারার মামলার বৈশিষ্ট্য
যিনি মামলা করবেনঃ দখলচ্যুত ব্যাক্তি বা তার মাধ্যমে দাবীদার ব্যাক্তি।
যা প্রমান করতে হবেঃ দখল ও বেআইনিভাবে বা সম্মতি ব্যাতিরেকে বেদখল।
মামলা দায়ের করতে হবে – ৬ মাস এর মধ্যে।
বায় বা ডিক্রির বিরুদ্ধে প্রতিকার – রিভিশন।
৯ ধারার মামলার কোর্ট ফি – ৮ ধারায় যা দিতে হবে (মূল্যানুপাতিক) তার অর্ধেক (Half of Ad valorem)।
৯ ধারা অনুসারে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যায় না।
এই দুইটি ধারা একটু সবিস্তারে বলার প্রয়োজন ছিল একারনে যে এই দুইটি ধারা থেকে প্রশ্ন করার মত ব্যাপক তথ্য রয়েছে।
অস্থাবর সম্পত্তির দখল পুনরুদ্ধারঃ ধারা ১০ ও ১১।
চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন- ধারা ১২ থেকে ৩০
পক্ষগণ যে কাজ করতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন আদালত পক্ষগনকে তাদের দ্বায়িত্ব ও কর্তব্য অনুসারে সে কাজ সম্পাদনের আদেশ প্রদান করলে তাকে বলা যায় চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন।
উল্লেখ্য যে, চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন, চুক্তি কার্যকর, চুক্তি বলবৎ, চুক্তি প্রবল ( Specific Performance of contract) শব্দগুলো একই অর্থ বহন করে। অনেকে এগুলো গুলিয়ে ফেলতে পারেন তাই উল্লেখ করা হলো।
সকল ধরনের চুক্তি বা সর্বক্ষেত্রে চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করার প্রয়োজনীয়তা নাই।
৪ টি পরিস্থিতি বা ক্ষেত্রে চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যায় তারই উল্লেখ আছে ১২ ধারাতে।
** ১২ ধারার বিপরীতে ২১ ধারাতে উল্লেখ রয়েছে ৮ টি ক্ষেত্রে চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যায়না।
অর্থাৎ যেসকল চুক্তি সুনির্দিষ্ট ভাবে কার্যকর করা যায় তার উল্লেখ আছে ১২ ধারায় (৪ টি ক্ষেত্র)।
যেসকল চুক্তি সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যায়না তার উল্লেখ আছে ২১ ধারায় (৮ টি ক্ষেত্রে) ।
১৩ ধারাতে উল্লেখ আছে চুক্তি সম্পাদন কালীন সময়ে চুক্তির বিষয়বস্তু পুরোটা বিদ্যমান থাকলেও চুক্তি কার্যকর হওয়ার পূর্বে চুক্তির বিষয়বস্তু আংশিক বিলুপ্ত হলেও সেই চুক্তি কার্যকর করা যায়।
১৪, ১৫, ১৬ ধারা আংশিক চুক্তি কার্যকর বিষয়ে আলোচনা করেছে।
১৮ ধারাঃ ত্রুটিপূর্ণ মালিকানা বা স্বত্বসম্পন্ন বিক্রেতার বিরুদ্ধে ক্রেতার অধিকার।
১৯ ধারাঃ আদালত একইসাথে চুক্তির কার্যসম্পাদন এবং ক্ষতিপূরণ মঞ্জুরের আদেশ দিতে পারে।
২০ ধারাঃ ক্ষতিপূরণ প্রদানের সম্মতি সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদনেকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে না।
২৯ ধারাঃ চুক্তির সুনির্দিষ্ট কার্যসম্পাদন এর মামলা খারিজ হয়ে গেলে বাদী নতুন করে সেই চুক্তি ভঙ্গের দায়ে ক্ষতিপূরণ এর মামলা দায়ের করতে পারেন না। যাকে বলে খারিজের পরে ক্ষতিপূরণ এর মামলা দায়েরে প্রতিবন্ধকতা।
দলিল সংশোধনঃ ধারা ৩১ – ৩৪
ধারা ৩১ঃ কোন চুক্তি বা লিখিত দলিল যদি সম্পাদিত হয়-
প্রতারণার মাধ্যমে।
পারস্পরিক ভুলের দরুন।
তাহলে ওই লিখিত চুক্তি বা দলিলের যে কোন পক্ষ বা তাদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি তা সংশোধন এর জন্য মামলা দায়ের করতে পারেন।
তবে দলিল সংশোধন এর আদেশ দ্বারা সরল বিশ্বাসে ও মূল্যের বিনিময়ে অর্জিত কোন অধিকারে হস্তক্ষেপ করা যায়না।
মামলা দায়ের করবেঃ দলিলের পক্ষ বা তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি।
*কোন লিখিত চুক্তি সংশোধন এর পর তা সুনির্দিষ্টভাবে কার্যকর করা যেতে পারে (ধারা ৩৪)।
চুক্তি রদ বা চুক্তি বাতিলঃ ধারা ৩৫ থেকে ৩৮
ধারা ৩৫ঃ নিন্মলিখিত ক্ষেত্রে আদালত চুক্তি বাতিল করতে পারেন-
*চুক্তিটি বাদী কর্তৃক সমাপনযোগ্য বা বাতিলযোগ্য।
* চুক্তিটি অবৈধ এবং এক্ষেত্রে বিবাদীর দোষ বাদীর থেকে বেশি।
* বিক্রয় বা ইজারা চুক্তির কার্যসম্পাদনের ডিক্রি পাওয়ার পরেও ক্রেতা বা ইজারাগ্রহীতা অর্থ পরিশোধে ব্যার্থ হলে।
মামলা দায়ের করবেঃ লিখিত চুক্তিতে স্বার্থসংশ্লিষ্ট যে কোন ব্যক্তি।
দলিল বাতিলঃ ধারা ৩৯ – ৪১
ধারা ৩৯ঃ কোন বাতিল বা বাতিল যোগ্য (অসত্য, জাল বা প্রতারনামূলকভাবে প্রস্তুতকৃত) দলিল দ্বারা যেকোন ব্যাক্তি যার গুরতর ক্ষতির আশংকা আছে সে ব্যাক্তি উক্ত দলিল বাতিল বা বাতিলযোগ্য ঘোষনা চেয়ে মামলা দায়ের করতে পারে।
আদালত যদি কোন রেজিস্ট্রিকৃত দলিল বাতিল ঘোষনা করে তাহলে ডিক্রির একটি কপি সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রি অফিসে প্রেরন করবে।
মামলা দায়ের করতে পারেঃ গুরতর ক্ষতির আশংকা আছে এমন যে কোন ব্যাক্তি।
দলিল আংশিকভাবেও বাতিল করা যায় – ধারা ৪০
***লক্ষ্যনীয়ঃ ৩৫ ধারা অনুসারে চুক্তি বাতিল বা চুক্তি রদ এর মামলা দায়ের করতে পারে লিখিত চুক্তিতে স্বার্থ আছে এমন যেকোন ব্যাক্তি। ৩৯ ধারা অনুসারে দলিল বাতিল এর মামলা করতে পারে ওই দলিল দ্বারা গুরতর ক্ষতির আশংকা আছে এমন যে কোন ব্যাক্তি। কিন্তু ৩১ ধারা অনুসারে দলিল সংশোধন এর মামলা দায়ের করতে পারে দলিলের পক্ষ বা স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধি। অর্থাৎ চুক্তি রদ ও দলিল বাতিলের মামলায় ওই চুক্তি বা দলিলের পক্ষ থাকার প্রয়োজন নেই। কিন্তু দলিল সংশোধন চাইতে হলে দলিলের পক্ষ থাকার প্রয়োজন আছে।
ঘোষনামূলক ডিক্রিঃ ধারা ৪২ – ৪৩
৪২ ধারাঃ আইনগত পরিচয়ধারি বা সম্পত্তির অধীকারী ব্যাক্তি তার এরূপ আইনগত পরিচয় বা সম্পত্তির অধিকার অস্বীকারীদের বিরুদ্ধে ঘোষনামূলক মোকদ্দমা দায়ের করতে পারেন।
ঘোষনামূলক মোকদ্দমা দায়ের হয় দুইটি ক্ষেত্রে –
** আইনগত পরিচয় অস্বীকারকারী বিরুদ্ধে
** সম্পত্তির অধিকার অস্বীকারকারীর বিরুদ্ধে
বাদী যেক্ষেত্রে মালিকানার ঘোষনা ছাড়াও আরও প্রতিকার পেতে পারে (আনুষাঙ্গিক প্রতিকার) কিন্তু তা চায়না সেক্ষেত্রে আদালত ঘোষনা প্রদান করবেন না। যেমনঃ ৮ ধারার মামলায় বাদী মালিকানার ঘোষনা ও দখল পুনরুদ্ধার পেতে পারে। কিন্তু বাদী যদি শুধুমাত্র মালিকানার ঘোষনা চেয়ে দখল পুনরুদ্ধার এর প্রতিকার না চায় তবে সেক্ষেত্রে আদালত ঘোষনা প্রদান করবেন না।
তত্ত্বাবধায়ক বা রিসিভার নিয়োগঃ ধারা ৪৪
৪৪ ধারাঃ বিচারাধীন মামলার বিষয়বস্তু রক্ষনাবেক্ষন এর জন্য আদালত তার সুবিবেচনাক্রমে তত্ত্বাবধায়ক বা রিসিভার নিয়োগ করতে পারেন।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৪৪ ধারাতে রিসিভার নিয়োগের কথা থাকলেও রিসিভার এর নিয়োগ, দায়-দ্বায়িত্ব, অধিকার নিয়ন্ত্রিত হয় দেওয়ানী কার্যবিধি আইন এর ৪০ আদেশ দ্বারা।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের বিভিন্ন মামলার তামাদির মেয়াদ নিন্মরূপ
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের বিভিন্ন মামলার কোর্ট ফি নিন্মরূপ
নিরোধক প্রতিকার/নিষেধাজ্ঞাঃ ধারা ৫২ – ৫৭
কোন কাজ করা থেকে বিরত থাকার জন্য বা কোন কাজ করার জন্য আদালতের নির্দেশ হচ্ছে নিষেধাজ্ঞা।
সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন অনুসারে নিষেধাজ্ঞা ৩ প্রকার –
** অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা – ধারা ৫৩।
** চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা – ধারা ৫৩।
** বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা – ধারা ৫৫।
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ও চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দ্বারা কোন কাজ করা হতে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়।
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বা আদালতের পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বজায় থাকে। চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার দ্বারা বিবাদী কে চিরস্থায়ীভাবে কোন কাজ করা হতে বিরত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়। অস্থায়ী ও চিরস্থায়ী উভয় নিষেধাজ্ঞার সঙ্গা প্রদান করা হয়েছে ৫৩ ধারাতে।
বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞার দ্বারা কোন কাজ করতে (কৃত অন্যায় কাজ অপসারণ করতে) বাধ্য করা হয় । ৫৫ ধারাতে বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞার সঙ্গা দেয়া হয়েছে।
অস্থায়ী ও চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে নিরোধক প্রতিকার বা প্রতিরোধমূলক প্রতিকার।
কিন্তু বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা হচ্ছে একটি আদেশাত্মক প্রতিকার।
ধারা ৫৪ – যেসকল ক্ষেত্রে চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা হয় এমন ৫ টি ক্ষেত্র উল্লেখ করা হয়েছে এই ধারাটিতে।
ধারা ৫৬ – যেসকল ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা মঞ্জুর করা হয়না এমন ১১ টি ক্ষেত্রের উল্লেখ আছে।
নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কিত কিছু মৌলিক তথ্য
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইনের ৫৩ ধারাতে উল্লেখ থাকলেও অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা নিয়ন্ত্রিত হয় দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৩৯ আদেশ দ্বারা। ঠিক যেমনটি আমরা দেখেছি যে রিসিভার নিয়োগের বিষয়ে এই আইনের ৪৪ ধারায় বলা হলেও তা নিয়ন্ত্রিত হয় দেওয়ানী কার্যবিধির ৪০ আদেশ দ্বারা।
তাহলে বলা যায় অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা নিয়ন্ত্রিত হয় দেওয়ানী কার্যবিধি অনুসারে আর চিরস্থায়ী ও বাধ্যতামূলক নিষেধাজ্ঞা নিয়ন্ত্রিত হয় সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন অনুযায়ী।
অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মামলার যে কোন পর্যায়ে প্রদান করা যেতে পারে। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয় দরখাস্তের মাধ্যমে, আদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করেন আদেশ এর মাধ্যমে।
চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা মামলার চুড়ান্ত নিষ্পত্তির মাধ্যমে প্রদান করা যেতে পারে। চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয় আরজির মাধ্যমে, আদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করেন ডিক্রির মাধ্যমে।
সুতরাং বলা যায়, অস্থায়ী নিষেধার সিদ্ধান্ত হচ্ছে একটি আদেশ আর চিরস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত হচ্ছে একটি ডিক্রি। অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আদেশ অমান্যের শাস্তি ৬ মাস পর্যন্ত হতে পারে।
ধারা ৫৭ঃ নেতিবাচক চুক্তি পালনে নিষেধাজ্ঞা – কোন চুক্তির হাবোধক কার্যসম্পাদন সম্ভব না হলে নাবোধকভাবে কার্যকর করা যায়।
কোন ধারা থেকে কতটি প্রশ্ন বিগত বার ও বিজেএস পরীক্ষায় এসেছে তার তালিকা ও গুরুত্বপূর্ণ ধারার তালিকা নিন্মরূপ
সকল পাঠককে ধন্যবাদ ও সকল পরীক্ষার্থীদের।
লেখক : আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট।