বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) নির্ধারিত আসনের চেয়ে বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করায় আইন বিষয়ে স্নাতক ১১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আসন নির্ধারণের আগেই এসব শিক্ষার্থী আইন বিষয়ে স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি হলেও তাদের আইনজীবী তালিকাভুক্তির পরীক্ষার নিবন্ধন ও ফরম পূরণের অনুমতি দেয়নি আইনজীবীদের তদারককারী সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। এরই মধ্যে নিবন্ধন ও ফরম পূরণের সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন এসব শিক্ষার্থী। ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কায় আছেন তারা।
এ জন্য শিক্ষার্থীরা দায়ী করছেন বার কাউন্সিলের স্বেচ্ছাচারিতা ও খাম খেয়ালিপনাকে। তাদের মতে সেমিস্টার প্রতি শিক্ষার্থীর ভর্তির তালিকা বার কাউন্সিলে পাঠানোর পর বার কাউন্সিল আপত্তি জানালে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতো না। স্নাতক হওয়ার পর শিক্ষানবীশ আইনজীবীর ফরম পূরণের সময়েও কোনো বাধা দেওয়া হয়নি তাদের। নিবন্ধন কার্যক্রম শেষের দিকে এসে তাদের নিবন্ধন ও ফরম পূরণ করতে দেওয়া হচ্ছে না। আকস্মিক এ কাণ্ডে এসব শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন।
জানা গেছে, ১১ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হাজার শিক্ষার্থী নিবন্ধন ও ফরম পূরণ করতে পারছে না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো-সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইসলামী ইউনিভার্সিটি, আশা ইউনিভার্সিটি, আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম, প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি ও টাইমস ইউনিভার্সিটি ফরিদপুর।
নিরুপায় শিক্ষার্থীরা নিবন্ধন ও ফরম পূরণে ব্যর্থ হয়ে দ্বারস্থ হয়েছেন উচ্চ আদালতের। তাদের পৃথক রিট আবেদনে শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ও ফরম পূরণের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পরে বার কাউন্সিলের আবেদনে হাইকোর্টের ওই নির্দেশনা স্থগিত হয়ে গেছে আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালতে। আগামীকাল সোমবার (১৪ অক্টোবর) আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে।
এ বিষয়ে বার কাউন্সিলের সচিব মো. রফিকুল ইসলাম বলেছেন, নিবন্ধন ও ফরম পূরণের বিষয়টি বিচারাধীন। ১৪ অক্টোবর আপিল বিভাগ যে আদেশ দিবেন বার কাউন্সিল তাই মেনে নিবে। শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন ও ফরম পূরণের নির্দেশ দেওয়া হলে আমরা তা পালন করবো।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল ইউজিসি আইন বিষয়ে শিক্ষার্থী ভর্তিতে ৫০ জনের আসন নির্ধারণ করে দেয়। ওই নির্দেশনা অনেকে মানেনি। যারা নির্দেশনা অমান্য করে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করেছিল তাদেরই নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। আমরা এখানে ইউজিসির সিদ্ধান্ত অনুসরণ করেছি মাত্র। তিনি জানান, চট্টগ্রামের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটি একটি ব্যাচে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি করেছিল। এতো শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমোদন কি ইউজিসি দিয়েছে? তাদের নিবন্ধন দেওয়া কি ঠিক হবে?
অন্যদিকে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ৪১ শিক্ষার্থীর রিট আবেদনের আইনজীবী এবিএম শাহজাহান আকন্দ বলেন, ২০১৪ সালের ২৩ এপ্রিল আইন বিষয়ে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ইউজিসি। তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আইন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভর্তির তালিকা পাঠায় বার কাউন্সিলে। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ৫৫ ব্যাচে ৮৭ জন, ৫৬ ব্যাচে ১০ জন এবং ৫৭ ব্যাচে ১১০ জন ভর্তি হয়েছিল। এ তালিকা পাঠানোর পর বার কাউন্সিল কোন প্রশ্ন বা আপত্তি জানায়নি। এখন কেন এই তিনটি ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন দিচ্ছে না?
এই আইনজীবী বলেন, ১৫ বছর আগে স্টামফোর্ড, ইস্টার্ন, সাউথইস্ট, নর্দান ইউনিভার্সিটির আইন অনুষদের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ২০১৪ ও ২০১৫ সালে আরো কয়েকটি ইউনিভার্সিটি আইন অনুষদ চালু করে। স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি সামার, ফল ও স্প্রিং সেমিস্টারে ভর্তি হয় ১২০ জন করে। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় আছে যেগুলোতে ভর্তি হয় ৫ জন। এতো কম শিক্ষার্থী নিয়ে তারা ইউনিভার্সিটি চালাবে কিভাবে? তাদের আইন অনুষদে ৭০ জনের মতো করে শিক্ষক রয়েছে। তারা এতো কম শিক্ষার্থী নিয়ে কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয় চালাবে।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল আপিল বিভাগের রায়ে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতার বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি। যেহেতু ভূতাপেক্ষতার বিষয় নেই সেহেতু আমরা ভবিষ্যতের বিষয় বলে ধরে নিতে পারি। স্টামফোর্ডের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়েছিল ২০১৪ সালে। চার বছর পর ২০১৭ সালের রায়ের দোহাই দিয়ে তাদের নিবন্ধন ও ফরম পূরণ করতে দেওয়া হবে না এটা বার কাউন্সিলের বিমাতাসূলভ আচরণ। এ চার বছর ওরা পড়লো কেন?। ২০১৪ সালে যখন শিক্ষার্থীর তালিকা পাঠানো হলো তখন না করলে তারা ভর্তি হতো না।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে স্নাতক শিক্ষার্থী মো. আসাদুজ্জামান বলেন, আমি আইন অনুষদে ভর্তি হয়েছিলাম ২০১৪ সালের ৯ মার্চ। আমার সেমিস্টার শুরু হয় ওই বছরের ১৫ এপ্রিল। আটদিন পর ইউজিসি ৫০ আসন নির্ধারণের বিজ্ঞপ্তি জারি করে। স্বাভাবিকভাবে আমি ওই বিজ্ঞপ্তির আওতায় পড়ি না। তাছাড়া আমাদের সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের তালিকা বার কাউন্সিলে পাঠানোর পর তারা আমাদের নিষেধ করেনি। আমি শিক্ষানবীশ আইনজীবীর ফরম পূরণ করেছি ১৭ মাস হলো। গত এক বছর ধরে পরীক্ষার জন্য কোচিং করেছি। এখন আমাকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা বার কাউন্সিলের স্বেচ্ছাচারিতা ও খামখেয়ালিপনা।
আগামী ২২ নভেম্বর বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তি পরীক্ষা হবে। এক দফা সময় বাড়ানোর পর গত ৩ অক্টোবর নিবন্ধন ও ফরম পূরণের সময়সীমা শেষ হয়েছে। এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফরম পূরণের শেষ সময় ছিল।
এর আগে ঢাকা ইন্টারন্যাশনালের ৭৫ জন, স্টামফোর্ডের ৪১ জন, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ৬৫ জনসহ আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিষয়ে স্নাতক শিক্ষার্থীদের আইনজীবী তালিকাভুক্তির পরীক্ষায় নিবন্ধন ও ফরম পূরণের সুযোগ দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কিন্তু ইস্টার্ন ও ঢাকা ইন্টারন্যাশনালের রিটে হাইকোর্টের আদেশ চেম্বার জজ আদালতে আটকে গেছে।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) এ বিষয়ে আপিল বিভাগের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। গত ১ অক্টোবর বার কাউন্সিলের সচিব মো. রফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৩ এপ্রিল ২০১৪ সালের বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) স্মারক উল্লেখ করে বলা হয়েছে, দেশের সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে এলএলবি প্রোগ্রামে প্রতি সেমিস্টারে সর্বোচ্চ ৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করতে পারবে না মর্মে নির্দেশনা প্রদান করে। ওই নির্দেশনার আলোকে সেমিস্টার প্রতি ৫০ জনের বেশি কোন এলএলবি (অনার্স) শিক্ষার্থীকে বার কাউন্সিল এনরোলমেন্ট (তালিকাভুক্তি) পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন কার্ড প্রদান করবে না। সূত্র- বার্তা২৪.কম