বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনা এবং দলটির আইনজীবী সংগঠনের কমিটি নিয়ে নেতাকর্মীদের দ্বন্দ্ব এখন চরম আকার ধারণ করেছে। ফলে প্রায় ১১ বছর পর বিএনপি সমর্থিত সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলেও সেই নেতৃত্বকে মানতে চাইছেন না দলের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী। এই কমিটিকে কেন্দ্র করে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে কয়েক দফা বিক্ষোভ, গ্রুপ সভা, এমনকি পদত্যাগের ঘটনাও ঘটেছে।
নতুন এ আহ্বায়ক কমিটি গঠনের আগে টানা ১০ বছর ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এই ফোরামের সভাপতি এবং ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করেন। দলীয় আইনজীবীদের মধ্যে চলে আসা দীর্ঘদিনের অসন্তোষের কারণে এ বছরের ৩১ জানুয়ারি ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু সেই কমিটিও গত আট মাসে সম্মেলন করার লক্ষ্যে কোনও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। সর্বশেষ গত ৩ অক্টোবর রাতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেনকে আহ্বায়ক এবং অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে সদস্য সচিব করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ১৭৯ সদস্যের নতুন কমিটির অনুমোদন দেয় বিএনপি।
অথচ দীর্ঘ ১১ বছরে একবারের জন্যও সম্মেলন দিতে না পারায় দলের কয়েকজন ক্ষুব্ধ আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে জানান, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে থাকা ৩৭টি মামলা পরিচালনা নিয়ে দলের আইনজীবীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের একটি দ্বন্দ্বপূর্ণ মনোভাব চলে আসছে। খালেদা জিয়ার কোন মামলা দলের কোন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী নেতার চেম্বার থেকে প্রস্তুত হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে মতবিরোধ সৃষ্টিও হয়েছে। তবে আপাতত তার মামলা নিয়ে আইনজীবী নেতাদের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব না থাকলেও তীব্র ক্ষোভ ও বিতর্ক উঠেছে সদ্য ঘোষিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি নিয়ে।
কমিটির বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কমিটি হয়েছে শুনেছি। তবে এর বেশি কিছু জানি না।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফোরামের নতুন কমিটিতে খালেদা জিয়ার মামলা পরিচালনা এবং দলের মিছিল, কিংবা সভায় নিয়মিত থেকেও অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী জায়গা করতে পারেননি। ফোরামের আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব কে হবেন, তা ঠিক করে দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে ফোরামের নতুন আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব ছাড়া আর যারা কমিটিতে আছেন, তাদের নেতৃত্ব মানতে নারাজ পেশাজীবী এই সংগঠনের অনেকেই। এ কারণে ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে দু’বার ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে চারবার গ্রুপ সভা ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বিক্ষুব্ধরা।
এদিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও ফোরামের সাবেক সদস্য সচিব ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন নতুন কমিটির বিষয়ে কিছুই জানেন না দাবি করে এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতেও রাজি হননি।
নতুন কমিটিতে যোগ্যতা অনুযায়ী পদ না পাওয়া এবং দলের যোগ্য ও ত্যাগী আইনজীবী নেতাদের না রাখার কারণে এ পর্যন্ত মোট ৯ জনের পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে।
কমিটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্বদানকারী আইনজীবী মনির হোসেন জানান, দীর্ঘদিন ধরে দলের প্রয়োজনে আমরা কাজ করেছি। এতদিন কমিটি না থাকলেও আমরা সবাই ফোরামে সুখে-দুঃখে পাশে থেকেছি। অথচ এখন কমিটি হলো কিন্তু কমিটিতে যোগ্য ও ত্যাগী নেতাদের কোনও রকম মূল্যায়ন করা হলো না।
তিনি বলেন, ‘কমিটির আহ্বায়ক ও সদস্য সচিব যোগ্য, তাই তাদের নেতৃত্ব মানতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে যারা ফোরামের দুর্দিনে পাশে ছিল না, তাদের কেন কমিটিতে সুযোগ দেওয়া হলো? কেন দেশের বিভিন্ন আইনজীবী সমিতির জ্যেষ্ঠ নেতাদের বাদ দিয়ে জুনিয়রদের কমিটিতে ওপরের দিকের সদস্য করা হলো?’
নতুন কমিটির বিষয়ে বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে না দিয়ে নিজেদের মধ্যকার ভুলভ্রান্তি সংশোধনের কথা ভাবছেন ফোরামের নতুন আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, ‘সম্মেলন দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন পর ফোরামের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমাদের ফোরামটি একটি বড় সংগঠনে রূপ নিয়েছে। এখানে ভুলভ্রান্তি হতেই পারে। তবে সব সমস্যা কাটিয়ে আমরা যোগ্যদের মূল্যায়ন করতে পারবো বলে বিশ্বাস করছি। সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি, তাই পদবঞ্চিতরা আগামীতে সুযোগ পাবেন বলেই মনে করছি।’ বাংলা ট্রিবিউন