ব্যাংক ও আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বন্ধে কমিশন গঠনের পক্ষে মত দিলেও তা থেকে সরে এসেছে দুদক। একদিন আগে লিখিতভাবে হাইকোর্টে দাখিল করা বক্তব্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থাটি। একইসঙ্গে, কমিশন গঠনের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপনকারী আইনজীবীকে মামলার পরিচালনার দায়িত্ব থেকে বাদ দিয়ে নতুন আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছে দুদক।
সোমবার দুদকের পক্ষ থেকে কমিশন গঠনের অভিমত দিয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে লিখিত মতামত দাখিল করেন দুদকের আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম। এর একদিন পরই মঙ্গলবার দুদকের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট মামলার আইনজীবী বদল করা হয়। এই মামলা পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আইনজীবী ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিমের পরিবর্তে দুদকের অপর আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খানকে এই মামলায় আইনজীবী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
আদালতে এদিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন মনজিল মোরসেদ। সার্কুলারের পক্ষে ব্যারিস্টার শামীম খালেদ ও মুনিরুজ্জামান। ব্যাংক অ্যসোসিয়েশনের পক্ষে অ্যাডভোকেট শাহ মনজুরুল হক। দুদকের পক্ষে ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম।
আদালতে কমিশন গঠনের পক্ষে দেয়া মতামতে বলা হয়, কমিশন অ্যাক্ট এর ধারা -৩ অনুযায়ী ব্যাংকিং ইনকোয়্যারি কমিশন গঠন করা হলে সেটি ব্যাংকিং এবং অর্থনীতি খাতে যে মৌলিক সংকট রয়েছে তা চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে। পাশাপাশি ব্যাংক ও অর্থনীতি খাতের দুর্নীতি ও অনিয়ম দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অন্যদিকে এ মামলায় নবনিযুক্ত দুদক আইনজীবী অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান সাংবাদিকদের বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দুদকের স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ নেই। তাই কমিশন গঠন বিষয়ে যে বক্তব্য দাখিল করা হয়েছে তা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
খুরশীদ আলম খান জানান, দুদকের দাখিল করা হলফনামায় কিছু তথ্যগত ভুল রয়েছে। সেটা সংশোধনের আবেদন জানানো হবে।
এর আগে, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বন্ধে সংশ্লিষ্টদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, শৃঙ্খলা ফেরাতে কমিশন গঠনের কেন নির্দেশ দেয়া হবে না এবং এই কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।
এছাড়াও রুলে ২ শতাংশ সুদ জমা দিয়ে ১০ বছরের জন্য ঋণ পুনঃ তফসিলের জন্য গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা প্রজ্ঞাপন কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চাওয়া হয়।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা এক রিট আবেদনে গত ২৩ জুলাই জারি করা এই রুলের ওপর ১৩ অক্টোবর থেকে শুনানি চলছে। এই শুনানিতে দুদকের পক্ষ থেকে হাইকোর্টে লিখিত বক্তব্য দাখিল করা হয়।
পরবর্তীতে ২৪ জুন বাংলাদেশ সিলগালা করে ঋণখেলাপিদের তালিকা হাইকোর্টে দাখিল করেছিলেন।
এর মধ্যে গত ১৬ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট সংক্রান্ত সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়। এরপর রিটকারীদের আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২১ মে ওই সার্কুলারের ওপর ২৪ জুন পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার জন্য আদেশ দিয়েছিলেন আদালত।
এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২ জুলাই আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ৮ জুলাই পর্যন্ত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। ৮ জুলাই এ স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরও দুই মাস বাড়ান। তবে যারা ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের সুবিধা নেবেন তারা নতুন করে ঋণ নিতে পারবেন না। এছাড়া বিচারপতি জে বি এম হাসানের নেতৃত্বাধীন কোর্টে এ রিট মামলা শুনানি করতে বলেন।
সে আদেশ অনুসারে রিট মামলাটি উক্ত আদালতের কার্যতালিকায় ওঠে। রুল শুনানি অবস্থায় ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট নিয়ে আদালতের আদেশের কয়েকবার বাড়িয়েছেন।
এ রুল শুনানিতে সোমবার ব্যারিস্টার হাসান এমএস আজিম আর্থিক খাতে অনিয়ম, দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা বন্ধে কমিশন গঠনের পক্ষে মত দিয়ে হলফনামা দেন। এর পরদিন দুদক আইনজীবীর দায়িত্ব থেকে তাকে বদলি করা হয়।