শক্তিশালী নেতৃত্ব ও স্থিতিশীল সরকার বাংলাদেশকে উন্নয়নের মডেল করে তুলেছে বলে মন্তব্য করে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, পাশাপাশি সুশাসন, অব্যাহত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সুষ্ঠু সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি এবং সঠিক উন্নয়নের অগ্রাধিকার বাংলাদেশকে এক অনন্য উন্নয়নের মডেল করে তুলেছে।
মরক্কোর প্রাচীন রাজধানী মারাকাসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক বিচার সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। জাস্টিস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট : চ্যালেঞ্জ অ্যান্ড স্টেকস- প্রতিপাদ্যে গত ২১ ও ২২ অক্টোবর দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ড. রেজাউল করিম এসব তথ্য জানান।
সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ আর্থসামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব ও অসাধারণ সাফল্য অর্জন শুরু করে এবং তথাকথিত ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে বাংলাদেশ এখন বিস্ময়কর উন্নয়নের দেশে পরিণত হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের জন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। ফলস্বরূপ, বিশ্ব সম্প্রদায় বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক আউটলুক- ২০১৯ বাংলাদেশকে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এইচএসবিসি ২০১৮ সালের প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে ২৬ তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এবং বিশ্বের তিনটি দ্রুততম অর্থনীতির দেশের একটি।
আনিসুল হক বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে রূপান্তর করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। ২০২১ সালের লক্ষ্য অর্জন করতে বাংলাদেশকে জিডিপির বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশ অর্জন এবং তা বজায় রাখতে হবে। দারিদ্র্যসীমা ও বেকারত্বের হারকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। কর্মসংস্থানে কৃষি, শিল্প ও সেবার খাতের অবদানকে যথাক্রমে ৩০ শতাংশ, ২৫ শতাংশ এবং ৪৫ শতাংশে রূপান্তর করতে হবে। এসব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। সেজন্য সরকার বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এ বছরের জানুয়ারিতে পরপর তৃতীয়বারের মতো দায়িত্ব গ্রহণের পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের প্রতি তার জিরো টলারেন্স নীতিকে আরও জোরদার করেছেন।
মন্ত্রী বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ সহজতর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশে ওয়ান স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) চালু করা হয়েছে। এটি মূলত একটি ওয়েবভিত্তিক পোর্টাল যা কোনো বিনিয়োগকারী বিশ্বের যেকোনো জায়গা থেকে প্রবেশ করতে পারে। এখন পর্যন্ত ১৫টি ক্লায়েন্ট পরিষেবা এই অনলাইনে চালু করা হয়েছে। আগামীতে ওএসএস ব্যবস্থায় ১৫০টি পরিষেবা অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশ কয়েক বছর ধরে কর অবকাশ, নীতিগত প্রণোদনা, মূল যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য শুল্কমুক্ত সুবিধা, ১০০ ভাগ বিদেশি মালিকানা, ১০০ ভাগ মুনাফা দেশে ফেরত নিয়ে যাওয়ার সুবিধা, মুনাফা বা লভ্যাংশের পুনর্বিনিয়োগ, মাল্টিপল ভিসা, বিদেশি কর্মকর্তাদের ওয়ার্ক পারমিট, স্থায়ী বাসিন্দা বা এমনকি নির্দিষ্ট পরিমাণে বিনিয়োগের জন্য নাগরিকত্ব, রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) সুবিধা এবং সহজ ঝামেলামুক্ত প্রস্থান সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে।
আনিসুল হক বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি দ্রুত বর্ধমান অর্থনীতির দেশ। এটি ১৬০ মিলিয়ন জনসংখ্যার বাজার এবং তাদের ক্রয় ক্ষমতা দিন দিন বাড়ছে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে উৎপাদনের উপকরণগুলোর দাম সস্তা। বাংলাদেশ ইউরোপীয়, কানাডিয়ান, অস্ট্রেলিয়ান এবং জাপানি বাজারগুলিতে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার ভোগ করে।
মন্ত্রী বলেন, স্পেকটেটর সূচক ২০১৯ অনুসারে বাংলাদেশ গত ১০ বছরে সর্বাধিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। বিগত দশ বছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে গড়ে সাত শতাংশ। এটি গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮.১৩ শতাংশে পৌঁছেছিল এবং চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৮.২ শতাংশ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। এখন মূল্যস্ফীতি হ্রাস পেয়ে ৫.৪ শতাংশ; মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে ১৯০৯ মার্কিন ডলার; বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি পেয়ে ৩২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি; রফতানি আয় প্রায় তিনগুণ বেশি হয়ে ৪১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং মানব উন্নয়ন সূচক বার্ষিক ১.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার সরকার এখন ‘ভিশন- ২০২১’ অর্জনের কাছাকাছি। তার সরকার ভিশন- ২০২১ অর্জনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের ভিশন অর্জনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। এই দর্শনের ওপর ভিত্তি করে, বাংলাদেশে এখন একটি বিশাল আর্থ-সামাজিক রূপান্তর শুরু হয়েছে।