ঢাকা ওয়াসার পানি পরিশুদ্ধের পর নমুনা পরীক্ষা করার জন্য গঠিত চার সদস্যের বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আরও এক মাস সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
রাষ্ট্রপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার (৩০ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি জে. বি. এম. হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
পানি পরিশুদ্ধের পর ওয়াসার পানিতে ক্ষতিকর কিছু আছে কি না সে বিষয়ে মতামতসহ প্রতিবেদন জমা দিতে রাষ্ট্রপক্ষের করা সময় আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ২৭ নভেম্বর পরর্বতী শুনানির দিন ঠিক করেছেন আদালত।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুর্টি অ্যাটের্নি জেনারেল ব্যারিস্টার নুর উস-সাদিক। অন্যদিকে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তানভীর।
উল্লেখ্য, রাজধানীর মিরপুর ও পাতলা খান লেনের পানির নমুনা আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পরীক্ষার ফলাফলে ফিকাল কলিফর্ম ও ই-কোলাই ব্যাকটেরিয়া পাওয়া যায়নি বলে আদালতকে জানান ঢাকা ওয়াসার আইনজীবী। যদিও ঢাকা ওয়াসার পানির নমুনা পরীক্ষায় চার সদস্যের কমিটির প্রতিবেদনে ওই দুই স্থানে কলিফর্ম ও ই-কোলাইয়ের উপস্থিতির কথা এসেছে। তাই এ কমিটিকে ওয়াসার প্রতিবেদনের ওপর (২৩ অক্টোবরের) মতামত দিতে বলা হয়েছিল।
আজ আবার শুনানিতে সময় আবেদন করার পর আদালত তা মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
এর আগে গত ৩১ জুলাই এ বিষয়ে শুনানি হয়। ওইদিন (৩১ জুলাই) শুনানিকালে আদালত বলেন, ‘ওয়াসার কাজ সুপেয় বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করা, যা চলমান প্রক্রিয়া।’
এর আগে আদালতের আদেশে গঠিত চার সদস্যের কমিটি বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আইসিডিডিআরবির পরীক্ষাগারে পানির নমুনা পরীক্ষা করে প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনটি গত ৭ জুলাই আদালতে দাখিল করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, উৎসসহ ঢাকা ওয়াসার বিভিন্ন জোন থেকে সংগৃহীত পানির ৩৪টি নমুনার মধ্যে আটটিতে ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ পাওয়া গেছে। এ দূষণ রোধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলেও কমিটির সুপারিশে বলা হয়। সেদিন (৭ জুলাই) শুনানি নিয়ে আদালত এ প্রতিবেদনের বিষয়ে হলফনামা আকারে বক্তব্য ওয়াসাকে দুই সপ্তাহের মধ্যে আদালতে দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে ২৪ জুলাই আদেশের জন্য দিন রাখেন। ধার্য তারিখে ওয়াসার আইনজীবী সময়ের আরজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালত ৩০ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করেন।
এর ধারাবাহিকতায় আজ ওয়াসার আইনজীবী এ এম মাছুম আদালতে ওই দুই স্থানের (মিরপুর ও পাতলা খান লেন) পানি পরীক্ষার ফলাফল ও তাদের কার্যক্রম তুলে ধরেন। রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মো. তানভীর আহমেদ।
এর আগে গত বছরের ১২ অক্টোবর ‘অনিরাপদ পানি পান করছে সাড়ে সাত কোটি মানুষ’ শিরোনামে একটি জাতীয় পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ প্রতিবেদন যুক্ত করে একই বছরের ১৪ অক্টোবর রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন এবং ওয়াসার পানির মান পরীক্ষায় চার সদস্যের কমিটি গঠন করতে বলেন। এরপর গত ১৮ এপ্রিল স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
চার সদস্যের এই কমিটি তখন তিন দফা সুপারিশ করে। সুপারিশে বলা হয়, নিরীক্ষায় শনাক্ত হওয়া সরবরাহকৃত এলাকায় ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণ রোধে যথাযথ কর্তৃপক্ষের এখনই পদক্ষেপ নেয়া উচিত। সমস্যাপ্রবণ এলাকায় সুপেয় পানি নিশ্চিত করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পরিবারে বা খানায় পানির মান সার্বিক পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সব পরিবারে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।