ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে প্রজনন মৌসুমের সঙ্গে সমন্বয় করে এবার ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা, বেচাকেনা, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মৎস্য বিভাগ। সে হিসেবে বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাত ১২টায় উঠে গেছে ইলিশের প্রজনন মৌসুমের এ নিষেধাজ্ঞা।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা শুরুর সময় গত ৯ অক্টোবর থেকে বরিশাল বিভাগের সর্বোত্র চলছে মৎস বিভাগের নেতৃত্বে অভিযান। যে অভিযানে জেলা-উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড, নৌ-বাহিনীসহ বিভিন্ন বাহিনী সহায়তা করেছে।
মৎস অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ তারিখ থেকে বুধবার (৩০ অক্টোবর) দিনগত রাত ১২টা পর্যন্ত বরিশালের ছয় জেলায় মোট ধারাবাহিকভাবে দুই হাজার ৫৩৮টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। পাশাপাশি এক হাজার ৭১টি বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে এবং মোট অভিযানের অনুকূলে এক হাজার ৭৫১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এছাড়া অভিযানে আটকদের কাছ থেকে এ পর্যন্ত ৪৪ লাখ ৫৬ হাজার সাতশ টাকা জরিমানা এবং এক হাজার ৪৪৭ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৮৯ লাখ ৬৯ হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল ও ১৯ মেট্রিক টন ইলিশ উদ্ধার করা হয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৭ সালে বরিশাল বিভাগে মোট দণ্ডপ্রাপ্ত জেলের সংখ্যা ছিলো ৫৩৩ জন, যা ২০১৮ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৯৬১ জনে। আর এ বছর জেলের কারাদণ্ডের সংখ্যা বেড়ে এক হাজার ৪৪৭ জনে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি ২০১৭ সালের থেকে ২০১৮ সালে ৩ লাখ ৮১ হাজার টাকা বেশি জরিমানা করা হয়।
যদিও এ বছর ২০১৮ সালের থেকে দ্বিগুণ জরিমানা আদায় করা হয়েছে। গতবছর যেখানে ২০ লাখ নয়শ টাকা জরিমানা করা হয়। সেখানে এ বছর ৪৪ লাখ ৫৬ হাজার সাতশ টাকা জরিমানা হয়েছে।
অপরদিকে জব্দের তালিকায় ২০১৭ সালের থেকে ২০১৮ সালে ২ মেট্রিকটন ইলিশ কম থাকলেও, এবছর ২০১৮ সাল অর্থাৎ গত বছরের থেকে এবছর তা বেড়ে দ্বিগুণের বেশি হয়েছে। গতবছর প্রায় ৮ মেট্রিক টন ইলিশ জব্দ করা হয় এবং এ বছর ১৯ মেট্রিক টন ইলিশ জব্দ করা হয়।
পাশাপাশি ২২ দিনের এ অভিযানে ২০১৭ সালের থেকে ২০১৮ সালে ১০ দশমিক ৬১ লাখ মিটার কম অবৈধ জাল জব্দ করা হয়। তবে এবছর গতবছর (২০১৮) এর থেকে তিনগুন বেশি জাল জব্দ করা হয়েছে। এ বছর জব্দ করা অবৈধ জালের পরিমান ছিলো ৮৯ দশমিক ৬৯ লাখ মিটার যার পরিমান গত বছর ছিলো ২৯ দশমিক ৭০ লাখ মিটার।
২০১৭ সালের তুলনায় ২০১৮ সালে ১৯২টি অভিযান কম হলেও ১৮টি ভ্রাম্যমাণ আদালত ও ২৩০ মামলা বেশি দায়ের করা হয়েছিলো। তবে, এবছর অভিযান, ভ্রাম্যমাণ আদালত ও মামলা সবকিছুই বিগত বছরগুলোর থেকে বেশি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য অধিদপ্তর বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আজিজুল হক।
তিনি বলেন, সবার সমন্বিত চেষ্টায় এবারে অভিযান সার্বিকভাবে বিগত বছরগুলোর থেকে ভালো হয়েছে। সমন্বিত চেষ্টা থাকলে যে ভালো কিছু সম্ভব তা প্রমাণিত হয়েছে। ২২ দিনের অভিযানের ফলাফলে যে টুকু বোঝা যাচ্ছে, তাতে বিগত সময়ের থেকে নদী ও সাগর নিষেধাজ্ঞার সময় প্রশাসনের সর্বস্তরে নজরদারি বেড়েছে। যার কারণ বিগত সময়ের থেকে অভিযান, জেলেদের আটক, জাল উদ্ধারের পরিমান বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, অভিযানকালীন বিভিন্ন স্থানে ঘুরে যেটুকু বোঝা গেছে, তাতে নদীতে ইলিশের আধিক্য রয়েছে। আর সকালে বাজারে গিয়ে তার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাজারে প্রচুর ইলিশ দেখা গেছে, পাশাপাশি এর আকারটাও বিগত বছরগুলোর থেকে ভালো ছিলো। তবে প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ শিকার বন্ধের পাশাপাশি জাটকা নিধন বন্ধ না করা গেলে ইলিশের পরিমাণ বাড়বে না। তাই ইলিশের পরিমান বাড়াতে হলে জাটকা নিধন বন্ধ করতেই হবে।
বাজারে ডিমওয়ালা ইলিশ পাওয়া গেলেও শঙ্কার কোন কারণ নেই বলে জানিয়েছেন মৎস কর্মকর্তারা। কারণ এই ২২ দিনে যে পরিমান ইলিশ ডিম ছেড়েছে তারপরে জাটকা সংরক্ষণ সঠিকভাবে করা গেলে দেশে ইলিশের ঘাটতি থাকবে না বলে দাবি তাদের।
বরিশাল জেলায় ৪৩ হাজার ৬৪৪ জন জেলেকে এবং বিভাগে ২ লাখ ২৭ হাজার ৯৪৩ জন জেলেকে নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে ২০ কেজি করে চাল সহায়তা পেয়েছেন।