মাদক মামলার বিচারে স্থবিরতা কাটাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠন না হওয়া পর্যন্ত এ আইন দায়েরকৃত মামলার বিচারকাজ নিম্ন আদালতে আগের নিয়মে চলবে বলে সম্প্রতি রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই ধারাবাহিকতায় মাদক মামলার বিচারে উচ্চ আদালতের সেই রায় অনুসরণ করতে অধস্তন আদালতসমূহের প্রতি নির্দেশনা জারি করেছে সুপ্রিম কোর্ট।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নির্দেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল মোঃ আলী আকবর স্বাক্ষরিত এ সার্কুলার সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে আজ বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) প্রকাশ করা হয়েছে। সার্কুলারের সাথে যুক্ত করা হয়েছে উচ্চ আদালতের দেওয়া সেই রায়ও।
সার্কুলারে বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ফৌজদারি বিবিধ মোকদ্দমায় গত ২০ অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এবং মোঃ মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ধারা ৪৪ অনুসারে ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা কিংবা গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে বিকল্প আদালতকে ক্ষমতা না দেওয়া অথবা ট্রাইব্যুনাল সংক্রান্ত আইনের বিধান সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর অধীনে দায়েরকৃত সকল মামলার বিচারিক কার্যক্রম ফৌজদারি কার্যবিধি ধারা ৫(২) অনুসরণে ঐ কার্যবিধির ২য় তপসিলে উল্লেখিত “অন্যান্য আইনসমূহের অধীনে অপরাধ (Offences against other laws)” বিধান অনুযায়ী পরিচালিত হবে’ বলে যে রায় দিয়েছেন তা যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশ প্রদান করা হলো।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে করা ‘মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন’ গত বছরের ডিসেম্বরে সংশোধন করা হয়। সংশোধিত মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ২০১৮ এর ৪৪(১) ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, প্রয়োজনীয় সংখ্যক মাদকদ্রব্য অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করতে পারবে। পাশাপাশি (৪) উপ-ধারায় বলা হয়েছে, এই ধারার অধীন ট্রাইব্যুনাল স্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত, সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, সংশ্লিষ্ট জেলার যে কোনো অতিরিক্ত জেলা জজ বা দায়রা জজকে তার নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব প্রদান করতে পারবে। কিন্তু সরকার এ পর্যন্ত কোনো ট্রাইব্যুনাল স্থাপন করেনি। অতিরিক্ত ট্রাইব্যুনালের দায়িত্বও দেওয়া হয়নি আদালতকে। ফলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলার বিচারে কার্যত কোনো আদালত না থাকায় এ জটিলতার সৃষ্টি হয়।
এমতাবস্থায় মাদক মামলার বিচারে স্থবিরতা কাটাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল গঠন না হওয়া পর্যন্ত এ আইন দায়েরকৃত মামলার বিচারকাজ নিম্ন আদালতে আগের নিয়মে চলবে বলে রায় দেন হাইকোর্ট।
রায়ে বলা হয়, “এটা বাস্তবতা যে, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হলেও ওই আইনের বিধান অর্থাৎ ৪৪ ধারা অনুযায়ী মাদক সংক্রান্ত অপরাধের বিচারের জন্য ট্রাইব্যুনাল স্থাপিত না হওয়া পর্যন্ত সরকারি গেজেট দ্বারা অতিরিক্ত জেলা বা দায়রা জজকে নিজ দয়িত্বের অতিরিক্ত ট্রাইব্যুনালের দায়িত্ব আজ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। নিম্ন আদালতগুলোতে মাদক সংক্রান্ত মামলার জামিন ও বিচারকাজ স্থবির হয়ে পড়েছে এবং বিভিন্ন আইনি জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মামলার বিচারিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে অছে। বিভিন্ন ফৌজদারি মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে আমাদের প্রতিনিয়ত এই সৃষ্ট অচলাবস্থা লক্ষ্য করতে হচ্ছে।”
রায়ে আরও বলা হয়েছে, “রূঢ় বাস্তবতা এটাই যে, মাদক নিয়ন্ত্রন আইনের ৪৪ ধারা অনুযায়ী কোনো ট্রাইব্যুনাল কিংবা বিকল্প হিসেবে গেজেটের মাধ্যমে অতিরিক্ত জেলা বা দায়রা জজকে ট্রাইব্যুনাল হিসেবে কাজ পরিচালনার পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বা আইন সংশোধনও করা হয়নি। সৃষ্ট এ পরিস্থিতি অনভিপ্রেত, দুঃখ ও হতাশাজনক। আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, বিচার কার্যক্রমে কোনো স্থবিরতা বা শূন্যতা থাকতে পারে না।”
সামগ্রিক বিবেচনার কথা উল্লেখ করে রায়ে বলা হয়েছে, যেহেতু মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন আইন ২০১৮’র ৪৪ ধারা এখনও কার্যকর হয়নি, তাই বিচার প্রক্রিয়া শূন্যতা পূরণে ফৌজদারি কার্যবিধির ৫(২) ধারা এক্ষেত্রে প্রয়োগযোগ্য এবং কার্যকারিতা পাবে।
আরও পড়ুন: ট্রাইব্যুনাল না হওয়া পর্যন্ত মাদক মামলার বিচার আগের নিয়মে