২০২০ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশের সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সব স্থাপনার নামফলক বা স্মৃতিফলক থেকে স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের নাম মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এসব জায়গা থেকে স্বাধীনতাবিরোধী আলবদর, রাজাকারদের নাম পরিবর্তন করার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে এসব প্রতিষ্ঠান ও রাস্তার নামকরণের জন্য আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন আদালত। হাইকোর্টের আদেশ বাস্তবায়ন করে এ সময়ের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে।
এ-সংক্রান্ত এক রিটের ওপর জারি করা রুলের শুনানি নিয়ে গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন ব্যারিস্টার এ কে রাশিদুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত দাসগুপ্ত।
স্বাধীনতাবিরোধীদের নামে স্থাপনা, সড়ক, অবকাঠামোর নামকরণ স্থগিত চেয়ে ২০১২ সালে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ১৪ মে রুলসহ খান-এ সবুর ও শাহ আজিজুর রহমানের নাম ব্যবহার স্থগিতের আদেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে এ বিষয়ে রুল জারি করেন আদালত। রুলে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের নামে থাকা সড়ক, স্থাপনা ও অবকাঠামোর নাম পরিবর্তনের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, পরিবর্তনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সেসবের নামকরণ কেন করা হবে না এবং যারা ওই নামকরণের জন্য দায়ী, তাদের কেন বিচারের আওতায় আনা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়।
পরে ওই সব স্থাপনার নাম পরিবর্তন করে প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সচিব ও খুলনার মেয়রকে এ নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। কিন্তু আদেশের পর দীর্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও কোনো স্থাপনা থেকে স্বাধীনতাবিরোধীদের নাম না সরানোর কারণে এ বিষয়ে পুনরায় শুনানি নিয়ে আদালত প্রশাসনকে শেষবারের মতো সময় বেঁধে দিলেন।
আদালতে স্বাধীনতাবিরোধী যে ২০ জনের তালিকা দেয়া হয়েছে তারা হলেন-মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আব্দুল আলিম, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ও জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির নেতা সৈয়দ কায়সার আলী, মৌলভীবাজারের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এন এম ইউসুফ আলী, সাইফুদ্দিন ইয়াহিয়া খান মজলিস, ফরিদপুরের আব্দুর রাজ্জাক মিয়া, মৌলবীবাজারের মাহতাব উল্লাহ, গাইবান্ধার আব্দুল আজিজ ও আব্দুল জব্বার, নোয়াখালীর তরিকুল্লাহ, ঝিনাইদহের মিয়া মনসুর আলী, কুমিল্লার রেজাউর রহমান, নাটোরের আব্দুর সাত্তার খান মধু মিয়া ও কাছির উদ্দিন, ঢাকা দক্ষিণের মো. তামিমুল এহসান ও মোহাম্মদ উল্লাহ, নেত্রকোনার আব্দুর রহমান, মেহেরপুরের মিয়া মনসুর আলী ও সাবদার আলী এবং ঝিনাইদহের সফি আহমেদ।