বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্য অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না। প্রায় ৩ বছর অপেক্ষার পরও ৬৭ হাজার শিক্ষানবীশ আইনজীবীকে এনরোলমেন্ট (আইনজীবী হিসাবে তালিকাভূক্তি) পরীক্ষা অংশগ্রহণের সুযোগ না করে দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে সুপ্রিম কোর্টের এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, ‘এটা দুঃখজনক, প্রায় ৬৭ হাজার শিক্ষানবীশ আইনজীবী ৩ বছর ধরে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু এ নিয়ে আমরা কোন পদক্ষেপ নিতে পারিনি, তাই এ দায় আমাদের।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের দক্ষিণ হলে বুধবার (৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের অনিয়মের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব প্রতিক্রিয়া জানান।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘আমি বার কাউন্সিলের ১২ বছর যাবৎ নির্বাচিত সদস্য। আমি নিজ দায়িত্বে কতগুলো সমস্যার সমাধান করতে না পেরে আপনাদের সামনে নিজের দায়বদ্ধতা স্বীকার করছি। সবচেয়ে যেটি দুঃখজনক প্রায় ৬৭ হাজার শিক্ষানবীশ আইনজীবী প্রায় ৩ বছর ধরে পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু এ নিয়ে আমরা কোন পদক্ষেপ নিতে পারিনি, তাই এ দায় আমাদের।
তিনি বলেন, পরীক্ষা না হওয়ার জন্য আমরা এনরোলমেন্ট কমিটির ওপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছি। অথচ আমরা অনেক চিন্তা ভাবনা করে মেধাবী ও যোগ্যদের আইনজীবী করার জন্য এনরোলমেন্ট কমিটি করি। ২০০৪ সাল থেকে এই কমিটি কাজ করে যাচ্ছে। এই এনরোলমেন্ট কমিটির একটি অ্যাকাউন্ট আছে। এখানে যদি রেজিস্ট্রেশনের টাকা জমা হয় তাহলে এ কমিটি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। কিন্তু এসব পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওভারটাইম কাজ করেছে তাদের সে টাকাও পরিশোধ করা হয়নি। পরীক্ষায় রেজিস্ট্রেশনের সব টাকা বার কাউন্সিলের ফান্ডে যায়, কিন্তু এনরোলমেন্ট কমিটি চাইলে তা ভেরিফাই করে আমাদের টাকা দেয়া হয়।
তাই পেশা ও শিক্ষার মান নির্ধারণের জন্য রেজিস্ট্রেশনের সব টাকা এনরোলমেন্টের অ্যাকাউন্টে টাকা স্থানান্তর করার দাবি জানান বার কাউন্সিলের নির্বাচিত এ সদস্য। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চারবারের নির্বাচিত এ সদস্য আরও বলেন, বার কাউন্সিলের পরীক্ষার সময় আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়কে বাতিল করি, কিন্তু পূর্বে থেকে নিষিদ্ধ করে কেন নোটিশ দেইনা? এসব দায়িত্ব পালনে আমরা ব্যার্থ হয়েছি। এখানে পরিবর্তন আনা দরকার। আমার সুপারিশ হলো, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ, প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় আছে, সেগুলোর ক্ষেত্রে মেধাভিত্তিক মাপকাঠি আছে। আইনজীবী হওয়ার ক্ষেত্রে তেমন একটি মাপকাঠির এখন প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
‘আমি নির্বাচিত সদস্য হওয়ায় আইনজীবীদের কাছে আমার জবাবদীহীতা রয়েছে। কিন্তু আমি পারছিনা, আমি অপারগ না, আমি ব্যার্থ।’
এর আগে এক বিচারপতির ছেলেকে সরাসরি হাইকোর্টের আইনজীবী করে গেজেট দেওয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। কিন্তু হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ রিটটি শুনতে অপরাগতা প্রকাশ করেন। সে অপরাগতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘কোন আইনে তারা অপরাগতা প্রকাশ করেছেন? বিচারপতি হওয়ার সময় শপথ নিয়েছেন যে তারা কখনো কারো ওপর অনুরাগ-বিরাগ, আবেগের বশবর্তী হতে পারবেনা। তবুও তারা সেটা করলে তো শপথ ভঙ্গ হবে। বিচারপ্রার্থী যেই হোক তাকে বিচার দিতে হবে।’