দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ এবং সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস

ব্যারিস্টার তাপসের জিজ্ঞাসা নিয়ে ক্ষুব্ধ দুদক চেয়ারম্যান

বেসিক ব্যাংকে জালিয়াতির মামলা প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের ক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন করলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। তদন্তে বাচ্চুর নাম আসা না–আসা প্রসঙ্গে তাপস কথা বলতে পারেন না বলে মনে করিয়ে দেন দুদক চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, কে কী বলল, এটা তাঁদের বিবেচ্য বিষয় নয়।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যালয়ে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে রোববার (৮ ডিসেম্বর) ইকবাল মাহমুদ এসব কথা বলেন। দুদক বিটে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশন (র‍্যাক) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

উল্লেখ্য, বেসিক ব্যাংকে জালিয়াতির মামলা প্রসঙ্গে সাংসদ ফজলে নূর তাপস গত ১৪ অক্টোবর ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। বেসিককাণ্ডে দায়ের হওয়া ৫৬টি মামলার কোনোটিতেই ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আব্দুল হাই বাচ্চুর নাম না আসায় দুদকের ‘ব্যর্থতায়’ গত সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ফজলে নূর তাপস।

সাংবাদিকদের প্রশ্নে ওইদিন তিনি বলেন, “দুদক চেয়ারম্যান যদি বলে থাকেন বা বলতে চান বা মনে করেন, তিনি কোনো প্রভাবের কারণে এ ব্যবস্থা নেননি, তাহলে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। সে কারণে তার অবশ্যই পদ থেকে সরে যাওয়া উচিৎ।

রিস্টার তাপস বলেন, “আর যদি উনি মনে করেন যে, তিনি কোনো প্রভাব দ্বারা বা কারও কথায় প্রভাবিত হবেন না, তাহলে অবশ্যই জাতি মনে করে, আমরা মনে করি, শেখ আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে মামলা করা হোক, তাকে গ্রেপ্তার করা হোক, জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।”

এ–সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে দুদকপ্রধান বলেন, ‘আপনি (ফজলে নূর তাপস) বাচ্চুর নাম কেমনে বলছেন, আপনি কে? আপনি কি ইনভেস্টিগেশন করছেন? কে কী বলছে, দ্যাট ইজ নট আওয়ার কনসার্ন। এটা একটা পাবলিক ইনস্টিটিউশন। আপনি আমার পদত্যাগ চাইতে পারেন, অনেক কিছুই চাইতে পারেন, সেটা সমস্যা না।’

চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘কিন্তু আপনি কে যে প্রশ্ন করছেন বাচ্চুর নাম আসছে কি বাচ্চুর নাম আসেনি? এটা তো আন্ডার ইনভেস্টিগেশন। বাচ্চুর নাম আসবে না, আপনি জানেন ক্যামনে? হু আর ইউ? ইনভেস্টিগেশন করার ম্যান্ডেট তো আমাদের, ম্যান্ডেট তো আপনার না। আপনি রিক্রিয়েট করলে তো হবে না—বাচ্চুর নাম দেন বা দিয়েন না।’

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘ইনভেস্টিগেশন শেষ হলে যখন চার্জশিট যাবে, তখন আপনি বলতে পারেন…এটাকে নারাজি দেওয়া যায়, আরও প্রসেস আছে। আমরা যদি ভুল করি, সরকার, ব্যাংক তখন নারাজি দিতে পারবে। কিন্তু আমার মনে হয় না এই ক্ষেত্রে আমরা কোনো ভুল করব। এটা জনগণ বিশেষভাবে জানে, তাই আমরা বিশেষভাবে কেয়ারফুল। যখন আমরা রিপোর্ট দেব, এত সহজে এটা নিয়ে আপনাদেরকে প্রশ্ন করার সুযোগ দেব না।’

এছাড়া বেসিক ব্যাংকের জালিয়াতির ঘটনায় করা ৫৬ মামলার তদন্ত কবে শেষ হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমাদের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন এসেছিল। কিন্তু সেখানে টাকা কোথায় পাচার হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য না থাকায় আমরা এগোতে পারিনি। তবে তদন্ত চলছে। পারস্পরিক আইনগত সহায়তা প্রস্তাব বা এমএলএআরের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে তথ্য চাওয়া হয়েছে। টাকা কোথায় গেছে, তা খুঁজে দেখা হচ্ছে। বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতির কিছু টাকা মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ সেসব দেশে গেছে, দুদক সেখানে এমএলএআর পাঠিয়েছে। সেখান থেকে তথ্য পাওয়া গেলে মামলাগুলোর চার্জশিট দেওয়া হবে।’

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, দুদক যাদের নিয়ে কাজ শুরু করেছে, আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া তাদের বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। সুতরাং অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আনন্দে থাকার কোনো সুযোগ নেই। যিনিই দুর্নীতি করুন না কেন, তাঁকে দুদকের বারান্দায় আসতেই হবে।

দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল মাহমুদ আরও বলেন, অনেকেই বলছেন এ অভিযান বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু দুদক কাজ করছে। এরই মধ্যে ১৮৭ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে।

দুদকের মামলায় শতভাগ শাস্তি হওয়া উচিত মন্তব্য করে চেয়ারম্যান বলেন, ‘পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৩০-৪০ ভাগ মামলায় শাস্তি হচ্ছে না, অর্থাৎ আমাদের দুর্বলতা আছে। হয় ইনভেস্টিগেশনে, না হয় প্রসিকিউশনে অথবা কোথাও কোনো মিসিং লিংক আছে। সেটি আমরা পাচ্ছি না। কিন্তু থিওরিটিক্যালি দুর্নীতির প্রতিটি মামলায় শাস্তি হওয়া উচিত।’

মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন র‍্যাকের সাধারণ সম্পাদক আদিত্য আরাফাত। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দুদকের সচিব মোহাম্মদ দিলোয়ার বখত, মহাপরিচালক মফিজুর রহমান ভূঁইয়া ও এ কে এম সোহেল।