পথশিশুদের পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের প্রতি নির্দেশনা জারি করতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী।
আজ রোববার (১৫ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি দায়ের করেন অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান লিঙ্কন।
রিটে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়য়ের সচিব এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়য়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিটের বিষয়টি নিশ্চিত করে অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে জানান, সুপ্রিম কোর্টের অবকাশ শেষে রিট আবেদনটি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হবে।
এর আগে, গত বুধবার (৪ ডিসেম্বর) পথশিশুদের পুনর্বাসনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের লিগ্যাল নোটিশ পাঠান রিটকারী আইনজীবী।
নোটিশে বলা হয়, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পথশিশুদের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বিশেষত, রাজধানী ঢাকা শহর বেশি সমস্যার সম্মুখীন কারণ এরা কর্মসংস্থানের খোঁজে এবং অভ্যন্তরীণ অভিবাসনের দরুন এ শহরে আসছে। ফলে পথশিশুদের সঠিক সংখ্যা গণনা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) এর এক জরিপে বলা হয়, ২০১৫ সালে ঢাকায় এদের সংখ্যা ছিল ১৫ লাখ যা ২০২৪ সাল নাগাদ ১৫ লক্ষ ৬০ হাজারে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ সংবিধানের ১৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জনগণের মৌলিক অধিকার বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। এছাড়াও ২৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সরকার সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর (মহিলা, শিশু) উন্নয়ন ও অধিকার নিশ্চিতকরণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সচেষ্ট থাকবে এ মর্মে আলোকপাত করা হয়েছে।
এছাড়া সমাজে পথশিশুরা নিগৃহীত, বৈষম্যমূলক আচরণের শিকার এবং তাদের বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী হিসেবে আখ্যা দেয়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত যা তাদের অধিকার খর্ব করে। যেহেতু বাংলাদেশ সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদে সকলের সমতা বিধানের বিষয়টি লিপিবদ্ধ এবং সবার সমান অধিকার ভোগের সুযোগ রয়েছে সুতরাং পথশিশুরাও এর ব্যতিক্রম নয়।
যদিও দেশের অনেক গবেষক পথশিশুদের নিয়ে গবেষণা করছেন এবং কিছু বেসরকারি সংস্থারাও কাজ করে চলেছে তবে তা অপ্রতুল। ফলপ্রসূ উদ্যোগ এবং সদিচ্ছার অভাবে পথশিশুদের নিয়তি আলোর মুখ দেখে না। সুতরাং এদের পুনর্বাসন এবং টেকসই উন্নয়নকল্পে সরকারসহ বিভিন্ন সংস্থার দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া বাঞ্ছনীয়।
এছাড়াও দেশে পথশিশুরা অনিশ্চিত জীবনযাত্রা, দৈহিক অপব্যবহার, শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার মত মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত, এমনকি নিজ গোষ্ঠী তথা আইনশৃংখলা বাহিনীর লোকজনের মাধ্যমেও বিবিধ বঞ্চনার শিকার হয়ে থাকে। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক কনভেনশন “ইউএনসিআরসি” প্রত্যেক শিশুর মৌলিক অধিকার সুরক্ষা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে আলোকপাত করেছে, বাংলাদেশ যার সদস্য রাষ্ট্র (Ratified State)।
নোটিশে উল্লেখিত সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় আজ হাইকোর্টে রিট করেন আইনজীবী মনিরুজ্জামান লিঙ্কন।