অ্যাডভোকেট মোঃ আহসান তারিক। দীর্ঘ ৩৪ বছর আইন পেশায় নিয়োজিত। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক। আসন্ন ঢাকা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের (সাদা প্যানেল) পক্ষে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে বিজয়ী হলে সমিতি ও আইনজীবীদের কল্যাণে তাঁর পরিকল্পনাসমূহ জানার চেষ্টা করেছে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম। একান্ত সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে এশিয়ার বৃহত্তম আইনজীবী সমিতি খ্যাত ঢাকা আইনজীবী সমিতির নানান উন্নয়ন বঞ্চিত বিষয়। ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকম সম্পাদক অ্যাডভোকেট বদরুল হাসান কচির নেওয়া সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন, জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
আহসান তারিক: প্রথমেই আমাকে মনোনীত করার জন্য মনোনয়ন বোর্ডকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। পেশাগত জীবনে দীর্ঘ ৩৪ বছর আইনজীবীদের যে সেবা করেছি আশাকরি উনারা তা মনে রেখেছেন। আর সেই বিশ্বাস থেকেই আমিসহ আমাদের পূর্ণাঙ্গ প্যানলের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: নির্বাচিত হলে সমিতি ও আইনজীবীদের কল্যাণে আপনার পরিকল্পনা কি?
আহসান তারিক: সমিতি ও আইনজীবীদের কণ্যানে বেশকিছু পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে জীবদ্দশায় ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্যরা বেনাভোলেন্ট ফান্ড ভোগ করতে পারছেন তবে আমার লক্ষ্য আইনজীবীদের বেনাভোলেন্ট ফান্ড (কল্যাণ তহবিল) বৃদ্ধি করা। এছাড়া আইনজীবী হিসেবে বিচারকার্যে সহায়তা করতে গিয়ে দেখেছি সিআর মামলা থেকেই মূলত এআই অ্যাক্টের মামলার উৎপত্তি। চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট (সিএমএম) অথবা জুডিশিয়াল কোর্ট থেকে এসব মামলা যখন জজ কোর্টে স্থানান্তর করা হয় তখন সংশ্লিষ্ট মামলা সমূহের তারিখ ও নাম্বারসহ মামলা সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা খুবই দুরূহ। আইনজীবীরা আমার ওপর আস্থা রেখে বিজয়ী করলে ইনশাল্লাহ এই জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রিতা হ্রাস করব। ঢাকা বারে চালু হওয়া ডিজিটাল ওকালতনামা কার্যক্রমকে আরও অর্থবহ করার জন্য কাজ করব। ঢাকা আইনজীবী সমিতি অনেক বড়, এখানে প্রতিবছর নবীন আইনজীবীরা যুক্ত হচ্ছেন। সমিতির সদস্য সংখ্যা যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই হারে আইনজীবীদের বসার জায়গা বাড়ছে না। ঢাকা জজ কোর্টের সামনেই একটি নিলাম ঘর রয়েছে, নির্বাচিত হলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে সেটি সমিতির অনুকূলে ক্রয় করে মাল্টিকমপ্লেক্স বিল্ডিং নির্মাণের মাধ্যমে আইনজীবীদের বসার ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া জজ কোর্ট থেকে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট যাওয়ার জন্য আইনজীবীদের প্রাণের দাবী হচ্ছে একটি গ্যাংওয়ে। আমি নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গ্যাংওয়ে করার উদ্যোগ গ্রহণ করব।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: ঢাকার আদালতপাড়ায় প্রতিদিন অগণিত বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের সমাগম হয়, কিন্তু আদালত অঙ্গনে প্রবেশের ক্ষেত্রে কোন ওভারব্রিজ না থাকায় ব্যস্ত এই সড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তাপারে ভোগান্তি ও যানজটের সৃষ্টি হয়, এ বিষয়ে আপনার ভাবনা কি?
আহসান তারিক: খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন করেছেন। আইনজীবীরা বরাবরই জজ কোর্ট থেকে ন্যাশনাল হাসপাতাল পর্যন্ত একটি ওভারব্রিজ দাবী করে আসছেন অনেকদিন ধরেই। এ বিষয়েও আমার পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচিত হলে অতিগুরুত্বপূর্ণ এই কাজটি করতে সচেষ্ট থাকব।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: আদালত অঙ্গনের লিফটগুলোর অবস্থাও নাজুক, বিগত বছরে লিফট দুর্ঘটনাও ঘটছে, এ বিষয়ে সমিতির করণীয় কিছু আছে কি-না?
আহসান তারিক: আদালত ভবন নির্মাণে পরিকল্পনার অভাব ছিল। এতো বড় সিএমএম কোর্টে বিকল্প সিঁড়ি নেই, একটি মাত্র লিফট! যেখানে অন্তত আরও দুইটি লিফট প্রয়োজন। অন্যান্য আদালত ভবনেও পর্যাপ্ত লিফট নেই। যেগুলো আছে সেগুলোর সার্ভিস নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে। তবে সত্যি কথা হচ্ছে আদালত ভবনের সমস্যা সমাধানের এখতিয়ার সমিতির নেই। তবে সমিতির পক্ষ থেকে আওয়াজ তুললে এসব দাবী আদায় করা সম্ভব বলে মনে করি। নির্বাচিত হলে এ বিষয়টিও কল্যাণকর পরিকলনায় অন্তর্ভুক্ত হবে।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে প্রচুর হকার রয়েছে, যা নিয়ে নানান সময় আইনজীবী মহল থেকে অভিযোগ-অনুযোগের অন্ত নেই, এ বিষয়ে আপনার পরিকল্পনা কি?
আহসান তারিক: দেখুন হকারও তো মানুষ, হঠাৎ উচ্ছেদে উপার্জনের একমাত্র রাস্তাই বন্ধ হয়ে যাবে। পরিবার না খেয়ে থাকবে। মানবিক বিষয় জড়িত। তবু নির্বাচিত হলে ঢাকা আইনজীবী সমিতির সকল আইনজীবীর মতামত নিয়ে হকারমুক্ত আদালত প্রাঙ্গণ করতে না পারলেও অন্তত যেন দুপুর একটার পর থেকে হকার বসার নিয়ম করা যায় সে ব্যবস্থা করব।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: ঢাকা আইনজীবী সমিতিকে ঘিরে আপনার কোন স্বপ্ন আছে কি-না, নির্বাচিত হলে যেটি বাস্তবায়ন সম্ভব?
আহসান তারিক: স্বপ্ন তো অবশ্যই আছে। আল্লাহ্ সহায় হলে, ভোটাররা যদি তাদের মূল্যবান ভোট দিয়ে সম্মানিত করেন আমি ঢাকা বারে একটি ট্রাস্ট গঠন করতে চাই। যাতে করে আইনজীবী ও তাদের পরিবার প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তার জন্য কারো দ্বারে দ্বারে যেতে না হয়। এছাড়া আদালত অঙ্গনে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এবং আইনজীবী ব্যতীত বহিরাগত গাড়ি পার্কিং বন্ধে সমিতির নিজস্ব স্টিকার পদ্ধতি চালু করার পরিকল্পনা আছে। ধরুন একশ গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা রয়েছে এক্ষেত্রে যাদের গাড়ি আছে তারা সমিতি থেকে স্টিকার নেবেন এবং নাম্বার অনুযায়ী পার্কিং বরাদ্দ থাকবে। এক নম্বর স্টিকার সংবলিত গাড়ি এক নাম্বার পার্কিংয়ে, দুই নাম্বার স্টিকার সংবলিত গাড়ি দুই নম্বর পার্কিংয়ে এভাবে ক্রমিক পদ্ধতিতে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা আছে। এতে করে আইনজীবী ও বহিরাগত গাড়ি যেমন আলাদা করা যাবে তেমনি আদালত অঙ্গনে অযাচিত যানজট কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে বলে মনে করি।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: গাড়ি ও পার্কিংয়ের বিষয়টি যখন উঠল সে সম্পর্কিত একটি প্রশ্ন চলেই আসে, আইনজীবীদের পরিবহণ সমস্যা নিরসনে আপনার কোন পরিকল্পনা আছে কি?
আহসান তারিক: হ্যাঁ, আইনজীবীদের পরিবহণ সমস্যা আছে এবং এই দাবী যৌক্তিক মনে করি। আদালত যে স্থানে অবস্থিত সেখান থেকে ঢাকার বিভিন্ন রুটের গাড়ি থাকলেও পর্যাপ্ত নয়। কারণ আদালত পাড়ার আশেপাশে ব্যবসাবাণিজ্য ও নৌবন্দর থাকায় ঢাকার এ প্রান্ত ব্যস্ততম রুটে পরিণত হয়েছে ফলে আইনজীবীদের যাতায়াতে সমস্যা দৃশ্যমান। আইনজীবীরা চাইলে গাড়ির ব্যবস্থা অবশ্যই করা সম্ভব সেক্ষেত্রে আইনজীবীদের সহযোগিতা কাম্য। উনারা যদি একমাসের ভাড়া অগ্রিম পরিশোধ করতে রাজি থাকেন তবে গাড়ির ব্যবস্থা করা সহজতর হয়।
ল’ইয়ার্স ক্লাব: সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আহসান তারিক: আপনাকেও ধন্যাবাদ। একইসঙ্গে ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের অগণিত পাঠকদের জন্য শুভ কামনা।