মহান মুক্তিযুদ্ধের ওপর উপজীব্য করে লেখা একজন বিচারপতির বই অত্যন্ত গৌরবের বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বর্তমান এবং আগামী প্রজন্ম এ গ্রন্থ থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও তাদের দোসরদের নির্যাতন এবং বর্বরতার ভয়াহত চিত্র সম্পর্কে জানতে পারবে।’
সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের লেখা ‘অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্র: বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এমন কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট জাজেস কর্নারে এ অনুষ্ঠান হয়।
বইটির লেখক বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সম্পর্কে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তিনি মুক্তিযুদ্ধকে প্রত্যক্ষ করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারক হিসেবে একাত্তরের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আপনজনদের নিকট থেকে স্বজন হারানো বেদনাবিধুর ও লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড এবং অপহরণের ঘটনা সম্যক অবহিত হন। যা তার গ্রন্থ রচনায় উৎসারিত ও অনুপ্রাণিত করেছে। তার ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্র পরিস্ফুটিত হয়েছে। এটা যেকোনো পাঠকের হৃদয়কে স্পর্শ করবে।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বর্তমান এবং আগামী প্রজন্ম এ গ্রন্থ থেকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী, রাজাকার, আলবদর ও তাদের দোসরদের নির্যাতন এবং বর্বরতার ভয়াহত চিত্র সম্পর্কে জানতে পারবে।’
শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিচারের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘শহীদ বুদ্দিজীবী হত্যাকাণ্ডের বিচারের সাথে আমিও একজন বিচারক ছিলাম আপিল বিভাগে। গতকাল রাতে যখন বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের এ বইটি পড়ি সেখানে দেখলাম তিনি অনেক এভিডেন্স কোট করেছেন সংক্ষিপ্তভাবে। আমরা আদালতে প্রত্যেক এভিডেন্স টপ টু বটম পড়েছি। বইয়ে আমার আবার স্মৃতিচারণের মতো মনে হলো যে-আবার সব কিছু দৃশ্যপটে ভেসে উঠছে।’
সৈয়দ মাহমুদ হোসেন আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের ওপর একজন বিচারপতির লেখা বই, এটা আমাদের জন্য একটা গৌরবের।’
হাইকোর্টে বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ইমান আলী, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্ট্রি মফিদুল হক, অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম, শহীদ সিরাজউদ্দিনের সন্তান তৌহিদ রেজা নূর প্রমুখ। এ সময় অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুভূতি প্রকাশে ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘আইনের বই ছাড়া জজ সাহেবরা খুব একটা লেখেন না। আচরণগত বাধ্যবাধকতার জন্যই তেমন কিছু লেখা হয় না। যা কিছু লেখা হয় তা হলো ভ্রমনকাহিনী। আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ছিলেন। আর আমার কর্মসূত্রে মুক্তিযুদ্ধের অনেক নির্মমতার কথা শুনেছি। এসব বিষয়কে আমার বইয়ে অন্তর্ভূক্ত করেছি।’
বইটি প্রকাশ করেছে মাওলা ব্রাদার্স। প্রচ্ছদ করেছেন ধ্রুব এষ। বইটি বিক্রয় মূল্য ২৫০ টাকা।